মানসিক স্বৈরচারগিরিই লেখকদের (কালো) মহান হয়ে ওঠার অন্তরায়

বেন ওকরি’র প্রবন্ধ

মানসিক স্বৈরচারগিরিই লেখকদের (কালো) মহান হয়ে ওঠার অন্তরায়

বেন ওকরি, নাইজেরিয়াতে জন্ম নিয়েছেন ১৯৫৯ সালে। লন্ডনে থাকেন। ১৯৯১ সালে পেয়েছেন বুকার। তিনি একই সাথে কবি, ঔপন্যাসিক ও চিন্তাশীল প্রবন্ধের লেখক। তাঁর প্রবন্ধ কাব্যিক সুর ও নতুন ভাবনার দুয়ার উম্মোচনের জন্য বিখ্যাত। তিনি মূলত উত্তারধুনিক ও উত্তর-ঔপনিবেশিক ঐতিহ্যের শক্তিশালী লেখক হিসেবে সারা দুনিয়াতেই ব্যাপক পরিচিত। এই প্রথম বাংলাতে তার কোন প্রবন্ধ অনুবাদ হল। এখানে বেন ওকরি আফ্রিকার কালো লেখকদের মানসিক যে দৈন্যতার কথা বলেছেন তা বাংলাদেশের লেখকদের বেলায়ও সমান সত্যি। আমরা যদি কালো লেখকদের জায়গায় বাংলাদেশের লেখক (ব্যাতিক্রমবাদে) বসিয়ে পাঠ করি মনে হবে এ যেন আমাদের  লেখকদের মানসিক স্বৈরাচারগিরিই নিপুণ উপস্থাপন। আমাদের এখানেও চিন্তার স্বাধীনতার চেয়ে লেখকের বিষয় ভাবনাকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। যা মূলত একটা কলোনিয়াল মানসিকতা। কোন লেখক প্রান্তিক ও তার জনগোষ্ঠীর সমস্যা নিয়ে লিখলেই যেন সমাদৃত হবেন তা ছাড়া সাহিত্যের মৌলিক সত্য খোঁজা চেষ্টা, নান্দনিক মাস্টারি, চিন্তার গভীরতা এইসব তোলা থাকে পশ্চিমা লেখকদের জন্য।  অন্য ভূগোলের লেখকদের লেখায় এইসবকে গৌণ বিষয় হিসেবে দেখা হয় পশ্চিমা দুনিয়ায়। এই এনজিও দৃষ্টি ভঙ্গির সহজ শিকার আফ্রিকা ও এশিয়ার লেখকরা। তারা কেবল উপরিতলের বাস্তবতার ভিতর আটকে থাকে বিষয় নির্বাচনের লোভে। সূক্ষ ও মহতমত কোন অনুসন্ধান তাদের চিন্তার মধ্যেই স্থান পায় না। এই গুরুত্বপূর্ণ লেখাটি ২০১৪ সালে সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানে প্রকাশিত হয় । জবানের জন্য অনুবাদ করেছেন, উম্মে সালমা।


যখন এই যুগের লেখকদের দিকে আমরা তাকাই সহজেই বুঝতে পারি, একটা কঠিন সময়ে আমরা বসবাস করছি। সবচেয়ে প্রয়োজনীয় জিনিস হলো স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতা ছাড়া একটি রাষ্ট্রের জনগণ মহৎ বা পরিপূর্ণ হতে পারে না। এটি ব্যতিত সাহিত্যও বিখ্যাত হতে পারে না। সাহিত্যের পূর্বশর্ত হলো স্বাধীনতা। এবং প্রথম স্বাধীনতা হলো মানসিক স্বাধীনতা। এই পৃথিবীতে স্বাধীন থাকা আর পরাধীন থাকা দুটোই মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপার। সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য দিক হলো স্বাধীনতার শক্তি যা যুগ যুগ ধরে প্রবাহিত হয়ে আসছে।

