সদ্য বিবাহিত বলিউড তারকা প্রিয়াঙ্কা চোপড়াকে একজন জটিল নারীবাদী বলে মন্তব্য করেছেন জনপ্রিয় কলামিস্ট রাফিয়া যাকারিয়া। সংবাদমাধ্যম সিএনএন’র এক কলামে তিনি এ মন্তব্য করেন। লেখাটিতে তিনি প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার নানা ঘটনা উল্লেখ করে মন্তব্যটির সত্যতা প্রমাণ করেন।
তিনি উল্লেখ করেন, গত অক্টোবর মাসে এক সাক্ষাৎকারে নারীবাদ কি এমন প্রশ্নে প্রিয়াঙ্কা চোপড়া বলেন “নারীবাদ হচ্ছে আমাকে আমার সিদ্ধান্তগুলোর জন্য বিচার না করা এবং আমাকে সুযোগ দেয়া ঠিক যেভাবে শত বছর ধরে ছেলেরা সুযোগ পেয়ে আসছে।”
তিনি বলিউড থেকে মাতিয়েছেন হলিউড। তার তারকাখ্যাতি এবং পেশাদারিত্ব দেখে তাকে ‘ক্যারিয়ারিস্ট’ বলা যেতেই পারে। আর এর কারণেই তাকে নানা সময় নারীবাদ নিয়ে কথা বলতে শোনা যায়।
তিনি শক্তিশালী একজন অভিনেত্রী তাতে কারোর কোন সন্দেহ নাই। তবে তার মধ্যেও আছে অসঙ্গতি এবং জটিলতা যেকোন পেশাদার মহিলার যেমনটা থাকে। তিনি খুব শক্তভাবেই নারীবাদকে সমর্থন করেন তবে যতটুকু তার ক্যারিয়ারের জন্য প্রয়োজন ঠিক ততটুকুই। তিনি যখন কাজের জন্য হলিউড গিয়েছিলেন তখন নারী হিসেবে তিনি নানা বৈষ্যম্যের শিকার হন তবে তিনি সেটাকে বৈষম্য বলতে নারাজ। তার মতে সেগুলো বৈষম্য ছিল না ছিল বৈচিত্র! আবার এই প্রিয়াঙ্কা চোপড়াকেই দেখা যায় ধর্মনিরপেক্ষ ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাওয়া হিন্দু ন্যাশনালিস্ট পার্টির নৈশ ভোজ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকছেন যারা নারীদের ন্যূনতম সন্মানও দেয় না।
তার এই চারিত্রিক বিভাজনটা আবার দেখা গিয়েছে তার বিয়ের অনুষ্ঠানে। ৫০টিরও বেশি সিনেমাতে, একটি হলিউড সিরিজে অভিনয় করা এই অভিনেত্রীর বিয়ে হয় হলিউডের গায়ক ও সাবেক কিশোর ব্যান্ড তারকা নিক জোনাসের সাথে। বিরাট জাঁকজমক পূর্ণ অনুষ্ঠানে প্রায় পাঁচ দিন ধরে চলে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। রাজস্থানের জয়পুরে রাজপ্রাসাদে হয় এই বিবাহ অনুষ্ঠান।
অনেক নারীবাদীর কাছেই প্রিয়াঙ্কার বিয়েটা ছিল স্বপ্নের মত। তারা মনে করেছিল এই বিয়েতে নারীদের নতুন কোন প্রথা উম্মোচিত হতে পারে। তবে তার বিয়েও সম্পুর্ণ ভারতীয় জাতীয়তাবাদী নিয়মানুসারেই হয়েছে। যেখানে বিয়ে মানেই নারীর জীবন অন্য একটি পুরুষের কাছে সোপার্দ মাত্র!
এদিকে নারীদের অধিকার নিয়ে কাজকরা অনেকেই মনে করেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়াই প্রথম ভারতীয় নারী যিনি হলিউডে গিয়ে নিজের অবস্থান তৈরি করেছেন। তবে গিয়েই এভাবে প্রেমের জালে জড়িয়ে যাওয়া এবং পরবর্তীতে ভারতীয় নিয়মানুসারে বিয়ে করে তিনি নিজেকে নিজে ধ্বংস করেছেন।
এদিকে জোনাস ও প্রিয়াঙ্কার বিয়েই না শুধু তাদের প্রেমের জীবন নিয়েও ক্ষেপেছেন পশ্চিমা আধুনিক নারীবাদীরা। এই প্রেমের মাধ্যমে তার মত মুক্ত একজন নারী তার অধিকার এবং স্বাধীনতা হারাচ্ছে বলেই দাবি করছেন তারা। তাদের মতে প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার আরো স্বাধীন নারী হিসেবে চলচ্চিত্র এবং অভিনয় শিল্পে নিজের অস্তিত্ব ধরে রাখা দরকার ছিল। তার মুখে নারীবাদ এবং কর্মে ঠিক উলটো হওয়ার জন্যই অনেকেই তাকে মেকি এবং জটিল নারীবাদী বলেই মনে করছে যে কিনা শুধুই নিজের ক্যারিয়ারের কথা ভেবে এতদিন নারীবাদকে প্রাধান্য দিয়ে এসেছে।