আনুষ্ঠানিক প্রচারণার চতুর্থ দিনে এসে ক্ষমতাসীনদের কার্যক্রমে নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা। আজ বৃহস্পতিবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি নির্বাচন নিয়ে তৃতীয় শক্তির ষড়যন্ত্র আছে কি না, তা খতিয়ে দেখার তাগিদ দেন। একই সঙ্গে তিনি ভোটের ভাগ্য নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন।
নির্বাচন কমিশনার ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচনের পরিস্থিতি উল্লেখ করে বলেন, “তখন মাঠে সব বাহিনী ছিল। সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ছিল। তবুও আমরা কী দেখেছিলাম! পুলিশ সদস্য, প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ম্যাজিস্ট্রেট ও শত শত মানুষ নিহত হয়েছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভস্মীভূত হয়েছে। সেটার কী পরিপ্রেক্ষিত ছিল, আমরা কেন নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি; সে প্রসঙ্গে আলোচনা করার সুযোগ ও প্রয়োজন নেই। তবে ভবিষ্যতে বিষয়টি আমাদের মনে রাখতে হবে। এটি ভুলে গেলে চলবে না।”
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, হঠাৎ করেই নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশনের এই সংশয় কেন? নির্বাচন পূর্ববর্তী সময়ে তারা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের যৌক্তিক দাবি পর্যন্ত মেনে না নিয়ে আওয়ামী লীগের সুরে সুর মিলিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ইচ্ছেমত বাতিল করেছেন বিএনপির মনোনয়নপত্র। কিন্তু তারপরও কি আওয়ামী লীগের সহিংস মনোভাব কমেছে? মূলত প্রচারণার প্রথম দিন থেকে বিএনপি নেতা-কর্মীদের উপর হামলার ঘটনাতেই নির্বাচন কমিশন আশঙ্কা করছে নির্বাচনে বিশৃঙ্খলার।
প্রতীক বরাদ্দের পরদিনই ডজনখানেক জেলায় আওয়ামী লীগ-বিএনপি সমর্থকদের সংঘর্ষ ঘটে। হামলা হয়েছে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বেশ কয়েকজন প্রার্থীর গাড়িবহরে। ঠাকুরগাঁওয়ে নির্বাচনী প্রচারণার সময় তার গাড়িবহরে হামলা করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মীরা। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ১১ ডিসেম্বর হামলার শিকার হন তার নির্বাচনী এলাকা নোয়াখালীতে। সে সময় ৪০জন আহত হয়।
চতুর্থ দিনে এসেও হামলার শিকার হতে হয়েছে বিএনপির প্রার্থী মাহবুব উদ্দিন খোকন, আমির খসরু চৌধুরি ও মোশাররফ হোসেন হামলার শিকার হন।
হামলার ঘটনা ছাড়াও পুলিশি হয়রানিতো রয়েছেই। একের পর মিথ্যে মামলায় গ্রেফতার হচ্ছে নেতাকর্মীরা। গত ৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার পর থেকে ১৫৮টি মামলায় প্রায় আড়াই হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করেছে সরকার। শুধু প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই গ্রেফতার করা হয়েছে চার শতাধিক। সেই সাথে তল্লাশি এবং প্রচারণায় বাধা দেয়ার ঘটনাতো রয়েছেই।
এমন পরিস্থিতিতে শুধু নির্বাচন কমিশনার কেন? যে কেউই নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের আধিপত্য বিস্তারের শঙ্কা এবং ব্যালট-বাক্স চুরি কিংবা জনগণকে ভোট দিতে বাধা দেয়ার বিষয়টি চিন্তা করতেই পারেন। নির্বাচনী কার্যক্রমের এখন পর্যন্ত কোথাও ‘লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড’ লক্ষ্য করা যায়নি। যেখানে আওয়ামী লীগের মন্ত্রীরা পুলিশ প্রোটোকলে শোডাউন করছে, সেখানে বিএনপি নেতাদের পথসভা স্থগিত করতে হচ্ছে হামলার ভয়ে।
যার কারণে আগামী নির্বাচন আদৌ কি সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হবে কিনা তা নিয়েই সংশয় দেখা দিয়েছে। কোন কোন আওয়ামী লীগ নেতাতো ঘোষণাই দিয়েছে, বিএনপিকে ভোটকেন্দ্রে যেতে দেবে না। এখন দেখার বিষয়, নির্বাচন কমিশন কতটুকু স্বাধীন হওয়ার চেষ্টা করেন আর কতটুকু আওয়ামী ঘেঁষা হয়ে জনগণের অধিকার নিয়ে খেলা করেন!