এই স্বাধীনতা ছাড়া একটি রাষ্ট্রের জনগণ মহৎ বা পরিপূর্ণ হতে পারে না। এটি ব্যতিত সাহিত্যও বিখ্যাত হতে পারে না। সাহিত্যের পূর্বশর্ত হলো স্বাধীনতা। এবং প্রথম স্বাধীনতা হলো মানসিক স্বাধীনতা। এই পৃথিবীতে স্বাধীন থাকা আর পরাধীন থাকা দুটোই মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপার। সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য দিক হলো স্বাধীনতার শক্তি যা যুগ যুগ ধরে প্রবাহিত হয়ে আসছে।

 

এখনো কালো এবং আফ্রিকান লেখকদের প্রতি অন্যদের চিন্তাভাবনায় যথেষ্ঠ অসংগতি লক্ষ্য করা যায়। তাদের বিষয়বস্তুর জন্য তাদের কর্মগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হয়। আমরা ফ্লাবার্ট পড়ি সৌন্দর্যের জন্য, জয়েসি পড়ি নতুনত্বের জন্য, ভার্জিনিয়া উল্ফ পড়ি তার কাব্যের জন্য, জেন অস্টেন পড়ি তার মনস্তত্ত্বের জন্য। কিন্তু কালো এবং আফ্রিকান লেখকদের পড়া হয় মূলত তাদের উপন্যাসের জন্য যেখানে দাসত্ব, উপনিবেশিকতা, দারিদ্র্য, গৃহযুদ্ধ, বন্দিদশা, নারী খৎনা— এই ধরনের বিষয়গুলো থাকে। আর এ বিষয়গুলোকে আফ্রিকা এবং কালো লোকদের সমস্যা হিসেবেই দেখে থাকে পুরো বিশ্ব। তাদের বিষয়বস্তু দ্বারা তাদের সংজ্ঞায়িত করা হয়।

কালো এবং আফ্রিকান লেখকেরা নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু নিয়ে লিখবে এমনটাই প্রত্যাশা করা হয়। এবং তারা যদি সেটা না করে তাদের লেখাকে অপ্রাসঙ্গিক ভাবা হয়। আর এটি মূলত তাদের সাহিত্যকে ভারী করে তোলে। তবে শেষ পর্যন্ত এটি একঘেয়েমিতায় ভোগায়। কে চায় অনবরত দুঃখ-কষ্ট ভারাক্রান্তের গল্প পড়তে? পশ্চিমাবিশ্বে যাদের এসব দুঃখ-কষ্ট, নির্যাতন স্পর্শ করে না, তারা এ ধরনের সাহিত্যে চিত্তাকর্ষক এবং চটকদার যৌনতা খোঁজে। কিন্তু নির্যাতনের এই বিষয়বস্তু যথেষ্ঠ বিকৃত এবং সীমাবদ্ধতার ক্ষেত্র রচনা করে।

একটি অদ্ভূত সত্য ব্যাপার হলো সর্বশ্রেষ্ঠ ছোট গল্পগুলোর পুরো অংশ জুড়ে মহৎ অথবা গুরুগম্ভীর কোনো বিষয়বস্তু থাকে না। আমি বুঝাতে চাচ্ছি বিখ্যাত গল্পের জন্য বিষয়বস্তুকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবা হয় না। বরং এই গল্পগুলোতে তাৎপর্যপূর্ণ কোন কিছুকে সরাসরি উপস্থাপন করা হয় না। এখানে প্রতীয়মান বিষয়টি তুচ্ছ সামান্য মনে হতে পারে; কিন্তু শিল্পের পরোক্ষ আয়নায় প্রতিফলিত হয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং অবিস্মরণীয় স্থান করে নেয় সাহিত্যের জগতে। গল্পে যে বিষয়ের আধিক্য বেশি থাকে সেটি অনেক বেশি সুস্পষ্টতা ফুটিয়ে তোলে। এর ফলে মানসপটে ব্যাখ্যার অথবা কল্পনা করার কোনো অবকাশ থাকে না। বিখ্যাত সাহিত্যের বিষয়বস্তু প্রায় সবসময় পরোক্ষ থাকে।

