ঝরা পাতার মরসুমে চুলের সমস্যা সমাধান : পর্ব ১

ঝরা পাতার মরসুমে চুলের সমস্যা সমাধান : পর্ব ১

শীতকাল চলে এসেছে রুক্ষ ত্বকের সাথে চুলেরও বারোটা বেজে যাওয়ার সময়। তার মানেই তুষার কণার মতো এবার মাথা থেকে ঝরে পড়বে সাদা সাদা মৃত কোষ। অথবা চুল হয়ে যাবে রুক্ষ, ফেটে যাবে ডগা। যা আপনাকে আমাকে বিভিন্ন ভাবে জ্বালাতন করবে। ঘাটতি আসবে সৌন্দর্যে। তবে তার জন্যে ঘরোয়া উপায় তো আছেই। হাতের কাছে যখন এত উপাদান আমাদের। তাহলে তার থেকে তো আমরা ত্বক বলুন আর চুল দুটোর কাজেই লাগাতে পারি। তাহলে জেনে নিই এমন কিছু উপায়। এবার রইল আপনাদের জন্য খুসকি তাড়ানো, চুলের অকালপক্কতা রোধ এবং চুলের গোড়া ফেটে যাওয়া রক্ষা করতে ঘরোয়া উপায়।

খুসকির সমস্যা সমাধান  

ত্বকে রক্ত চলাচল ঠিকমতো না হলে ত্বকের একেবারে ওপরের কোষ শুকনো হয়ে ঝরে যায়। আর মাথার ত্বকের এই মৃত কোষকে বলে খুসকি। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক এই দুর্বিষহ খুসকির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার কিছু ঘরোয়া টিপস-

  • কাঁচা আমলকির রস, পাতিলেবুর রস, তেঁতুলের ক্কাথ খুসকির মোক্ষম দাওয়াই। শ্যাম্পু করার একঘন্টা আগে টকদই মেখে চুল ধুয়ে নিলে খুসকি কমে যেতে বাধ্য
  • শীতকালে খুসকির সমস্যা সব থেকে বেশি বেড়ে যায়, বিশেষত শুষ্ক চুলে সপ্তাহে দু’দিন অন্তত তেল ম্যাসাজ করুন। নারকেল তেল, ক্যাস্টর অয়েল, যেকোনো একটি মাখতে পারেন। ড্রাই হেয়ারে অলিভ অয়েল খুব ভালো ময়েশ্চরাইজের কাজ করে।
  • চার চামচ মধু ও চার চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে সপ্তাহে একদিন মাখুন।
  • সপ্তাহে একদিন করে হেয়ার স্পা করতে পারেন বাড়িতেই। অল্প তেলে ১০টি আমন্ড বাদাম রেখে শ্যাম্পু করে নিন।
  • মেথিদানা বেটে সরষের তেলে ফুটিয়ে ঠান্ডা করে ছেঁকে লাগান। একঘন্টা রেখে শ্যাম্পু করুন। এতে চুলের জেল্লা বাড়বে ও অকালপক্কতা কমবে
  • ৮/১০টি লাল জবাফুলের কুঁড়ি ২ চামচ উষ্ণ জলে মিহি পেস্ট করে চুলের গোড়ায় ২ ঘন্টা লাগিয়ে রাখুন। পাকা চুলের সমস্যায় উপকারী।
  • কারিপাতা, পুদিনাপাতা, নিমপাতা নারকেল তেলে ফুটিয়ে সেই তেল মাথায় মাখুন।
  • খুসকি তাড়াতে ব্যবহার করুন ঘরোয়া শ্যাম্পু। দু-টেবিল চামচ রিঠার রস, এক টেবিল চামচ বেসন, এক চামচ মেথি গুঁড়ো জলে গুলে শ্যাম্পু করুন।
  • ১০টি আমলা, ১০টি রিঠা আগের দিন ভিজিয়ে রাখুন। চটকে, ছেঁকে নিয়ে শ্যাম্পু করুন।
  • পাতিলেবুর রস, গ্লিসারিন, মধু মিশিয়ে মাখুন।
  • নিমের বীজ ভালো করে বেটে ভৃঙ্গরাজ তেলের মধ্যে মিশিয়ে রাখুন। তেলটি সপ্তাহে চারদিন মেখে পরদিন শ্যাম্পু করবেন।
  • মহাভৃঙ্গরাজের রস ২ চামচ, ছাগলের দুধ ১ চামচ মিশিয়ে মাখুন।
  • টকদইয়ে দু’চামচ আমলকি বেটে মিশিয়ে মাথার ত্বকে লাগান। আধঘন্টা পর ভেষজ শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিন।
  • অ্যান্টিসেপটিক দেওয়া জলে চিরুনি ডুবিয়ে রাখুন। খুসকি হওয়া থেকে বাঁচিয়ে রাখবে।

