তুরস্ক-পাকিস্তান : বাণিজ্যের বাইরের সম্পর্ক

জাফর হাসনাইন’র লেখা

তুরস্ক-পাকিস্তান : বাণিজ্যের বাইরের সম্পর্ক

জাফর হাসনাইন, একজন তুর্কি উপস্থাপক। সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে শো করে দ্যা ব্রিফ’এ। তুরস্কের প্রভাবশালী দৈনিক ডেইলি সাবা’তে গতকাল ৮ জানুয়ারি লিখেছেন তুরস্ক-পাকিস্তানের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক  নিয়ে। লেখাটিতে উঠে এসেছে বিশ্বব্যাপী ইসলামফোবিয়া ও জেনোফোবিয়া দূরীকরণে দু’দেশের ভূমিকা। লেখাটি জবান’র পাঠকদের জন্য অনুবাদ করা হয়েছে।


মহান নেতা মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক এবং মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সময় থেকেই পাকিস্তান এবং তুরস্কের মধ্যে সুসম্পর্ক বিদ্যমান। অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিক বন্ধনের ক্ষেত্রগুলোতে ভাতৃপ্রতিম এই দু’দেশের সম্পর্ক সর্বদা উন্নত হয়েছে। এটা স্পস্ট যে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগানের আমন্ত্রণে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর তুরস্ক সফর এই সম্পর্ককে আরও উন্নত করবে। বিগত ২০ বছর ধরে, পারস্পরিক ব্যবসায়িক কার্যক্রমের ঘোষণার সাথে বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্য ধীরে ধীরে  বৃদ্ধি পেয়েছে, দু’দেশ অবশ্যই তাদের এই কঠোর পরিশ্রম ও সংগ্রামের ফল পাবে।

ঐতিহ্যবাহী ভূমিকা পালন ছাড়াও এই দেশ দু’টি বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতির দিকে দৃষ্টি দিয়ে থাকে। জেনোফোবিয়া, ইসলামোফোবিয়া এবং জাতিসংঘের নিরপত্তা সংস্খার কর্তৃত্ববাদী আচরণের মতো সমস্যা দূর করতে তুরস্ক এবং পাকিস্তান একটি কেন্দ্রস্থিত ভূমিকা পালন করতে পারে।

প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান বহুবার এই বিষয়গুলো মুসলিম বিশ্বের জন্য ক্ষতিকর বলে উল্লেখ করেছেন। জার্মানির কলোগনেতে একটি মসজিদ উদ্ধোধনকালে তিনি বলেন, “ ইসলামফোবিয়া, জেনোফোবিয়া এবং বর্ণবাদ হলো ব্যধি যা আমাদের শুধু বর্তমান নয় ভবিষ্যতের জন্যও হুমকিস্বরূপ। আমাদের এই প্রবণতাগুলোর বিরুদ্ধে সৈন্যদলে যোগ দেয়া উচিত, যে প্রবণতাগুলো আমাদের সামাজিক শান্তিকে ক্রমে ক্ষয় করে এবং সাংস্কৃতিক সহাবস্থানকে দুর্বল করে দেয়।

এই বিষয়গুলো বিবেচনায় নিলে এটি বোঝা যায় যে, এই সমস্যাগুলো দূরীকরণে পাকিস্তানও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। দেশটি সম্প্রতি নেদারল্যান্ডে প্রকাশিত একটি ব্লাসফেমাস কার্টুনের বিরুদ্ধে শক্তিশালী অবস্থান নিয়েছিল এবং পাকিস্তান সরকারের প্রবল চাপে পরবর্তীতে কার্টুনটির প্রকাশনা তুলে নেয়া হয়। তুরস্কও এই ধরনের অবস্থানকে সমর্থন করে তা সে যেখানেই হোক না কেন।

মুসলিম বিশ্বের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয়তা হলো মুসলিমদের বিরুদ্ধে এই ধরনের শাসানি বা মানসিকতা শেষ করা, তা যেখানেই থাকুক না কেন— ইরোপে, মিয়ানমারে কিংবা কাশ্মিরে।  সন্দেহ নেই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিন্ত বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের সঠিক চিত্র তুলে ধরার জন্য পদক্ষেপ নেয়া দরকার।

