নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের উদ্বেগ

নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের উদ্বেগ

নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ ভালো সরব ছিল বিশ্বের দুই পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। বাংলাদেশের নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য করার দাবিতে আমেরিকার সিনেটে ডিসেম্বরে একটি রেজুলেশনও পাশ হতে দেখা যায়। অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের কনজারভেটিভ ফ্রেন্ডস অফ বাংলাদেশ সংগঠনের প্রধান মুখপাত্র অ্যান মেইন তো মোটামুটি হুংকার দিয়েই বাংলাদেশের গণতন্ত্রের পিছনে তাদের বিনিয়োগের কথা জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন তাদের করদাতা জনগণ বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য খরচকৃত অর্থের হিসাব চায় যা প্রায় ১৬ মিলিয়ন পাউন্ড! মেইন’র লেখনিতে দৃঢ়ভাবেই বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার কথাও বলা হয়

এদিকে নানা নাটকীয়তায় শেষ হয়েছে খোশ-অসন্তোষের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচন কমিশন জানায় এই নির্বাচন ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমূখর নির্বাচন। যদিও উৎসব বাদে হামলা, মামলা, প্রচারণায় বাধা সব কিছুই ছিল বিরোধীদের জন্য। খুব চৌকসভাবেই ‘উৎসব’টা নির্বাচন কমিশন তুলে রেখেছিল সরকারি দলের জন্যই। এই নির্বাচন নিয়ে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ থাকলেও তা প্রকাশ করার কোন প্ল্যাটফর্ম পায়নি তারা। আর এ কারণেই নির্বাচন নিয়ে আমেরিকা আর ব্রিটেনের অভিমত জানার আগ্রহ দেখা গিয়েছে সবার মধ্যেই।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে মুখপাত্র রবার্ট পালাদিনো জানিয়েছেন “নির্বাচনে সব বড় বিরোধীদল অংশগ্রহণ করেছে। এটা দলগুলোর প্রশংসনীয় ব্যাপার। ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জনের পরে এটি একটি ইতিবাচক ব্যাপার।” তারা জানান বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি বাস করছে তাদের দেশে। আর একারণেই তারা বাংলাদেশ এবং এদেশের জনগণের সাথে সম্পর্ক সম্প্রসারণে প্রবলভাবে আগ্রহী। এদিকে বাংলাদেশের গণতন্ত্র উন্নততর করতে গভীরভাবে আগ্রহী তারা। তারা আরো বলেছেন নির্বাচন শেষ হলেও নির্বাচন পূর্ববর্তী বিরোধীদের বিরুদ্ধে হয়রানি, মামলা, হামলা, প্রচারে বাধা, ভোট দিতে বাধা সৃষ্টিকরা সকল রকম ব্যাপারেই তারা অবগত আছেন। তারা এই সকল বিষয়ে উদ্বেগের সাথে নোট করেছে বলেও জানিয়েছে। এ বিষয়ে তারা বলেছেন “নির্বাচনের দিন অনেকেই ভোট দিতে যেতে পারেনি। যা নির্বাচনী প্রক্রিয়া এবং আস্থাকে খর্ব করে। নির্বাচনকালীন এসকল অনিয়মে তারা উদ্বিগ্ন।”

এদিকে যুক্তরাজ্যও তাদের অভিমত ব্যাক্ত করেছেন। ব্রিটিশ সরকারের ওয়েবসাইটে এক বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। সেখানে নির্বাচনকালীন সকল অভিযোগের পূর্ণাঙ্গ বিশ্বাসযোগ্য ও স্বচ্ছ সমাধানের জোরাল আহ্ববান জানানো হয়েছে। ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয়বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মার্ক ফিল্ড বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনানুষ্ঠানিক ফল ঘোষণার পর এ বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি বলেন শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন গণতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সকল বিরোধীদলসমূহ এ নির্বাচনে অংশগ্রহণকরায় তাদেরকের অভিনন্দনও জানিয়েছেন তিনি। তবে নির্বাচনের সকল দিক বিবেচনায় তিনি বেশি উদ্বিগ্ন বলে জানা গিয়েছে। মার্ক ফিল্ড বলেছেন, “গ্রেপ্তারসহ সব রকম বিশ্বাসযোগ্য প্রতিবন্ধকতার বিষয়ে আমি অবহিত। এমন গ্রেপ্তারের কারণে বিরোধী দলগুলোতে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। তাদের প্রচারণায় বিরত রাখা হয়েছে। নির্বাচনের দিনে নির্বাচন পরিচালনায় যেসব অনিয়ম হয়েছে, অনেক মানুষকে ভোট দিতে দেয়া হয়নি, এসব অনিয়মের বিষয়ে আমরা অবহিত।” এরই সাথে বাংলাদেশে নির্বাচনকালীন সকল অনিয়ম এবং বিরোধী নিধন প্রক্রিয়া এবং কর্মকাণ্ডে যুক্তরাজ্য সর্বসাকুল্যে হতাশ বলেই জানিয়েছেন তিনি।