চুলের অকালপক্কতা রোধের উপায়

চুলের ত্বকে থাকে মেলানোসাইট কোষ। এতে মেলানিন নামক রঞ্জক পদার্থ উৎপন্ন হয়। মেলানিনের জন্যই আমাদের চুল কালো হয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বা অন্য কোনও কারণে মেলানিন উৎপাদন কমে গেলে চুল পেকে যায়। চুল পাকার কয়েকটি ঘরোয়া সমাধান হল-

  • ৯ থেকে ১০টি শুকনো আমলকি ও ১ চামচ মেথি এক কাপ চায়ের লিকারে ভিজিয়ে রাখুন সারারাত। পরে মিহি করে বেটে চুলে লাগিয়ে রাখুন।
  • যাঁদের চুল সবে ধূসর হতে শুরু করেছে তাঁরা চায়ের লিকারে আমলকির রস মিশিয়ে চুলে মাখুন।
  • আমলা পাউডার, তেল, ডিম, দই, আমলকি, শিকাকাই, ব্রাহ্মী একসঙ্গে মেশান। কালো রঙ করতে চাইলে জবাফুলের রস মেশাতে পারেন।
  • বাড়িতে চুল ব্লিচ করতে চাইলে মধু, পাকা কলা ও টকদইয়ের ঘন মিশ্রন সবথেকে ভালো একটি প্যাক।
  • অনেকেই চুল রঙ করান। এক্ষেত্রে ভেষজ রঙ ব্যবহার করতে পারেন। ক্ষতি হবার সম্ভাবনা কম হবে।
  • হট অয়েল ম্যাসাজ চুলের জন্য ভীষন জরুরী।
  • ২ চামচ নারকেল তেল, ২ চামচ ভৃঙ্গরাজ ও ২ চামচ মেথি ভিজিয়ে সেই তেল মাথায় মাখলে পাকা চুল কালো হবে।
  • ক্যাস্টর অয়েল ২৫০ গ্রাম অয়েল, অলিভ অয়েল ৫০ গ্রাম একত্রে মিশিয়ে গরম করুন। ঈষৎ গরম হলে ৫০ গ্রাম চন্দন গুঁড়ো, ৫০ গ্রাম আমলকী গুঁড়ো, ৫০ গ্রাম ইন্সট্যান্ট কফি মিশিয়ে মিশ্রণটি মাথায় লাগান। এরপর ৩ ঘন্টা রেখে দিয়ে শ্যাম্পু করে নিন। এই মিশ্রণটি রাতে শোবার আগেও মেখে শুতে পারেন। সেক্ষেত্রে সকাল বেলায় ঈষৎ উষ্ণ জলে শ্যাম্পু করে নেবেন।

চুলের ডগা ফাটা

জেট যুগে আমরা সবসময়ই ব্যস্ত। চাকরি বা লেখাপড়ার কারণে বাধ্যতামূলকভাবে বাইরে বেরুতেই হয়। আর বাইরে বের হবার জন্য রোদ বেশি লাগে চুলে। ফলে চুল লাল হয়ে যায়। আর অতিরিক্ত সূর্যের তাপে দিনের পর দিন চুল লাল হতে হতে একসময় চুলের ডগা ফেটে যায়।

