এবার নির্মমতার শিকার পুরো শাপোকেয়েন্স দল

মেডেয়িনের অভিশাপ : শেষ পর্ব

এবার নির্মমতার শিকার পুরো শাপোকেয়েন্স দল

আরও একবার খেলার পাতার শিরোনামে এসেছিল মেডেয়িন। বলাই বাহুল্য, সুখের কোনো বার্তা তাতে ছিল না। বরং, ঘটনার আকস্মিকতায় বাক হারিয়েছিলেন অনেকেই। না, এবার আর একজন দু’জন নয়; ৭১ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন স্মরণকালের অন্যতম মর্মান্তিক প্লেন দুর্ঘটনায়। মেডেয়িন এর পথে কোপা সুদামারেকিনের ফাইনালে অ্যাথলেটিকো ন্যাশিওনালের জন্য প্রথমবারের জন্য যাচ্ছিল ক্লাবটি। আগের দুই পর্ব পড়ে থাকলে ক্লাবটির নামটি পরিচিত হবার কথা। বিস্ময়কর বলুন বা কাকতাল; যতবারই মেডেয়িন বা ন্যাশিওনাল এর নামের জিকর হয়েছে চোখ থেকে অশ্রু ঝরেছে ফুটবলপ্রেমীদের।

পরিপাটি করে সাজানো ছিল ড্রেসিংরুমটি। সবুজ রঙ্গা দলীয় লোগোর পাশে জার্সি নাম্বারগুলোও ছিল সেই একই রকম উজ্জ্বল। শুধু আঁধারে ঢেকে গিয়েছিল আকাশটা। ড্রেসিংরুমটাকে আলো করে রাখা কথা ছিল যে প্রাণগুলোর তারা যে ততক্ষণে দূর আকাশের তারা।

আর মাত্র পাঁচটি মিনিটের পথ বাকি ছিলো। তাহলেই গল্পটা অন্যরকম হতে পারতো। আবারো বিমানের সামনে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে ক্যামেরার সামনে দাড়াতেন শ্যাপোকোয়েন্স’র গর্বিত ফুটবলাররা। নিজেদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অর্জনের পথে এক পা এগোনোর স্বস্তি থাকতো সবার চোখে। সবচেয়ে বড় এবং বুনো উল্লাসটি হতো সেই ড্রেসিংরুমেই। যেমনটি দেখা গিয়েছিলো ফাইনাল নিশ্চিত হবার পরে।

মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনার মাত্রই এক সপ্তাহ আগে বাবা হতে যাওয়ার সুসংবাদটা পেয়েছিলেন থিয়াগিনিও। এ খুশিতে সতীর্থদের উদ্দেশ্যে ভিডিওও আপলোড করেছিলেন। স্বপ্নের ডাল পালাও হয়তো মেলতে শুরু করেছিল। অনাগত সে সন্তান হয়তো বাবার হাত ধরে মাঠে যাওয়া শিখতো। হয়তো একদিন নিজের অজান্তেই ভালোবেসে ফেলত ফুটবলটাকে। মাঠে দুই প্রিয় মুখের মুহুর্তগুলো হাসি ফোটাতো প্রিয়তমা স্ত্রীর ঠোঁটে। কিছুই হয়নি। বুনতে থাকা স্বপ্নের জাল ছিড়ে গিয়েছিল আচমকাই।

ফাইনাল নিশ্চিত হবার পরই শ্যাপোকোয়েন্স’র কোচ বলেছিলেন আজকে মৃত্যু হলেও তার আর কষ্ট থাকবে না। তিনি কি তবে অদৃষ্ট বুঝতে পেরেছিলেন? নাকি যিনি অদৃষ্ট লিখে থাকেন, তার সে কথা মনে ধরেছিলো? নতুবা এমন তো হবার কথা না। পরাজয়ও যাদের মুখের হাসি ম্লান করতে পারতো না, সে দলের প্রাণপুরুষ আচমকা এমনটি কেন বলেছিলেন সেদিন?

যার হাত শেষ মুহুর্তে শ্যাপোকোয়েন্সকে রক্ষা করেছিলো, সেই দানিলোও হার মেনেছিলেন। প্রিয় সতীর্থদের ছেড়ে থাকতে চাননি এ নিষ্ঠুর পৃথিবীতে। তাই ঈশ্বরের কাছে পুরো পরিবার সপে দিয়ে সঙ্গী হয়েছিলেন সবার। কে জানে, হয়তো স্বর্গের কোনো প্রান্তরে গ্লাভস হাতে দাড়িয়েও গিয়েছেন। শুধু নিরবে চোখ ভিজে যাবে প্রিয় পরিবারের।

চোখ ভিজে যায়। অবাধ্য হাত কেঁপে কেঁপে উঠে । জীবন তো থামবে না। আবারো সকালের রোদ নতুন কোনো আহ্বানের লালসার জন্ম দিয়ে ভুলিয়ে দেবে সবই। শুধু ফিরে আসবে না মেডেয়িনের পাহাড়ের বুকে আছড়ে পড়া প্রাণগুলো। স্থানীয় সময় রাত ১.১৫ মিনিটে ঘটেছিল এই মর্মান্তিক ঘটনা। যাতে ৭৭ জন যাত্রীর মাঝে ৭১ জনই প্রাণ হারান। যারা বেঁচে ফিরেছেন তাদের জন্যও স্বাভাবিক জীবন যেন স্বপ্নের মত। মেডেয়িনের সে দুঃসহ স্মৃতি যে তাদের সারা জীবন তাড়া করে ফিরবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।

অদ্ভুত এক শহর মেডেয়িন। যা অলীক স্বপ্ন দেখায়, আবার নির্মমভাবে হত্যা করে সে স্বপ্ন কে। যেমন পাবলোর হাত ধরে কলম্বিয়া স্বপ্ন দেখছিল বিশ্ব রাজ করার, তেমনি শাপোকোয়েন্সও স্বপ্ন দেখছিল মহাদেশে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের। কিন্তু, মেডেয়িনের অভিশাপে সব স্বপ্নের মৃত্যুই ঘটেছে মর্মান্তিকভাবে।

তাই মেডেয়িনকে ফুটবলের জন্য অভিশপ্ত এক শহর বলাই যায়।