মেসি-রোনালদো : কে হতেন সফল ক্রিকেটার?

মেসি-রোনালদো : কে হতেন সফল ক্রিকেটার?

ফুটবল মানেই মাঠের ৯০ মিনিট টানটান উত্তেজনা। প্রতিপক্ষকে পায়ের জাদুতে ঘায়েল করার মহা-উৎসব। আমরা মুগ্ধ হয়ে ফুটবলারদের পায়ের কারিশমা উপভোগ করি। মন্ত্রমুগ্ধের মতো দেখি পায়ের বৈচিত্র্যময় ভঙ্গিমায় তারা কতটা সহজে প্রতিপক্ষের কাছ থেকে বল নিজেদের আয়ত্বে নিয়ে আসেন। এই ফুটবলাররা যদি ক্রিকেটার হতেন তবে কেমন হতো? চলুন জেনে নেয়া যাক এমন কিছু তারকা ফুটবলারের কথা যারা ক্রিকেটার হলে কতটা সফল হতেন।

জোয়ান ক্রুয়েফ

জোয়ান ক্রুয়েফ

নেদারল্যান্ডসের কিংবদন্তি ফুটবলার জোয়ান ক্রুয়েফ টোটাল ফুটবলার বলেই পরিচিত। ১৯৮৮ সালে ক্রুয়েফ যখন বার্সেলোনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন তখন বার্সা অত্যন্ত খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়েই যাচ্ছিল। কিন্তু এই বার্সাকেই বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফুটবল দলে পরিণত করেছিলেন তিনি। ১৯৭৪ সালের ফুটবল বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডস দলকে ফাইনালে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি। ১৯৯১ সালে সর্বকালের অন্যতম সেরা এই ফুটবলার যদি ক্রিকেটার হতেন, কতটা সফল হতেন?

একজন ব্যাটসম্যানের কি মৌলিক গুন থাকে? অবশ্যই প্রযুক্তিগত দক্ষতা, নিজের সুবিধামত যথেষ্ট জায়গা খুঁজে পাওয়ার মতো সচেতনতা এবং ধৈর্য্য। এসব সকল গুনের সমন্বয়ে ক্রুয়েফ। যদিও তার উড়ন্ত ভঙ্গিমার প্রতি বিরাগভাজন আচরণ নিষ্ঠুর ক্রিকেট দুনিয়ায় বেমানান। চলুন একজন বিশেষজ্ঞের কথা শুনি। ‘ব্রিলিয়ান্ট অরেঞ্জ: দ্য নিউরোটিক জিনিয়াস অব ডাচ ফুটবল’ বইয়ের লেখক ডেভিড উইনার বলেছেন, ডাচ ফুটবলের চূড়ান্ত স্থান অর্জনকারী অবশ্যই জোয়ান ক্রুয়েফ। তবে ক্রিকেটের জন্য যেসব মনস্তাত্ত্বিক গুনাবলি থাকতে হয়, নিঃসন্দেহে সেসব গুনাবলির সাথে ক্রুয়েফের বৈশিষ্ট্য দারুণভাবে মিলে যায়।’ মাঠকে নিপুণভাবে পরিচালনা করায় সিদ্ধহস্ত তিনি। একজন দারুণ অধিনায়কের মতো তার খেলোয়াড়দের একটি অর্কেস্ট্রার মত পরিচালনা করা এবং প্রতিপক্ষের সামনে দৃঢ়তার সাথে পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার মতো মানসিকতা আছে তার। ক্রুয়েফের টার্ন স্পিনের জন্য দারুণ সহায়কও বটে।

মেসি নাকি রোনালদো?

লিওনেল মেসিকে কে না চেনে? ২০০৯ সাল থেকেই একরকম অপ্রতিরোধ্য লিও। পাঁচ পাঁচবার বিশ্বসেরা ফুটবলার হয়েছেন, এর মধ্যে টানা বিশ্বসেরা হয়েছেন চারবার! নামের পাশে একগাদা রেকর্ড, একগাদা এওয়ার্ড। বার্সার ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতা। গোল করেছেন, করিয়েছেনও। বার্সার হয়ে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ ছয়টি কাপ জিতেছেন, আরো কত শত কৃতিত্ব যে তাঁর ঝুলিতে, বলে শেষ করা যাবে না। আর্জেন্টিনার জাতীয় দলেও সেরা গোলদাতা তিনি। অন্যদিকে, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো একজন পর্তুগিজ ফুটবলার যিনি জুভেন্টাস এবং পর্তুগাল জাতীয় দলে ফরোয়ার্ড হিসেবে খেলে থাকেন। অনেক বিশেষজ্ঞদের মতে রোনালদো বর্তমান সময়ের সেরা খেলোয়াড় এবং তিনি সর্বকালের সেরা ফুটবলারদের মধ্যে একজন হিসেবে গণ্য হয়ে থাকেন। রিয়াল মাদ্রিদে দারুণ কিছু মৌসুম কাটিয়েছেন রোনালদো। ব্যালন ডি’অরের মতো গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কারের পাশাপাশি তার ঝুলি পরিপূর্ণ নানান রকম সম্মাননায়।