কেন ডগা ফাটে এবং তার সমাধানঃ

  • বারংবার শ্যাম্পু করলে চুলের ক্ষতি ছাড়া উপকার হয় না। শ্যাম্পুর মধ্যে রাসায়নিক পদার্থ থাকে যা, চুলের ক্ষতি করে। তাই চুলের সঠিক পরিচর্যা করুন মৃদু ক্রিয়াশীল শ্যাম্পু বা আয়ুর্বেদিক শ্যাম্পু দিয়ে।
  • শ্যাম্পু করার পর যে জলে মাথা ধোয়া হয়, তাও অনেকসময় ক্ষতির কারণ হতে পারে। শহরের বাসিন্দারা জানতেই পারেন না যে কলের জলে প্রচুর পরিমাণে ক্লোরিন থাকে। এই ক্লোরিন যুক্ত জল প্রতিদিন ব্যবহারের ফলে চুলের ডগা ফেটে যায়। তাই এই জল ব্যবহারের আগে জলকে ফুটিয়ে ঠান্ডা করে নেবেন। সূর্যের তাপ যাতে চুলে না লাগে তার জন্য অবশ্যই ছাতা ব্যবহার করবেন।
  • চুলের ডগা ফেটে গেলেই বুঝবেন চুলের প্রচন্ড ক্ষতি হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রথমেই চুলের ডগাগুলি কেটে ফেলার চেষ্টা করবেন। কেননা ডগা ফাটা অবস্থায় রেখে দিলে তা চুলের গোড়া পর্যন্ত চলে আসতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনার চুল খুব বেশি পরিমাণে উঠে যাবে এবং ফাটা ডগার জন্য চুলের বৃদ্ধিও বন্ধ হয়ে যায়।
  • চুলের ডগা, আঁচড়ানোর দোষেও ফেটে যায়। গতীশীল জীবনে হুটোপাটির জন্য অনেকেই চুল টেনে হিচড়ে আঁচড়ান। এতে চুলে আরও বেশি পরিমাণে জট পড়ে যায়। জট পড়লে আরও টানাটানির কারণে ছিঁড়ে যায় চুল। আর যে চুলগুলি ছিঁড়ে যায় না, সেগুলি নমনীয়তা হারিয়ে ফেটে যায়। সুতরাং, চুলকে যদি কোমল ঝরঝরে চকচকে রাখতে চান, তাহলে ধৈর্য সহকারে চুলকে ধীরে ধীরে আঁচড়ান। সময়ও বেশি লাগছে না অথচ চুলও সুন্দর রয়েছে। মনে রাখবেন, বেশি তাড়াহুড়ো করলেই চুলে জট পড়ে আরও বেশি সময় আপনার নষ্ট হবে।
  • শ্যাম্পু করার আগের দিন রাতে নারকেল তেল আঙুল দিয়ে চুলের গোড়ায় গোড়ায় লাগিয়ে ভাল করে ম্যাসাজ করুন। তারপর শ্যাম্পু করে ফেলুন। এতে চুল থাকবে নরম।
  • ভিজে চুল কখনই আচড়াবেন না। ভিজে চুলে নমনীয়তা অনেক বেশি। তাই সামান্য চাপ বা টান পড়লেই চুল নষ্ট হয়ে যায় বা ছিঁড়ে যায়। রোজ অন্তত ৫ থেকে ১০ বার চুল ব্রাশ করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। চুলের গোড়া থেকে ডগা পর্যন্ত কোমলভাবে আস্তে আস্তে টেনে টেনে চুল আঁচড়ান। এতে চুলের ডগায় রক্ত সঞ্চালন বাড়বে।

তাহলে আর দেরী কিসের। চটপট লেগে পড়ুন চুলের হৃত সৌন্দর্য রুখে দেওয়ার যুদ্ধে। এরপরের ধাপে আবার এসে হাজির হব আরও কিছু নতুন টোটকা নিয়ে। ভালো থাকুন, সুসস্থ থাকুন আর অবশ্যই প্রাণ খোলা হাসতে থাকুন।