 

মুসলিম বিশ্বের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয়তা হলো মুসলিমদের বিরুদ্ধে এই ধরনের শাসানি বা মানসিকতা শেষ করা, তা যেখানেই থাকুক না কেন— ইরোপে, মিয়ানমারে কিংবা কাশ্মিরে।  সন্দেহ নেই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিন্ত বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের সঠিক চিত্র তুলে ধরার জন্য পদক্ষেপ নেয়া দরকার।

সাম্প্রতিক রিপোর্টগুলোতে দেখা গেছে, ইসলামোফোবিয়া এবং জেনোফোবিয়া বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সরকার এই সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নিচ্ছেনা। তুরস্ক এবং পাকিস্তানের অনন্য সুসম্পর্ক সংজ্ঞায়নের জন্য উভয় দেশই নীপিড়িতদের জন্য আরও সুযোগ তৈরির জন্য শক্তিশালী অবস্থান নিতে পারে যা তারা ডিজার্ভ করে।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা সংস্থার সংস্কারের আহ্বানের জন্য প্রেসিডেন্ট এরদোগানের প্রশংসা পাওয়া উচিত। তিনি বলেছেন, “পৃথিবী পাঁচের চেয়েও বড়”। যাইহোক, আসল প্রশ্ন এখন প্রকাশ করা প্রয়োজন যা হল, “কত দিন মুসলিম বিশ্ব সিদ্ধান্তগ্রহণকারী দেশগুলোর চাহিদার কাছে মাথা নত করে থাকবে। পাকিস্তান তুরস্কের জাতিসংঘ সংস্কারের আহ্বানকে সমর্থন করে কিন্তু কিন্তু এই বিষয়টি অর্জন করতে আরও বড় ধরনের সহযোগিতা দরকার।

যদি মুসলিম বিশ্ব বিশ্বক্ষমতাকে মোকাবেলা করতে একত্রিত হয় যারা মূলত পৃথিবীর হাজার হাজার মাইলব্যাপী দুঃখদুর্দশার প্রতি কোনরূপ আগ্রহ দেখায় না, তাহলে পৃথিবী ইয়েমেনের শিশুদের জন্য, সিরিয়ার নিষ্পাপদের জন্য এবং ফিলিস্তিনের নীপিড়িতদের জন্য বসবাসের অধিকতর উপযোগী স্থানে পরিণত হবে।

জাফর হাসনাইন

FETO উদ্বেগ

এই বিষগুলোর বাইরে ‘ক্রমবর্ধমান সন্ত্রাসবাদ’কেও সামনে আনতে হবে। FETO, পাকিস্তান সরকার যাদের সম্প্রতি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। যারা কিনা ২০১৬ সালের তুরস্কের ব্যর্থ অভ্যূত্থানের সময় ২৫০ জন নিষ্পাপ তুর্কি নাগরিকের মৃত্যুর জন্য দায়ী ছিলো, এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই এখনও বিদ্যমান। এই সমস্যা নির্মূলে বিশ্বব্যাপী সহযোগিতা দরকার, সেটা হলে আমরা সেই সময়ের খুব দূরে নেই যেখানে এই মানসিকতা পুরোপুরি দূর হয়ে গেছে এবং অভ্যূত্থানকারীরা তাদের ক্ষমার অযোগ্য অপরাধের জন্য শাস্তি পেয়েছে।

একই মতাদর্শ, জনগণের সফলতা প্রচার এভং সমাজের কল্যানের জন্য একই উদ্দেশ্য থাকায় এই দুটি দেশকে সর্বদা অগ্রাধিকার দেয়া হয়। এই ধারণা প্রকাশ করে যে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের তুরস্ক ভ্রমণ অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে বহু দরজা খুলে দিয়েছে কিন্তু এই শিরোনাম ‘বাণিজ্যের বাইরের সম্পর্ক’র বিষয়টিও নির্দেশ করে।