 

একটি অদ্ভূত সত্য ব্যাপার হলো সর্বশ্রেষ্ঠ ছোট গল্পগুলোর পুরো অংশ জুড়ে মহৎ অথবা গুরুগম্ভীর কোনো বিষয়বস্তু থাকে না। আমি বুঝাতে চাচ্ছি বিখ্যাত গল্পের জন্য বিষয়বস্তুকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবা হয় না। বরং এই গল্পগুলোতে তাৎপর্যপূর্ণ কোন কিছুকে সরাসরি উপস্থাপন করা হয় না। এখানে প্রতীয়মান বিষয়টি তুচ্ছ সামান্য মনে হতে পারে; কিন্তু শিল্পের পরোক্ষ আয়নায় প্রতিফলিত হয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং অবিস্মরণীয় স্থান করে নেয় সাহিত্যের জগতে। গল্পে যে বিষয়ের আধিক্য বেশি থাকে সেটি অনেক বেশি সুস্পষ্টতা ফুটিয়ে তোলে। এর ফলে মানসপটে ব্যাখ্যার অথবা কল্পনা করার কোনো অবকাশ থাকে না। বিখ্যাত সাহিত্যের বিষয়বস্তু প্রায় সবসময় পরোক্ষ থাকে।

জেমস জয়েসে’র ‘দ্যা ডেড’ মূলত একটি পার্টিকে ঘিরে রচিত যেটি এক শীতের রাতে ডাবলিন শহরের একটি পরিবারে অনুষ্ঠিত হয়। সেই পার্টিতে লোকজন কথা বলে, মিউজিক বাজতে থাকে এবং একজন মহিলা একজন তরুণের কথা স্মরণ করে যে বহু বছর আগে তার বিরহে মৃত্যুবরণ করে। আইরিশদের দুর্ভিক্ষ, আইরিশ জাতীয়তাবাদ অথবা সম্ভাব্য কোনো বিষয় এখানে বিষয়বস্তু নয়। মূল বিষয় হলো স্মৃতি, মিউজিক অথবা আয়ারল্যান্ডে তুষারপাত। গল্পের তাৎপর্য হলো মানব হৃদয়ের পরোক্ষ প্রকাশ, এবং হৃদয়ভঙ্গের কোনো গল্প, ছলাকলার কাহিনী এবং কোনো সুদৃশ্য সংক্ষেপে বর্ণনা করা। যদি তিনি আইরিশদের দুর্ভিক্ষ নিয়ে লিখতেন তাহলে তিনি আমাদেরকে ‘দ্য ডেড’র মতো কালোত্তীর্ণ একটি লেখা উপহার দিতে পারতেন না।

আমাদের সময়ে আমরা বিষয়বস্তুর প্রতি অন্ধ হয়ে আছি কেননা আমরা শিল্পের সত্যিকারের তাৎপর্য হারিয়ে ফেলেছি। যদি একটি উপন্যাস দাস ব্যবস্থা নিয়ে রচিত হয়, আমরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে মনে করি এই বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। একজন ছোকরা যে কি না অত্যধিক পাম ওয়াইন পান করে তার থেকেও অত্যাধিক গুরুত্বপূর্ণ। কালো এবং আফ্রিকান ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে থাকা বিয়োগান্তর ( tragedies), অবিচার এবং নিরন্তর সংগ্রামের ঘটনাগুলো প্রকাশ করার জন্য আফ্রিকান লেখকদের মুখপাত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আর এটি অন্যান্য সাহিত্যের তুলনায় এই আফ্রিকান সাহিত্যকে অনেক বেশি কমিটেড বা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ করে তোলে। এই কারণে হয়তো এই সাহিত্য কম বৈচিত্র্যপূর্ণ, কম উপভোগ্য এবং স্বাভাবিকভাবে কম টেকসই।

