ঝরা পাতার মরসুমের পরিচর্যা

ঝরা পাতার মরসুমের পরিচর্যা

ঝরা পাতার মরসুমের সবে শুরু। উপরি পাওনা হিসেবে এই যে পশলা বৃষ্টি। শীতের আমেজ একেবারে ষোলো আনা। তবে বাইরে প্রকৃতির হাল আর যাই হোক না কেন এই শীতেও যে আপনার ত্বকে তার প্রভাব পড়বে না, তা কখনও হয়। ত্বকের পরিচর্যার হাজার উপাদান এই সময় বাজারে। আর সব থেকে বড়ো কথা এত শাক-সবজির সম্ভার। তাই ত্বক তো হেসে উঠবেই। তাই বলে শুধু মুখের পরিচর্যাই করবেন তা হয় নাকি। হাত ও পায়ের যত্ন নিতে হবে তো। এবার আপনাদের জন্যে রইল সেরকমই ঘরোয়া কিছু টোটকা।

সুন্দর হাতের জন্যে

শুষ্ক রুক্ষ হাতের জন্যেও চাই ময়েশ্চারাইজার। ঘরোয়া পদ্ধতিতে বানিয়ে নিন এরকমই কিছু ময়েশ্চার। যা আপনার ত্বককে এই শীতে ভাল রাখতে সাহায্য করবে

• রাতে শুতে যাওয়ার আগে দুধের সরের সঙ্গে মধু মিশিয়ে হালকা ম্যাসাজ করুন। পনেরো মিনিট পর হাত ধুয়ে ফেলুন। এবার মধু, গাজরের রস, দই, ডিম একসঙ্গে মিশিয়ে হাতে মাসাজ করুন এবং কুড়ি মিনিট পর আলতো ভাবে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দু’দিন এই পদ্ধতি অ্যাপ্লাই করলে ত্বকের শুষ্কতা কমে যাবে। হাত দু’টি হয়ে উঠবে উজ্জ্বল ও কোমল।
• স্নানের আগে কলা ও পাকা পেঁপে পেস্ট করে সারা হাতে লাগিয়ে দিন। ড্রাই হয়ে যাওয়া ত্বকে লাগান। কিছুক্ষণ পরে ধুয়ে ফেলুন।
• রাতে শুতে যাওয়ার আগে অলিভ অয়েল ও গ্লিসারিন মিশিয়ে ফাটা ত্বকে নিয়মিত লাগান। উপকৃত হবেন।
• পাতিলেবুর রস, রোজ ওয়াটার ও গ্লিসারিন মিশিয়ে নিন। রাতে শুতে যাওয়ার আগে হাতে মেখে নিন। সকালে উঠে ধুয়ে ফেলুন। ত্বক উজ্জ্বল ও কোমল হবে।
• যদি ত্বক খুব শুষ্ক ও লালচে হয়ে যায় তবে ভিটামিন-ই ক্যাপসুল দিয়ে ম্যাসাজ করুন।
• মধু ও লেবুর মিশ্রণ ত্বক ময়েশ্চারাইজ করে তুলতে সাহায্য করে। এটি হাতের ত্বকে মিনিট ২০ লাগিয়ে ভেজা তুলো দিয়ে পরিষ্কার করে নিন।
• যদি ছাল উঠে যায় হাতে খোসা খোসা ওঠে তবে স্যান্ডালউড অয়েল, অলিভ অয়েল মিশিয়ে আলতো হাতে মাসাজ করুন। ত্বক কোমল ও মোলায়েম হয়ে যাবে।
• পাকা কলার সঙ্গে মুলতানি মাটি ও পরিমাণ মতো কমলালেবুর রস মেশান। এবার মিশ্রণটি দুই হাতে ভাল করে লাগান। শুকিয়ে গেলে ঠাণ্ডা জল দিয়ে ভালোভাবে হাতদুটো ধুয়ে ফেলুন।

হাত ও পায়ের উজ্জ্বলতার জন্যে

• নিয়মিত স্ক্রাব করুন পাতিলেবুর রস এবং চিনি দিয়ে।
• ময়েশ্চারাইজেশনের জন্য লাগান দুধের সর এবং কমলালেবুর খোসা বাটার মিশ্রণ। এই প্যাকটি প্রতিদিন ব্যবহার করা যেতে পারে।
• রাতে শুতে যাওয়ার আগে অলিভ অয়েলের সঙ্গে লেমন এসেনশিয়াল অয়েল ১:৫ রেশিওতে মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি হাতে ও পায়ে হালকাভাবে মাসাজ করে ঘুমোতে যান।
• দিনে রোদে বেরোনোর সময় এবং কিচেনে কাজ করতে যাওয়ার সময় হাত ও পায়ের খোলা অংশে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করা দরকার।

হাত পায়ের ত্বকের ট্যান রোধ

শীতকালেও ট্যান পড়ে। আমরা সূর্যের আলোয় অনেকটা সময় হয়ত কাটাই ঠাণ্ডার হাত থেকে বাঁচতে। কিন্তু সূর্যরশ্মির ক্ষতিকর প্রভাবে এবং দূষণজনিত কারণে হাত ও পায়ের ত্বকের নানারকম ক্ষতি হয়। এর জন্য মুখের মতোই হাত ও পায়ের ত্বকেরও বিশেষ যত্ন প্রয়োজন।

• টমাটো চটকে নিয়ে হাত ও পায়ের ত্বকে ম্যাসাজ করুন। টমাটো খুব ভালো প্রাকৃতিক ব্লিচ যা ট্যান দূর করতে সাহায্য করে।
• কাঁচা পেঁপে স্লাইস করে নিন। পেঁপের টুকরো সরাসরি ত্বকে ঘসুন। ট্যান দূর হবে।
• তিন-চার চামচ দুধ নিন, তিন-চার ফোঁটা লেবুর রস মেশান। এতে দুধ খানিকটা ছানা কেটে যাবে। এবার এই মিশ্রণটি হাতের ও পায়ের ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। ১৫ মিনিট পর জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে ট্যান ধীরে ধীরে দূর হবে।
• নতুন করে যাতে ট্যান না পড়ে তার জন্য চাই পারফেক্ট সানগার্ড প্রোটেকশন। রোদে বেরনোর সময় এবং রান্নাঘরে আগুনের সামনে কাজ করার আগে অবশ্যই হাত ও পায়ের খোলা অংশের ত্বকে সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করুন।
• ট্যান দূর করবার জন্য নিয়মিত হাত ও পায়ের ত্বকের স্ক্রাবিং দরকার। এর জন্য তৈরি করে নিন ঘরোয়া স্ক্রাবার। মসুর ডাল গুঁড়ো করে নিন (খুব মিহি গুঁড়ো করবেন না), এর সঙ্গে মেশান অল্প মধু। মিশ্রণটি দিয়ে নিয়মিত স্ক্র্যাবিং করুন।
তাহলে পেয়ে গেলেন হাত ও পায়ের শুষ্কতা দুর করার উপায়। তাহলে শীতের আমেজ উপভোগ করতে করতে কাজে লাগান আর সুন্দর হয়ে উঠুন।