চমকে যাওয়ার কোনও কারণ নেই। আসলে জয়া আহসান তার আগামী চলচ্চিত্রে মানসিক রোগী চরিত্রে অভিনয় করছেন।
নতুন ছবি মুক্তির আগে বাণিজ্যিক স্বার্থে প্রায় সব অভিনেতা, অভিনেত্রী বলে থাকেন, “এই চরিত্র নিয়ে আমি প্রচুর এক্সপেরিমেন্ট করেছি, ভীষণ খেটেছি। এই ছবিতে অনেক শেডস রয়েছে। ছবিটি দেখুন, অবশ্যই ভালো লাগবে।” এ যেন বাঁধাধরা বুলি! সাংবাদিকতায় যারা যুক্ত এবং ট্রেলার লঞ্চ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন, তারা অভ্যস্ত এই বুলি শুনতে। জয়া আহসান তার আসন্ন চলচ্চিত্র প্রসঙ্গে একই কথা বললেন। বিশ্বাস করুন, দায়িত্ব নিয়ে বলছি, ট্রেলার দেখার পর জয়ার দাবি আপনি মেনে নিতে বাধ্য হবেন। ৬ জানুয়ারি, রবিবার বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে রিলিজ করল ‘বৃষ্টি তোমাকে দিলাম’ ট্রেলার। নামভূমিকায় অভিনয় করেছেন দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান।
টলিউড জগতে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে স্বতঃস্ফূর্ত অভিনয়ের জন্য বাহবা কুড়িয়েছেন অভিনেত্রী। উল্লেখ করতেই হয় ‘আবর্ত’, ‘রাজকাহিনী’, ‘এক যে ছিল রাজা’, ‘বিসর্জন’, ‘বিজয়া’, ‘ক্রিসক্রস’ ইত্যাদি। তবে জয়া-অনুরাগীদের অনুযোগ ছিল, অধিকাংশ ছবিতে সাধারণ গৃহবধূ চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। সেই স্টিরিওটাইপ ইমেজ ভাঙতে এবার তৎপর জয়া। ‘বৃষ্টি তোমাকে দিলাম’ একটি সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার। এই ছবিতে বৃষ্টি ‘স্প্লিট পার্সোনালিটি ডিজর্ডার’ নামে মানসিক রোগে আক্রান্ত। এই মনোরোগ থেকে মুক্তি পেতে তিনি মনোচিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। সাইকায়াট্রিস্ট চরিত্রে অভিনয় করেছেন স্বনামধন্য অভিনেতা চিরঞ্জিত চক্রবর্তী। মনোচিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বৃষ্টি বেড়াতে গিয়ে একটি খুনের ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে। দুর্বিপাক যেন তার পিছু ছাড়ে না। পাকেচক্রে বৃষ্টি এতটাই জড়িয়ে পড়ে যে তাকে থানা থেকে আদালত পর্যন্ত যেতে হয়। বৃষ্টি কি সত্যিই যুক্ত আছে হত্যাকাণ্ডে? প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ মদত আছে কি? জানতে হলে অপেক্ষা করতে হবে ছবিটি রিলিজ হওয়া পর্যন্ত। ১ মিনিট ২৬ সেকেন্ডের ট্রেলার সেই কৌতূহল জিইয়ে রাখতে সক্ষম। এই ছবি যে ভালো ব্যবসা করতে পারে, মনে করছেন বহু চলচ্চিত্র বিশেষজ্ঞ। চলতি বছরের ২৬ জুলাই রিলিজ করার কথা এই ছবিটির।
‘বৃষ্টি তোমাকে দিলাম’ চলচ্চিত্রের হাত ধরে টলিউডে আত্মপ্রকাশ করছেন আনকোরা পরিচালক অর্ণব পাল। ডেবিউট্যান্ট ফিল্ম, তবে এমন জটিল বিষয় তিনি বেছে নিলেন কেন? রোমান্স, কমেডি ইত্যাদি মশালাদার ছবি বানাতে পারতেন তো দিব্যি! হোয়াইট ক্যাপ মাথায় নিয়েই সেফ খেলছেন না কেন? অর্ণব রিস্ক নেওয়ার কারণ জানালেন, ‘‘গল্পটা যখন প্রথম শুনলাম, আমার ঠাকুমার কথা মনে হয়েছিল। ঠাকুমাও এই রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাকে নিয়ে কয়েকবার চিকিৎসকের কাছেও গিয়েছিলাম। এই ধরনের রোগীদের সেবা আর ভালবাসার খুব প্রয়োজন।’’ এই চলচ্চিত্রের কাহিনি বুনেছেন অংশুমান-প্রত্যূষ। অনেক শেডস তো রাখা হয়েছে চিত্রনাট্যে। দেখা যাক, চিত্রনাট্যকার হিসাবে তারা দাগ কাটতে পারেন কি না।
ট্রেলার শুরু হতেই চিরঞ্জিত নাটকীয় কণ্ঠে বলছেন ‘‘আমি, আমি কাউকে বাঁচাতে পারি না; আমি নিজেকেও বাঁচাতে চাই না! আই ওয়ান্ট টু ডাই!’’ এমনতর সংলাপ আমাদের চমৎকৃত করে বইকী! একটি দৃশ্যে জয়া আহসান বলছেন, ‘‘সামবডি হেল্প মি আউট!’’ এ যেন ‘মেঘে ঢাকা তারা’ নাটকের পাহাড়-চেরা চিৎকার ‘‘আমি বাঁচতে চাই!’’ একটি মৃত্যু, রহস্য, তদন্ত, ন্যায়বিচারের দাবি, আর্তনাদ, প্রতিশোধ ইত্যাদি বহু শেডস-সমৃদ্ধ কাহিনি যে জমাটি হবে, তা ট্রেলার দেখে আন্দাজ করা যায়। এই চলচ্চিত্রে এক দুঁদে বিহারি পুলিশের চরিত্রে অভিনয় করেছেন রাজেশ শর্মা। অন্যান্য চরিত্রে আছেন রজতাভ দত্ত, সুব্রত দত্ত, সায়ন্তনী গুহঠাকুরতা, বাদশা মৈত্র। ছবিটির সংগীত পরিচালনা করেছেন দেবজ্যোতি মিশ্র এবং রকেট মণ্ডল।
অভিনেত্রী, প্রযোজক দুই অবতারে জয়া আহসান যে নিজেকে মেলে ধরতে চেষ্টা করছেন, তা বলাই বাহুল্য। জনপ্রিয় লেখক হুমায়ুন আহমেদ রচিত উপন্যাস ‘দেবী’ অবলম্বনে প্রথম চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেছেন তিনি, পাশাপাশি অভিনয় করেছেন রানুর ভূমিকায়। জয়ার প্রযোজনা সংস্থা ‘সি তে সিনেমা’ চলতি বছরে ‘ফুড়ুৎ’ নামে দ্বিতীয় চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চলেছে। জয়া ইঙ্গিত দিয়েছেন, এই চলচ্চিত্রে তিনি স্রেফ প্রযোজক। অর্থাৎ গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করছেন না তিনি। ‘দেবী’ তো গত বছরের বাণিজ্যসফল চলচ্চিত্র, এবার ‘ফুড়ুৎ’ কতটা সফল হয় তা আপাতত ভবিষ্যতের গর্ভে।