স্বামী বিবেকানন্দ বিলেত থেকে ভারতে ফেরার চার দিন পর এক মধ্যাহ্নে নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে গিয়েছেন প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি। প্রত্যাশিতভাবে বহু ভক্ত, শুভার্থী হাজির সেখানে। মানুষের আধিক্যে সকলের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন না স্বামীজি। ক্রমশ ভিড় কমার পর স্বামীজির নিকট হাজির হলেন গোরক্ষিণী সভার এক উদ্যোগী প্রচারক। বেশভূষা সন্ন্যাসীর ন্যায়, মাথায় গেরুয়া পাগড়ি। প্রচারক অভিবাদন করার পর একখানা গোমাতার ছবি উপহার দিলেন স্বামীজিকে। পাশের ব্যক্তির হাতে ছবিটি ধরিয়ে স্বামীজি তাঁর সঙ্গে কথা বললেন কিছুক্ষণ।
-আপনাদের সভার উদ্দেশ্য কী?
-আমরা দেশের গোমাতাগণকে কসাইয়ের হাত থেকে রক্ষা করে থাকি। স্থানে-স্থানে পিঁজরাপোল বানিয়েছি; সেখানে রুগ্ণ, অকর্মণ্য এবং কসাইয়ের থেকে কেনা গোমাতাগণ প্রতিপালিত হন!
-উত্তম কথা! আপনাদের আয়ের পন্থা কী?
-দয়াপরবশ হয়ে আপনাদের মতো মহাপুরুষের প্রদেয় অর্থসাহায্যে সভার কাজ নির্বাহ হয়।
-আপনাদের কত টাকা গচ্ছিত আছে?
-মারোয়াড়ি বণিক সম্প্রদায় আমাদের বিশেষ পৃষ্ঠপোষক। তারা বহু অর্থ দান করেছেন।
-মধ্য ভারতে এবার ভয়ঙ্কর দুর্ভিক্ষ হয়েছে। ভারত সরকার দুর্ভিক্ষে মৃত প্রায় নয় লক্ষ মানুষের তালিকা প্রকাশ করেছে। তাঁদের সাহায্যের কোনও আয়োজন করেছে আপনাদের সভা?
-আমরা দুর্ভিক্ষে সাহায্য করি না। কেবল গোমাতাগণের রক্ষাকল্পে এই সভা স্থাপিত।
-দুর্ভিক্ষে আপনাদের লক্ষ লক্ষ জাতভাই মৃত্যুমুখে পতিত হল; সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও আপনারা তাঁদের সাহায্য করা উচিত মনে করেননি?
-না। লোকের কর্মফলে, পাপে এই দুর্ভিক্ষ হয়েছে। যেমন কর্ম, তেমন ফল।
-যে-সভা মানুষের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে না; অনশনে নিজের ভাই মরছে দেখেও তাঁর প্রাণরক্ষার জন্য একমুষ্টি অন্ন তার মুখে তুলে না-দিয়ে রাশি-রাশি টাকা পশুপাখি রক্ষায় বিতরণ করে; তাঁদের প্রতি আমার কোনও সহানুভূতি নেই। কর্মফলে মানুষ মরছে- এই দোহাই দিলে জগতে কোনও বিষয়ের চেষ্টা করাটাই তো বিফল সাব্যস্ত হয়। তাহলে তো বলা যেতে পারে, গোমাতাগণ নিজ কর্মফলে কসাইয়ের হাতে যাচ্ছেন এবং মরছেন, আমাদের কিছু করার নেই।
– আপনি যা বলছেন তা সত্য। কিন্তু, শাস্ত্র বলে- গোরু আমাদের মাতা!
-(হাসতে-হাসতে) গোরু আমাদের মাতা, তা আমি বিলক্ষণ বুঝেছি। নইলে এমন সব কৃতি সন্তান আর কে প্রসব করবেন!
সূত্র: স্বামী-শিষ্য সংবাদ