নির্বাচনের আগে আগে সারা দেশে বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের উপর হামলা-মামলার চিত্রের কোন উন্নতি লক্ষ্য করা না গেলেও সেনাবাহিনীর গাড়ি যেদিকে বেশি চলাচল করছে সেই সব এলাকার পরিস্থিতি অন্তত সংঘাতময় হতে দেখা যাচ্ছে না।
নির্বাচনে একপক্ষীয় প্রচারণায় ভোটের মাঠ ছিল সরকারি দলের দখলে। ইসির ব্যর্থতা, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষপাতিত্ব আচরণ, গ্রেফতার, ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের হামলা-ভয়ভীতি প্রদর্শনে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক উদ্বেগ বিরাজ করছে। এমনকি ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের বাসায় বাসায় গভীর রাতে গিয়ে ভয়ভীতি দেখানো এবং ভোট দিতে কেন্দ্রে না যাওয়ার প্রস্তাব, গেলে প্রকাশ্যে নৌকায় সিল মারার নির্দেশে দেয়া হচ্ছে।
কয়েক দিনের পরিচিত এই দৃশ্য পাল্টাতে শুরু করেছে মেষ বেলায় কিছু কিছু এলাকায় সেনাবাহিনীর গাড়ি দেখার পর থেকে। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের অনেক এলাকায় সেনাবাহিনীর গাড়ি দেখা গেছে। সেনা সদস্যরা এলাকায় গিয়ে ভোটের পরিবেশের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। শুধু নৌকা প্রতীকের পোস্টার দেখে জানতে চেয়েছেন অন্য প্রতীকের পোস্টার নেই কেন? মানুষ জানাচ্ছেন ভয়েই ধানের শীষের পোস্টার লাগাতে সাহস পাচ্ছেন না ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির প্রার্থীরা। সেনা সদস্যরা ধানের শীষের পোস্টার লাগাতে বাধা দেয়া গুণ্ডা-হোন্ডাদের নাম নিচ্ছেন। সেনারা নিজেদের মোবাইল নম্বর দিয়ে ঝামেলা হলেই ফোন করার পরামর্শ দিচ্ছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টহলরত সেনা সদস্যরা মানুষকে ভোট দিতে যাওয়ার জন্য উৎসাহ দিচ্ছেন এবং অভয় বাণী শোনাচ্ছেন। তারা বলছেন, ভোট দিতে যাবেন নির্ভয়ে। কেউ আপনাদের ক্ষতি করতে পারবে না। ভয়ভীতি দেখালে ফোন করবেন সঙ্গে সঙ্গে আমরা এসে ব্যবস্থা নেব। বেশ কয়েকটি এলাকায় খবর নিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে।
তার পরেও সারাদেশের অশিকাংশ জায়গায় বিরোধী দলের নেতাদের তেমন প্রচার লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে জনগণকে অভয় দিয়ে সেনাদের গাড়ি থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। ভোটের পরিবেশ নিয়ে জনমনে আতংঙ্ক কাটাতে কাজ করছেন সেনাবাহিনী। তবে সময় অতি সংক্ষিপ্ত হওয়াতে কতটুকু পরিবেশ ফিরে আসবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। জনগণ আশা করছেন ভোটের মাঠে সেনা উপস্থিতি পাল্টে দিতে পারে পুরো চিত্র। হামলা ও ভোট ছিনতাইয়ের প্রকাশ্য ঘোষণা সারা দেশে দলীয় ক্যাডারদের দিয়ে ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করে বিরোধীদলকে নির্বাচন থেকে সরে যেতে বাধ্য করার পরিকল্পনা এবার কাজে নাও আসতে পারে। অন্যদিকে সেনাবাহিনী যদি সঠিক ভূমিকা পালন করতে পারে ভোটে ব্যাপক জনগণের উপস্থিতি ও এক তরফা ফলাফলের কুকৌশল এড়ানো সম্ভব বলে মনে করেন অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক। তা না হলো ভোটবিহিন একটি নির্বাচনে সারা দেশে যে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হতো তার দায় দায়িত্বশীল কেউই এড়াতে পারবেন না। এমন অবস্থায় ভোটের চিত্র পাল্টাতে সেনাবাহিনীই সবিশেষ ভরসা।