আলোচিত ইস্যুগুলোতে ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারে কি থাকছে

আলোচিত ইস্যুগুলোতে ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারে কি থাকছে

বাংলাদেশের জনগণের মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে ৭ দফা ও ১১ দফাকে সামনে রেখে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আবির্ভাব। এবার সেই অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করেছে দলটি। আজ সোমবার সকালে রাজধানীর হোটেল পূর্বাণীতে এই ইশতেহার ঘোষণা করা হয়। ইশতেহার পাঠ করেন জোটের অন্যতম নেতা ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।

ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে দেয়া ৩৫ দফা ইশতেহারের বিস্তৃতি ২১ পৃষ্ঠা। যেখানে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, এদেশের আপমর জনগণের মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার, গুরুত্ব দেয়া হয়েছে জনগণের চাওয়া-পাওয়ার।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট তাদের ইশতেহারে সবচেয়ে দূরদর্শীতার পরিচয় দিয়েছেন, আলোচিত ইস্যুতে। যে ইস্যুগুলোতে আওয়ামী লীগের প্রতি জনগণের অনাস্থা তৈরি হয়েছে, ঐক্যফ্রন্ট সেগুলোতেই জনগণের দাবিকেই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছেন।

• ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন

ইশতেহারের তৃতীয় দফায়ই বিতর্কিত এবং জনগণের কণ্ঠরোধ করার উদ্দেশ্যে পাশ করা ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ বাতিল করার সরাসরি ঘোষণা দিয়েছে ঐক্যফ্রন্ট। সেই সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মত প্রকাশের ক্ষেত্রে সরকারি বিধি নিষেধ না রাখার আশ্বাস দিয়েছেন। এই আইন বিধি নিষেধ এবং খামখেয়ালি আইনের সহযোগিতায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এখনো পর্যন্ত তাদের গ্রেফতার ও হয়রানি বহাল রেখেছে। এই দফায় আরও বলা হয়, সরকারি পদক্ষেপ ও পদধারীদের সমালোচনা, এমনকি ব্যঙ্গ বিদ্রুপেরও অধিকার রাখবে জনগণ।

• সরকারি চাকরি ও কোটা সংস্কার

২০১৮ সালে ‘কোটা সংস্কার’ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জনগণের সামনে আসে ‘বেকার’ সমস্যার ভয়াবহতা। বেকারত্বের অভিশাপে জীবন দিতেও যেখানে শিক্ষিত যুবকেরা দ্বিধান্বিত নয়। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সেখানে বেকারত্বের সমস্ত দায় তাদের সরকারের কাঁধে নিতে প্রস্তুত। ত্রিশোর্ধ্ব শিক্ষিত বেকারের জন্য বেকার ভাতা চালু করার উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রীয় সক্ষমতা পরীক্ষার কমিশন গঠন করার আশা ব্যক্ত করেছেন। সরকারি চাকুরিতে অনগ্রসর জনগোষ্ঠী এবং প্রতিবন্ধী ব্যতিত অন্য সব কোটা বাতিলের ঘোষণা দিয়ে পূরণ করেছেন বর্তমান প্রজন্মের দাবি। পুলিশ ও সামরিক বাহিনী ব্যতিত সরকারি চাকুরিতে রাখছেনা কোন বয়সসীমা।

• প্রশ্নফাঁস ও ভঙ্গুর শিক্ষা ব্যবস্থা

ক্রমে ভেঙে পড়া শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে দৃষ্টি দিয়েছে ৭ দফাতেই। তারুণ্যে ইশতেহার ভাবনা থেকে নিয়েছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোকে ক্যাটাগরি অনুযায়ী ভাগ ও সরকারিভাবে ফি নির্ধারণের উদ্যোগ। এছাড়া ‘প্রশ্নফাঁস’র অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে সেল গঠন ও প্রশ্নফাঁস রোধে আইন প্রণয়ন ছাড়াও সর্বোচ্চ মহলে জবাদিহিতার ব্যবস্থা ও শাস্তি নিশ্চিকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছে তারা।

• বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা

বিগত এক দশক ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকাণ্ড প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আসছে। সরকারের নির্দেশে নানা রকম বে-আইনি কার্যক্রমে জড়িত হয়ে নিজেদের পেশাকে করেছে কলঙ্কিত। মাদক নির্মূলের নামে ঘটিয়েছে অসংখ্য হত্যাকাণ্ড। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট রিমান্ডের নামে পুলিশি নির্যাতন বন্ধ করার কঠোর পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেছে। ইশতেহারে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুম পুরোপুরি বন্ধ করা সহ ইতোপূর্বে সংগঠিত সকল ঘটনার তদন্তের ঘোষণাও দেয়া হয়েছে।

• নিরাপদ সড়ক ও সন্ত্রাসী হামলা

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিশু-কিশোরদের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন গড়ে তুলেছিন তার প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে তাদের ৯দফার আলোকে সড়ক আইন সংশোধন করার ঘোষণা দিয়েছেন ২২দফায়। এছাড়াও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের উপরে নৃশংস হামলাকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার ঘোষণাও দিয়েছেন।

• লুটপাটের মুখে থাকা ব্যাংকিং খাত

বর্তমান সময়ে ব্যাংকিং খাত পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। আওয়ামী লীগ তার শাসনামলে যে পরিমান ঋণখেলাপি করেছে তাতে অনেক ব্যাংকই দেওলিয়া হওয়ার পথে। ব্যাংকিং সেক্টরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

• গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিক স্বার্থ

গণমাধ্যম প্রশ্নে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট স্বাধীন প্রেস কাউন্সিল গঠণ ছাড়াও সাংবাদিকদের মজুরি বোর্ড নিয়মিত করার ঘোষণা দিয়েছেন। ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজমের ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের সুরক্ষা নিশ্চিতের বিষয়ও ইশতেহারে রাখা হয়েছে।

বর্তমান রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারের জনগণের স্বার্থকেই অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। এখন দেখার বিষয় কতটুকু সুষ্ঠু নির্বাচন হয়? সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ঐক্যফ্রন্টকেই জনগণ সমর্থস দেবে বলে মনে করছেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা।