সুইডেনে ইয়েমেনের বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে সমঝোতা হওয়ার পরও চুক্তি লঙ্ঘন করে হামলা অব্যাহত রেখেছে সৌদি আরব । সমঝোতার পর ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই সৌদি আরব হুদাইদা বন্দর এলাকায় অন্তত ২১বার বিমান হামলা চালিয়েছে এবং এখনও হামলা অব্যাহত রেখেছে।
জাতিসংঘের তত্বাবধানে সুইডেনে গত ৬ থেকে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ইয়েমেনের বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। ইয়েমেন বিষয়ক জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত মার্টিন গ্রিফিতয্ বলেছেন, হুদাইদা বন্দর এলাকায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা, সেখানে জাতিসংঘ শান্তি বাহিনী মোতায়েন ও ত্রাণসাহায্য প্রেরণের বিষয়ে সব পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইয়েমেন বিষয়ক আলোচনাকে সৌদি আরব স্বাগত জানালেও তাদের আচরণে বোঝা যায় এটা কেবলই লোক দেখানো এবং তারা ইয়েমেনে শান্তি চায় না। সম্প্রতি সৌদি সরকারবিরোধী সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যায় রিয়াদের হাত থাকার বিষয়টি প্রকাশ হয়ে পড়ায় এবং ইয়েমেনে আগ্রাসন অব্যাহত থাকায় সৌদি আরবের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বেড়েছে। এমনকি জার্মানি, ফিনল্যান্ড ও বেলজিয়ামের মতো দেশগুলো সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে। মার্কিন সিনেটেও একটি প্রস্তাব পাশ করা হয়েছে যাতে সাংবাদিক হত্যার জন্য সৌদি যুবরাজ সালমানকে দায়ী করা হয়েছে।
এ অবস্থায় সৌদি সরকার চাইলেও সুইডেনে ইয়েমেনের বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যকার সমঝোতাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারত না। ইয়েমেন বিষয়ক আলোচনার ফলাফলকে স্বাগত জানিয়ে সৌদি আরব আসলে নিজেকে শান্তিকামী হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে। কিন্তু হামলা অব্যাহত থাকায় প্রমাণিত হয়েছে এটা লোক দেখানো স্বাগত জানানো ছাড়া আর কিছুই নয় এবং আন্তর্জাতিক চাপ ঠেকানোই এর উদ্দেশ্য।
সুইডেন বৈঠকে অংশগ্রহণকারী ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ প্রতিনিধি দলের সদস্য সালিম মাগলেস বলেছেন, হুদাইদা বন্দরে সৌদি হামলা থেকে বোঝা যায়, সৌদি সরকার সমঝোতার বিরোধী এবং তারা যুদ্ধবিরতি চায় না।
সৌদি আরব সুইডেনের শান্তি আলোচনাকে ইয়েমেনে তাদের ব্যর্থতা বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক মহল। একদিকে, সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট যুদ্ধের ময়দানে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য দেখাতে পারেনি এবং দরিদ্র ইয়েমেনের সেনা ও স্বেচ্ছাসেবী বাহিনীর মোকাবেলায় সৌদি আরবের অসহায়ত্ব ফুটে উঠেছে। অন্যদিকে, ইয়েমেন বিষয়ক আলোচনার মধ্য দিয়ে সৌদি আরব আনসারুল্লাহর মতো একটি শক্তির অস্তিত্বকে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে। এসবই সৌদি আরবের ব্যর্থতা। এই ব্যর্থতা ঢাকতেই তারা ইয়েমেনে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।