বাংলাদেশে রাজনীতিতে নির্বাচনকালীন সময়ে পালটা পাল্টি অভিযোগ, হামলা-মামলা, সহিংসতা নতুন কিছু না। তবে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব এবং পক্ষপাতিত্ব নিয়ে আগেও ধোঁয়াশা হয়েছে রাজনীতির মাঠ। স্বায়ত্তশাসিত এ প্রতিষ্ঠানকে অনেকবারই প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। তবে এবারের নুরুল হুদা কমিশনের দিকে প্রশ্ন খুব বেশি উঠছে।
তবে এবারের কমিশনে সমালোচনা বেশি হচ্ছে স্বয়ং প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার বিরুদ্ধেই! একাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই প্রশ্ন এবং অভিযোগের ঝড় উঠছে তার নামে। বাংলাদেশের ৪৭ বছরে নির্বাচন কমিশনের ইতিহাসে যা কেউ আগে দেখেনি তাই দেখছে আজ সাধারণ মানুষ। এবার লড়াই করছেন স্বয়ং এক নির্বাচন কমিশন আর প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে। এই নির্বাচন কমিশনে নির্বাচন প্রশাসনের দায়িত্বে থাকা মাহবুব তালুকদার সিইসির বিরুদ্ধে মৌন বিদ্রোহ করেছে। এর আগে মাহবুব তালুকদার সাংবাদিকদের কাছে বলেন “নির্বাচনে নূন্যতম লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই।” তার এই কথার উত্তর বেশ উদ্ধত ভাবেই দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা। গত পরশু চট্টগ্রামে মাঠ পর্যায়ের মত বিনিময় সভায় তিনি বলেন “লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের সংজ্ঞা কি? এ কথা বার বার বলা হয় কেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ঠিক নেই? কোথায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই, কিসের ফিল্ড ঠিক নাই?” এই কথার মাধ্যমেই তিনি বর্তমান কমিশনের সকল অভিযোগ তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেন এবং তার কমিশনেরই তার সমমর্যাদার একজন কমিশনারকেই মিথ্যাবাদী প্রমাণ করেন। এতে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। একদজন নির্বাচন কমিশনারের অস্তিত্বে আঘাত করার অভিযোগ আনেন তিনি নুরুল হুদার বিরুদ্ধে। পরে সাংবাদিকদের নিজ কক্ষে ডেকে একটি ক্ষোভপত্র পাঠ করেন মাহবুব তালুকদার।
স্বয়ং কমিশনের ভিতরেই এমন মত পার্থক্য এবং দোষারোপের ঘটনা সামনে আসার পর নুরুল হুদার দিকেই সমালোচনার আঙুল উঠছে সবচেয়ে বেশি। এদিকে তফসিল ঘোষণার পর থেকেই প্রধান বিরোধী শক্তি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠিয়ে আসছিলেন এবং প্রমাণ স্বরূপ নানা অভিযোগও দায়ের করেছিলেন। শুধু ঐক্যফ্রন্ট বা বিএনপিই না গণতান্ত্রিক বাম জোটও কমিশনের কর্মকাণ্ড নিয়ে নাখোশ। আওয়ামী লীগ ব্যতিত সকল দলই যখন কমিশনের বিরুদ্ধে এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে নানা প্রশ্ন এবং অভিযোগ সামনে নিয়ে আসছে তখন সিইসি নুরুল হুদা সকল অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়ে কোন ভিন্নমতকে পাত্তা না দিয়ে তার মত করে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে কমিশন। এদিকে প্রচারণা শুরু হওয়ার পর থেকেই বিরোধী শক্তিগুলোর উপরে নেমে আসে মুহুর্মুহু হামলা। হামলার অভিযোগ নিয়ে গেলেও প্রধান নির্বাচন কমিশনার সবসময় সকল অভিযোগ অগ্রাহ্য করেই চলেছেন। কিছুদিন আগে গণতান্ত্রিক বামজোটের প্রতিনিধি দল প্রচারণায় হামলার শিকার হওয়ার অভিযোগ নিয়ে কমিশন ভবনে গেলে তাদের সাথে দেখা করতেই অস্বীকৃতি জানায় প্রধান কমিশনার নুরুল হুদা! এসব কারণেই রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বার বার সংশয় প্রকাশ করে আসছে খোদ প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদাকে নিয়েই।