বাবরি মসজিদের নিচে মন্দিরের অস্তিত্ব মেলেনি, এএসআই’র রিপোর্ট সাজানো ছিল

বাবরি মসজিদের নিচে মন্দিরের অস্তিত্ব মেলেনি, এএসআই’র রিপোর্ট সাজানো ছিল

বহুল আলোচিত বাবরি মসজিদের নিচে কোন প্রকার মন্দিরের আলামত পাওয়া যায়নি কলে জানিয়েছে গবেষকরা। ভারতের সরকারি নৃতাত্ত্বিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান আর্কিওলজিকাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া (এএসআই) ২০০৩ সালের আগস্ট মাসে, ছয় মাসের একটি গবেষণা প্রতিবেদন এলাহাবাদ হাইকোর্টে জমা দেয়। প্রতিবেদনে মোঘল আমলে নির্মিত ‘বাবরি মসজিদের’ নিচে মন্দিরের অস্তিত্ব মেলার কথা উল্লেখ করে তারা। মোঘল আমলে এই মসজিদটি ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর গুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল।

এদিকে ভারতের দুই প্রত্নতত্ত্ববিদ সুপ্রিয়া ভার্মা এবং জয়া মেনন এএসআই’র ওই রিপোর্টকে মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন। তাদের মতে প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় কোথাও বাবরি মসজিদের প্রতিষ্ঠার আগে সে জায়গায় কোন মন্দিরের অস্তিত্ব মেলেনি। উল্লেখ্য, সুপ্রিয়া ভার্মা ভারতের জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক এবং জয়া মেনন শিব নাদার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রধান। তাদের মতে এএসআই’র এমন উপসংহার পুরোই ভিত্তিহীন এবং পূর্বপরিকল্পিত। ২০১০ সালে ‘ইকনমিক অ্যান্ড পলিটিক্যাল উইকলি’ পত্রিকায় এক গবেষণাপত্রে তারা এএসআই’র এই প্রতিবেদনকে চ্যালেঞ্জ করেন বলে জানা যায়।

ভারতের সংবাদমাধ্যম হাফিংটন পোস্ট’র রাজনীতি বিষয়ক সম্পাদক বেতওয়া শর্মা তার প্রতিবেদনে সুপ্রিয়া ভার্মা এবং জয়া মেননের সাক্ষাৎকার এবং তাদের গবেষণার নানা অংশ তুলে ধরেন। সেই সাক্ষাৎকারে এএসআই কিসের ভিত্তিতে মন্দিরের প্রমাণ দিয়েছে জানতে চাইলে তারা সেই বিষয়েও খোলামেলা কথা বলেন। তারা জানিয়েছেন বাবরি মসজিদ প্রতিষ্ঠার আগে সেখানে অন্য একটি মসজিদের অস্তিত্ত্ব মিলেছে। সেই পুরনো মসজিদের পশ্চিম দিকের দেওয়ালের নামাজের স্থানকেই এএসআই এর গবেষকগণ মন্দির হিসেবে দাবি করেছে বলে জানা যায়। দ্বিতীয়ত তারা ৫০টি স্থাপত্যাংশের কথা উল্লেখ করেছে এবং মন্দিরের অংশ বলে দাবিও করেছে। তবে সুপ্রিয়া এবং জয়ার মতে সেগুলোও পুরনো মসজিদেরই অংশ বলে উলটো দাবি করেছেন। তারা আরো বলেন, বেশ কয়েকবারই তারা কোর্টে এ বিষয়ে অভিযোগ করেছেন কিন্তু আশানুরূপ ফল পায়নি। তাদের মতে এএসআই’র প্রতিবেদন সম্পুর্ণ সাজানো। এএসআই তাদের প্রতিবেদনে যে মন্দিরের কথা উল্লেখ করেছে সেই মন্দিরের কোন সময় কালের কথা তাদের প্রতিবেদনে আছে কি না জানতে চাইলে তারা জানান এএসআই কোন সময় কালের কথা উল্লেখ করেনি। তবে তাদের মতে বাবরি মসজিদের পূর্বে যে মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত ছিল সেটা দ্বাদশ শতক থেকে পনেরো শতক সময়কালের মধ্যে স্থাপিত ছিল বলে জানা যায়।

এদিকে ভারতের অনেকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকই মনে করছেন এএসআই’র এমন প্রতিবেদন ছিলো স্রেফ দাঙ্গার আগুনে ঘি ঢেলে ধর্মান্ধ হিন্দুদের উদ্দেশ্যকে প্রতিষ্ঠিত করা।