রহস্যের বিষয় হলো ইতালি, বোর্জিয়াতে কালো মৃত্যু, নিপীড়ন দীর্ঘস্থায়ী চিহ্ন হিসেবে রেখে গেছে মোনালিসা, দ্য স্কুল অব এথেন্স, দ্য সিসটিন চ্যাপল, জর্জিয়ান’স টেম্পেস্টা, দ্য ডিভিনা কমেডিয়া, দ্য ডেকামেরন। এই শিল্পকর্মগুলো তাদের সৌন্দর্য, অবিরত সার্বজনীন আবেদন এবং প্রতিপত্তির জন্য বিখ্যাত। তারা তাদের সৌন্দর্য দ্বারাই আমাদের প্রভাবিত করে। তাদের ইতিহাসের এই ঘৃণ্য বিষয়গুলো এই শিল্পকর্মে দৃশ্যমান হয় না।

আপনি শেক্সপিয়রের লেখা থেকে সাধারণ মানুষের কঠিন জীবনযাপন সম্পর্কে ধারণাও করতে পারবেন না। তার নাটকগুলোতে আপনি কোথাও জানতে পারবেন না যে তার সময়ে লোকজন তাদের শৌচাগারের বালতিসমূহ জানালার বাইরে খালি করে রাখতো এবং স্ট্রাটফোর্ড— আপন—এভন’র স্ট্রিটগুলো দুর্গন্ধে ভরে উঠতো। তার সৃষ্টিকর্মগুলো স্থায়িত্ব লাভ করেছে। এই সাহিত্য অনবরত মানবাত্মাকে উদ্ভাসিত করে এবং মানব জগতের মহত্ত্ব এবং অদ্ভুতুড়ে বিষয়গুলো সম্পর্কে আমাদের সজাগ করে।

এখানে ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হলো Cervantes দাসত্ব সম্পর্কে জানতেন, মুরদের নির্বাসন সম্পর্কে জানতেন। তিনি লেপান্টের যুদ্ধে তার হাত হারিয়েছিলেন। তিনি স্পেনের নিষ্ঠুর ইতিহাস সম্পর্কে অজ্ঞাত ছিলেন না। তারপরেও তিনি Don Quixote এর তুলনায় আমাদের মানসপটে খুব বেশি দীর্ঘস্থায়ী ছাপ ফেলতে পারেন নি। Don Quixote এই উপন্যাসটি একজন মানুষকে ঘিরে যিনি অ্যাডভেঞ্চারের জীবন বেছে নেন।

কালোত্তীর্ণ লেখাগুলোতে বিষয় সবসময়ই কম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। মাঝে মাঝে একটি গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যে একটি সার্থক বিষয় থাকে। তবে এটি সাধারণত বিষয়ের তুলনায় শিল্প যা সাহিত্যকে পর্যায়ক্রমে প্রাসঙ্গিক করে তোলে আমাদের জীবনে। যদি বিষয়ই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হতো তাহলে আমাদের শিল্পের দরকার হতো না; সাহিত্যেরও দরকার হতো না। ইতিহাসই যথেষ্ঠ ছিল। আমরা সাহিত্যের কাছেই ফিরে যাই যা নির্দিষ্ট কাল এবং কালের উর্ধ্বে গিয়েও কথা বলে।

 

হোমার একজন মানুষের অসন্তুষ্টি চিত্রায়নের মধ্য দিয়ে ট্রয় নগরীর পতনের কাহিনী বলেছেন। সফোক্লিস একজন রাজার নিন্দনীয় কর্মকাণ্ডের ইতিহাস বলেছেন। তারা গ্রিক ইতিহাসের ভয়ংকর ঘটনার গল্প বলেন নি। তলস্তয়ের ‘ওয়ার এন্ড পিস’এ একটি মহৎ বিষয়বস্তু আছে। তবে এটি তার অন্তর্দৃষ্টি এবং তার লেখনী এই বিষয়বস্তুকে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা দিয়েছে। পুশকিন রাশিয়ার ভয়ানক এবং অসাধারণ ইতিহাসে মগ্ন থাকতেন। তিনি বয়ারের উৎপীড়ন সম্পর্কে জানতেন। ইভান দ্য টেরিবলের দীর্ঘ ছায়া, কৃষকগোষ্ঠীর মানবেতর জীবনযাপন সম্পর্কে জানতেন। তিনি নির্বাসন সম্পর্কেও অবগত ছিলেন। তারপরেও তার বিখ্যাত Eugene Onegin যাকে রাশিয়ান সাহিত্যের উৎস বলে বিবেচনা করা হয়, রচিত হয়েছে নির্লিপ্ত অভিজাতবর্গদের নিয়ে এবং তার ছোট গল্প The Queen of Spades, অন্যতম সর্বশ্রেষ্ঠ ছোট গল্প; সেটিরও মূল বিষয় ছিল জুয়া খেলা।