মেসি এবং রোনালদো- কে সেরা? এই বিতর্ক কখনো শেষ হওয়ার নয়। দুজনের মধ্যে কে হতেন সেরা ক্রিকেটার- এখানেও সেরার প্রশ্নে বরাবরের মতো বিতর্কের ব্যাপারে ব্যতিক্রম নয়। তারা দুজনই ক্রিকেটের ২২ গজে নিজেদের সেরাটা মেলে ধরতে পারতেন। কিন্তু কতটা নিজেদেরকে মেলে ধরতে পারতেন, সেটা কি পরিমাপ কিংবা তুলনা করা যায়? মেসির চুম্বকীয় বল নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা এবং রাবার-বাঁধা ম্যানুভারেবলির সাথে আরও ক্ষুদ্রতম লিওনেল মেসি, দক্ষিণ এশীয় ঘরানার সাথে দারুণভাবে মানিয়ে যেতেন। লেগস্পিনেও মেসি বেশ সফল হতেন বলেই ধরা যায়। অন্যদিকে, ক্রিকেট যেমন একটি মানসিক খেলা, রোনালদোর মেজাজ এ ক্ষেত্রে দারুণ উপযোগী। ভিভ রিচার্ডসের অহংকার ও মেজাজের সাথে পর্তুগিজ এই তারকার আড়ম্বরতার বেশ সাদৃশ্য আছে। রোনালদো এমন একজন শীর্ষ ক্রীড়াবিদ, যিনি ব্যাটিং, বোলিং এবং ফিল্ডিংয়ে এমন চমৎকার কলা-কৌশল প্রদর্শণ করতে পারতেন যাতে প্রতিপক্ষকে সহজেই পরাস্ত করা যায়। পেস, দক্ষতা, দুই পায়ের দারুণ গতিশীলতা ও বাতাসের মতো গতির ক্ষীপ্রতায় তিনি টি- টোয়েন্টি ও আইপিএলে দারুণ ফুটবলীয় সুবাস আনতে সক্ষম হতেন।

জর্জ ক্যাম্পোস

জর্জ ক্যাম্পোস

জর্জ ক্যাম্পোস ছিলেন মেক্সিকান গোলরক্ষক। ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে দারুণ পারফর্ম করে তিনি জয় করেছলেন ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয়। ক্যাম্পোস যদি ক্রিকেটার হতেন, অবশ্যই তার অবস্থান হতো উইকেটের পেছনে, উইকেটরক্ষক হিসেবে। কিন্তু আপনি ভাবতে পারেন, এখানে জিয়ানলুইজি বুফন কিংবা ডেভিড ডে গিয়াও তো হতে পারে। কিন্তু পেপ গার্দিওলা ঠিক যেমন তার শিবিরে এমন একজন চায় যে সমাপ্তিটা চমৎকারভাবে টানতে পারবে, তেমনি বর্তমানে উইকেটরক্ষককে গ্লাভওয়ার্কের পাশাপাশি সব ব্যাপারে দক্ষ হতে হয় যা সবাইকে বেশ আকর্ষিত করে। উইকেটের পেছনে লাফানোর চেয়ে কৌশলী হওয়াটা ফলপ্রসূ হয়। ক্যাম্পোস তার ক্যারিয়ারের শুরুতে একজন স্ট্রাইকার হিসেবে নিযুক্ত হন এবং একবার এক মৌসুমেই ১৪ গোল করেছিলেন। সামনে এগিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি নিয়ে একজন গোলরক্ষককের দায়িত্ব উপভোগ করার পাশাপাশি ক্যাম্পোস দায়িত্বশীল ব্যাটসম্যানও হতেন। বস্তুতপক্ষে, তিনি একজন পুরোদস্তুর অলরাউন্ডার হওয়ার সামর্থ্য রাখতেন।

