সবকিছু থেমে যাওয়া কোনো সময়
অন্যদিকে মন দেই আমি এবার।
সম্মুখের রাস্তাটায় অলস ভঙ্গিতে এগিয়ে চলা দৃশ্যগুলি আমার মন কেঁড়ে নেয়।
দেখতে পাই অদূরবর্তী খেলার মাঠে দুটি কিশোরকে,
দেখতে পাই সাইকেল নিয়ে উদাস ভঙ্গিতে এগিয়ে চলা যুবকটিকে,
ওই তো এগিয়ে চলেছে শিশুকোলে এক রমণী,
সবাই চলছে অলস ভঙ্গিতে, ধীর পায়ে।
দিন শেষের রোদ এসে পড়ে আমার পশ্চিমের বারান্দায়।
উষ্ণতা ছোঁয়ার নেশায় আমি বসি সেখানে গিয়ে।
দেখতে চাই বিশাল সূর্যটার দিকে শেষবারের মত আজ।
চুল এলিয়ে বসি আমি।
আমার আধভেজা চুলে সূর্যের উষ্ণতা বাসা বাঁধতে চায়।
যেন সে আমার নিরব সূর্যাপসনার উপহার দিয়ে যায়,
দিয়ে যেতে চায় তার এক টুকরো উষ্ণতা।
আচ্ছা দিনের প্রতিটি সময়ের কি তবে নিজস্ব চরিত্র থাকে?
দিনশেষের এই সময়টা কি তবে আলসের?
আমার বারান্দার গ্রিল বেয়ে চলা লাল পিঁপড়ে গুলির কথাই ধরা যাক।
এগিয়ে চলেছে সারি সারি । চরম আলসে ।
কিংবা ধরা যাক সম্মুখের কৃষ্ণচূড়ার ডালে বসা কাকটির কথা,
সেও কেমন অলস ভঙ্গিতেই কি ডাকছেনা?
আচ্ছা দিনের প্রতিটি সময়ের কি কোন নাম থাকে?
যদি থাকে, তবে এটাকি “সবকিছু থেমে যাওয়া কোনো সময়?”
কেউ কি তোমায় আমার মত ভালোবাসে
শেষ দেখা হয়েছিল আমার শহর ছাড়ার দিনটিতে।
কাঁচঘেরা রেস্টুরেন্টে বসে হল কিছুটা কুশল বিনিময়,
জীবন বদলে যাওয়ার গল্প,
তোমার নতুন প্রেমিকা, আমার প্রেমিকের গল্প।
তারপর নীরবতা।
তোমার প্রিয় ক্যাসিওনাট স্যালাড, আর আমার ক্লিয়ার স্যুপ হাতে
যেন ব্যাস্ত হতে চাইলাম দু’জন-
সময়টা এতই দীর্ঘ মনে হল আজ।
অথচ একদিন… রাতের পর দিন আসত, কথা ফুরোতনা!
বড় রাস্তাটা পার হয়ে মুহাম্মাদ আলি রোডে পৌঁছে,
এল বিদায়ের পালা।
তোমার দেবতার মত সুন্দর মুখটাতে আঁকলে হাসি।
সবকিছু যেন ঠিক আমাদের প্রথম দেখা হওয়া দিনটির মত-
কত সুখের সম্ভাবনা আছে প্রতীক্ষা করার!
ঝাপসা চোখে দেখলাম তোমার চলে যাওয়া।
এতগুলির মাসের এত জমানো প্রশ্ন, কিছুই করা হলনা।
জানতে চাইতে পারলাম না কেমন আছ তুমি।
আচ্ছা, তুমি কি তাকে ভালোবাস?
তুমি কি তাকে আমার গল্প করো? যেমন আমাকে একদিন করতে তোমার মৃত সেই প্রেমিকার গল্প? নাকি বেঁচে আছি বলে গল্প হওয়ার আজও যোগ্য নই?