বিখ্যাত সাহিত্যে কদাচিৎ একটি বিষয় থাকে। যা মূলত মূল বিষয়ের উর্ধ্বে। কালোত্তীর্ণ লেখাগুলোতে বিষয় সবসময়ই কম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। মাঝে মাঝে একটি গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যে একটি সার্থক বিষয় থাকে। তবে এটি সাধারণত বিষয়ের তুলনায় শিল্প যা সাহিত্যকে পর্যায়ক্রমে প্রাসঙ্গিক করে তোলে আমাদের জীবনে। যদি বিষয়ই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হতো তাহলে আমাদের শিল্পের দরকার হতো না; সাহিত্যেরও দরকার হতো না। ইতিহাসই যথেষ্ঠ ছিল। আমরা সাহিত্যের কাছেই ফিরে যাই যা নির্দিষ্ট কাল এবং কালের উর্ধ্বে গিয়েও কথা বলে।

এখনই সময় কালো এবং আফ্রিকান লেখকদের বিষয়বস্তুর প্রতি সম্মোহন থেকে বের হয়ে আসা। এই বিষয়বস্তুর কারণে তারা যা অর্জন করে তা হলো খুব সংক্ষিপ্ত সফলতা এবং খ্যাতির সামান্য সুবাতাস। তারপর সময়ের সাথে সাথে তাদের এই সৃষ্টকর্মগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। তবে অন্যান্য সৃষ্টকর্মগুলো যেগুলোর বিষয়বস্তু less sensational বা কম উত্তেজনাপূর্ণ; কিন্তু art বা শিল্প অনেক বেশি আকর্ষণীয়, সেই কর্মগুলোই যুগের সাথে টিকে থাকে এবং অবিরাম পাঠকদের প্রশংসা লাভ করে।

প্রথম স্বাধীনতা হলো মানসিক স্বাধীনতা। আমাদের স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে হবে যা থাকা দরকার আমাদের। শিল্পের সকল গুপ্ত রহস্য এবং তেজ সম্পর্কে আমাদের লিখতে হবে। আমরা তাই লিখব যা আমরা চাই। আমাদের দায়িত্ব হলো লেখনীর দ্বারা মানব জীবনের অচেনা অলিগলিকে পাঠকের কাছে তুলে ধরা। এই জন্য মানসিক স্বৈরাচারগিরি ত্যাগ করতে হবে।

আমাদের বুদ্ধিমত্তা, আমাদের জ্ঞান, আমাদের স্বাধীনতার সূচক হলো সাহিত্য। আমরা অবশ্যই কি লিখব তা অন্য কাউকে নির্ধারণ করে দেয়ার সুযোগ করে দিতে পারি না। স্বৈরাচারী নিয়ম মানতে পারেন না একজন লেখক। আমরা সাহিত্যকে কৌতুকপূর্ণ অথবা গভীর অনুসন্ধান হিসেবেই দেখি। এরিস্টটল লিখেছেন, “সাহিত্যের লক্ষ্য হলো বাহ্যিক রূপের প্রকাশ নয়;বরং অন্তর্নিহিত তাৎপর্যের প্রতিনিধিত্ব করা।” বাহ্যিক প্রকাশ নয়, বরং অভ্যন্তরস্থ তাৎপর্য সঞ্চারিত হয় অন্তর্গত স্বাধীনতার সহজাত প্রতিভা থেকে।