রবার্তো কার্লোস

রবার্তো কার্লোস

রবার্তো কার্লোস ‘দ্য বুলেট ম্যান’ নামেই বেশি পরিচিত। পাওলো মালদিনির সাথে তাকেও ইতিহাসের সেরা লেফট ব্যাক হিসেবে পরিগণিত করা হয়। আক্রমণভাগেও তার দুর্দান্ত ফর্ম তাকে পরিচিত করে ফুটবলের সবচেয়ে আক্রমনমুখো ডিফেন্ডার হিসেবে। রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক এই ব্রাজিলিয়ান তারকা ২০০২ সালে তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বর্ণিল বছর পার করেছেন। এই বছর তিনি ছোঁয়া পেয়েছেন একই সাথে বিশ্বকাপ এবং উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের। দুইটি শিরোপা জয়েই দলে তার ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া সেই বছরেই ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ ও উয়েফা সুপার কাপ জেতায় জায়গা পেয়েছিলেন উয়েফা টিম অফ দ্য ইয়ারে। উয়েফা ডিফেন্ডার অফ দ্য ইয়ার হিসেবেও নির্বাচিত হয়েছিলেন কার্লোস।
কেমন হতো যদি তিনি ক্রিকেটার হতেন? যে কোনো ভালো আক্রমণের জন্য বোলারদের প্রয়োজন হয় যারা বলটিকে সরাসরি কাঙ্ক্ষিত জায়গায় ফেলতে পারেন। ফুটবলারদের মধ্যে ব্রাজিলের রবার্তো কার্লোসের চেয়ে ভালোভাবে এই কাজটি হয়তো কেউই করতে পারবে না। অবশ্যই এমন অন্যান্য খেলোয়াড় ছিল যারা ফ্রি কিক ক্রমাগত ক্রল করতে পারে, সুনিপুণভাবে বল জালে জড়াতে পারত। কিন্তু কেউই রবার্তোর মতো নিখুঁত না। রবার্তো নিজেও হয়তো জানতেন না, তিনি কিভাবে নিজেকে পরিচালনা করেন। কতটা মাধুর্য মিশে ছিল তার প্রতিটি পদক্ষেপে। বোলিংয়ে তিনি যে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের কাছে কতটা বিধ্বংসী হতেন- সহজেই অনুমেয়।

ক্লদ্‌ মাকেলেলে

ক্লদ্‌ মাকেলেলে

ক্লদ্‌ মাকেলেলে একজন সাবেক কৃতি ফরাসি ফুটবল খেলোয়াড় এবং বর্তমান সহকারী কোচ। খেলোয়াড়ি জীবনে তিনি নান্তেস, মার্সেই, সেল্টা ভিগো, রিয়াল মাদ্রিদ, চেলসি এবং সর্বশেষে অবসর নেওয়ার আগে প্যারিস সেইন্ট জার্মেই (পিএসজি) ক্লাবের পক্ষে মধ্যমাঠে খেলতেন। ওকে, আমরা এখন বলব ক্রিকেটের কথা। ক্রিকেটের একেবারে নিম্ন থেকে উচ্চস্তর পর্যন্ত তার স্টাইল মর্মে অনুধাবণ করতে পারবে। এখন ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করা দরকার। কে পার্টনারশীপকে সামনের দিকে টেনে নিতে পারে? কে রান তাড়া করতে বেগ আনতে পারে অথবা গরম কিংবা লম্বা দিনে মূল্যবান ওভার সরবরাহ করতে পারে? যখন মাকেলেলে ২০০৩ সালে মাদ্রিদ ছেড়ে চেলসিতে যোগ দেন, তখন মাদ্রিদ প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ বলেন, ‘আমরা ক্লদ্‌কে মিস করব না। কারণ তার খেলার ধরণ ও কৌশল এভারেজ। তার গতি ও বিপক্ষ দল থেকে বল দখলের দক্ষতা কম। এমনকি তার বেশিরভাগ পাস ভুল হয়।’ কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত রিয়াল পরবর্তীতে চার বছর ধরে লিগ শিরোপা ছাড়াই চলে যায়, এবং ‘ম্যাকেলেলে ভূমিকা’ ওই সময়ের মূল কৌশলগত বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে একটি হয়ে ওঠে। ফ্রেঞ্চ পল কলিংউডের মতো,ম্যাকেলেলে আমাদের মধ্যম আঙ্গুলের আঠার মতো কাজ করে এবং এমন ভূমিকা পালন করে যা দলটিকে সামগ্রিকভাবে অর্থপূর্ণ করে তোলে।কৌশল, গতি এবং দক্ষতা একজন ক্রিকেটারের মূল শক্তি, যা ম্যাকেলেলের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য।