নির্বাচনে রিটানিং কর্মকর্তারা যখন ‘জিরো টলারেন্স’ বিএনপি’র মনোনয়নপত্র বাতিল করছেন, তার উল্টোপাশে ‘উদারতা’র সাথেই বৈধতা প্রদান করছেন আওয়ামী নেতৃত্বাধীন প্রার্থীদের। আওয়ামী লীগ যে প্রশাসনিক কৌশলে বিএনপিকে দমন করার চেষ্টা করছে সেটা আগেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। এবার সামনে এসেছে প্রশাসনিক কৌশলে নিজেদের সুবিধা নেবার বিষয়টিও।
টালবাহানার রাজনৈতিক দল বিকল্পধারার মহাসচিব আবদুল মান্নান সেই সুবিধাভোগীর একজন যিনি ৩০টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে ঋণখেলাপিতে যুক্ত। এই সমস্ত প্রতিষ্ঠানে তার ঋণ খেলাপির পরিমান ৮২ কোটি টাকা। সংসদ সদস্য পদে প্রার্থী হতে নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামায় নিজেই উল্লেখ করেছেন খেলাপি ঋণের এসব তথ্য। এরপরও তাঁকে বৈধ প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছেন লক্ষ্মীপুর জেলার রিটার্নিং কর্মকর্তা।
একইভাবে অগ্রণী ব্যাংকে ৫০২ কোটি টাকার ঋণখেলাপি আওয়ামী সরকারের ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ পরিবারের পাঁচ প্রতিষ্ঠান। তিনি এসব প্রতিষ্ঠানের পরিচালক। এরপরও তাঁকে বৈধ প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছেন চট্টগ্রামের রিটার্নিং কর্মকর্তা।
আওয়ামী লীগ জোটের এসকল নেতৃবৃন্দ ঋণ নেয়ার পর ব্যাংকের ধারে কাছেও যাননি। ‘আদালত’কে ব্যবহার করে তারা আদায় করে নিয়েছে স্থগিতাদেশ। ফলে ঋণখেলাপি হিসেবে তাঁরা বিবেচিত হচ্ছেন না। এর মধ্যে কেউ কেউ আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার মাত্র ক’দিন আগে।
বিকল্পধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরীও একই দোষে দুষ্ট। তার পেশাগত পরিচয়ে একটি তিন এন্টারটেইনমেন্ট রিপাবলিকের কর্ণধার, এই প্রতিষ্ঠানটির কাছে বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিন্যান্স করপোরেশন (বিআইএফসি) এর পাওনা ১ কোটি ১৪ লাখ টাকা। গত রবিবার হলফনামা যাচাইকালে বিআইএফসির প্রতিনিধি উপস্থিত থেকে আপত্তি জানালেও আমলে নেয়নি রিটার্নিং কর্মকর্তা।
এদিকে নির্বাচনে অংশ নিতে গত মাসে ঋণ পুনঃ তফসিল করেছেন সরকারদলীয় বেশ কয়েকজন সাংসদ। এর মধ্যে অন্যতম রাজশাহী-৪ আসনের এনামুল হক, চাঁদপুর-৪ আসনের শামসুল হক ভূঁইয়া, ঢাকা-১৪ আসনের আসলামুল হক, শরীয়তপুর-৩ আসনের নাহিম রাজ্জাক, পটুয়াখালী-২ আসনের আ স ম ফিরোজ অন্যতম। আবার ঢাকা-১ আসনের প্রার্থী, আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর বেসরকারি খাত উন্নয়নবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সব ঋণ এখন নিয়মিত। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ পুনর্গঠন সুবিধা ছাড়াও গ্রুপটিকে নতুন করে বাড়তি সুবিধা দিয়েছে একাধিক ব্যাংক।
মনোনয়নের মাত্র ক’দিন আগে ঋণ স্থগিত ও রিটানিং কর্মকর্তাদের ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানের আপত্তি সত্ত্বেও মনোনয়নের বৈধতা দেয়া নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাকে শুধু প্রশ্নবিদ্ধ নয় বরং পক্ষপাতমূলক হিসেবে প্রমাণ করছে।