তোমার ন’তালার বারান্দাটি সেও কি ভালোবাসে আমার মত?
তুমি কি তার জন্যও চা করও নিজ হাতে?
নেভালের ছোট্ট পেঁয়াজুগুলি, অভয়মিত্র ঘাটের সন্ধ্যার জাহাজের আলো আজো কি টানে তোমায়?
ভাটিয়ারীর সবুজ ঘাসে শুয়ে সে বুঝি তোমায় ঘুম পাড়ানির গান শোনায়?
সন্ধ্যার শহরে মুখ ডোবাও তুমি কার চুলে??
কে মমতার ঠোঁট ছোয়ায় তোমার বাঁ হাতের ভাঙ্গা আঙ্গুলটিতে?
কিংবা শহরের প্রথম বৃষ্টি? দুপুর রাতে কে ঘুম ভেঙ্গে দেয় তোমায় ভেজার আমন্ত্রণ?
এইসবই জানতে ইচ্ছে করে খুব আমার!
খুব জানতে ইচ্ছে করে, কেউ কি তোমায় আমার মত ভালোবাসে??
আমরা দূরে সরে যাই ক্রমশ
অ্যালার্মের শব্দে ঘুম ভাঙে আমার
মোবাইল হাতড়ে সময় দেখি, দেখি কে খুঁজছিল ঘুমন্ত আমায়।
নাহ, খোঁজনি তুমি, নিশ্চিত হই।
মোবাইলের ওই এক টুকরো আলো নিভিয়ে আমি পাশ ফিরে শুই। অন্ধকার ঘর।
ব্যাথা হয় খুব, বুকের কোথায় যেন।
রাত নেমেছে সদ্য, পাশের হাইওয়েতে বাড়ি ফেরা গাড়ির আনাগোনা,
এত শব্দ কিছুই ছোঁয়না আমাকে, আমি আমার মাঝে হারাই।
আজ ঘুমের মাঝে স্বপ্নে দেখা তোমাকে বাস্তবে এনে ছুঁয়ে দেখতে চাই।
কয়েক মুহূর্ত … হঠাৎ সম্বিত ফিরে পাই আমি,
বিছানা ছাড়ি দ্রুত, বাতিগুলি জ্বালিয়ে দেই।
কেন দু’টি মাত্র বাতি আমার ঘরে তাই বিরক্ত হই আজ প্রথম।
আলো চাই আমার, তীব্র আলো— ঝলসানো আলো।
যে আলো আমার নম্র, মাতাল অনুভুতিগুলি পুড়িয়ে নিথর করে দেবে, সেই আলো।
ব্যস্ত হয়ে যাই, ব্যস্ত হতে চাই হাজারটা বানানো কাজের বাহানায়।
ফাঁকি দিতে চাই আমার তুমিময় ভাবনাগুলিকে।
অস্বীকার করতে চাই বসন্ত বাতাসের আনাগোনা।
নিজেকে কষ্ট দেই আনন্দের খোলসে।
এরপর আসে কিছু বেয়াড়া মুহূর্ত ।
এরা অভিযোগ করে তোমাকে, তোমার অপারগতাকে, আমাকে , আমার অপরাগতাকে।
আমি কঠিন হই ওদের সাথে।
আমি জানি তুমি অপারগ, কিন্তু আমি জানি তুমি কতোটা ঠিক।
আমি জানি মিথ্যে বাহানা দেবার পুরুষ তুমি নও!
আমি কঠিন হই সেই অনুভূতিগুলির সাথে যে অনুভূতি আমায় ভাসিয়ে নিতে চায় তুমিময়তায়!
কেননা আমি জানি, আমিতো জন্ম নিরুপায়!
তুমি আর আমি।
আমাদের আর আমরা হওয়া হয়না। এটা ঠিক, এটাই সত্য।
তাই ব্যস্ততার ভান করি প্রতিদিন।
আর এভাবেই তুমি আর আমি দূরে সরে যাই ক্রমশ!