জাতীয় পার্টিতে অস্তিত্ব সংকট, আর্তনাদ এরশাদের

জাতীয় পার্টিতে অস্তিত্ব সংকট, আর্তনাদ এরশাদের

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে জাতীয় পার্টি। ২০১৪ সালে সাজানো নির্বাচনে জাতীয় পার্টি সংসদের বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করে। সে সময় তাদের মাঠে রাজনীতির প্রয়োজন হয়নি। কিন্তু এখন জাতীয় নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যোগ দেয়ায় তাকে হতে হচ্ছে মহাজোটের শরীক। কিন্তু জনপ্রিয়তা হারানোয় আওয়ামী লীগও তাদের আসন ছাড়তে তালবাহানা করছে। এমন অবস্থায় মধ্যে দলটির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কণ্ঠে শোনা গেল আর্তনাদ। আজ বৃহস্পতিবার হঠাৎ বনানী কার্যালয়ের সামনে গাড়িতে বসে তিনি বলেন, ২৭ বছর ধরে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছি, পার্টি ছাড়ি নাই। সব নির্ভর করে তোমাদের ওপর। কেউ পার্টি ছেড়ে যেও না, আমাকে প্রতিশ্রুতি দাও।

নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারের বিরুদ্ধে ওঠে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ। রুহুল আমিন হাওলাদার ব্যর্থও হন আওয়ামী লীগের সাথে দরকষাকষিতে। মনোনয়ন নিশ্চিত করতে পারেন নি হেভিওয়েট প্রার্থী ও গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের। যার ফলে জাতীয় পার্টি থেকে পদত্যাগের ঘটনা ঘটতে থাকে। মহাসচিবের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয় রুহুল আমিন হাওলাদার।

১৯৯১ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত চারটি নির্বাচনে অংশ নেয় জাতীয় পার্টি। ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে যথাক্রমে ৩৫, ৩২ , ১৪ এবং ২৭ টি আসন পেলেও ভোটের সংখ্যা কমেছে। এ সময় তাদের প্রাপ্ত ভোটের হার ছিল যথাক্রমে ১১.৭৯%, ১৬.৩৯%, ৭.১৮% এবং ৬.৯৭%। ক্রমাগত জনপ্রিয়তা হ্রাস পাওয়ার পরেও দলটি ২০১৪ সালে সাজানো একটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে ৩৪টি আসন ভাগে পায়। এসময় তারা বিরোধী দলরূপে বিবেচিত হলে হয়তো ভেবেছিল, সামনেও এভাবে কেটে যাবে। তাই আওয়ামী লীগ তাদের রাজনৈতিক জনসংযোগ চালিয়ে গেলেও জাতীয় পার্টিকে মাঠে দেখা যায় নি। যার ফলে এখন তাদের আসন ছাড়তে এক রকম ভয়ই পাচ্ছে আওয়ামী লীগ।

২৮ বছর ধরে ক্ষমতায় না থাকা হয়তো তাদের জনপ্রিয়তা কমার কারণ কিন্তু দশম সংসদ নির্বাচনে এবং তার পরবর্তী সময়ে তাদের ভূমিকা মূলত তাদের রাজনৈতিক দল হিসেবে এগিয়ে যাওয়ার প্রধান অন্তরায় হিসেবে কাজ করেছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তারা অংশগ্রহণ না করলে হয়তো বাংলাদেশের রাজনীতি এবং গ্রহণযোগ্যতা অন্যরকম হতে পারতো। জাতীয় পার্টির সংকট এখন পরিস্কার । দেখার বিষয়, এইভাবে দলটি ঠিক কতদূর যেতে পারে? নাকি এটাই তাদের শেষ নির্বাচন? এইচ এম এরশাদের আর্তনাদ কর্মী-সমর্থকদের ভাবাবে।