জ্বালানি তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর আন্তর্জাতিক জোট ওপেক থেকে বের হয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কাতার। এই সোমবারে দেশটির জ্বালানি মন্ত্রী সাদ শেহরিদা আল-কা’বি এমনটাই জানিয়েছেন।
জ্বালানি তেল রপ্তানিকারক ১৫ দেশের এই জোট থেকে বের হয়ে আসছে কাতার এবং তেল রপ্তানিতে দেশটি অন্যান্য দেশগুলো থেকে অনেক এগিয়েই ছিল। ওপেক’ভুক্ত দেশের মোট তেল রপ্তানির সিংহভাগই আসতো কাতার থেকে। এদিকে ওপেক থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত এমন খবরও নিশ্চিত করেছে কাতারের রাষ্ট্রায়াত্ব তেলের প্রতিষ্ঠান কাতার পেট্রলিয়াম।
দোহায় অনুষ্ঠিত একটি সংবাদ সম্মেলনে জ্বালানি মন্ত্রী আল-কা’বি বলেন, “কাতারের এমন সিদ্ধান্ত শুধুই নিজস্ব উন্নয়নের স্বার্থে। তারা তেল রপ্তানি থেকে নিজেদের নজর সরিয়ে প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনের দিকেই মনযোগ দিতে ইচ্ছুক। বর্তমানে তাদের উৎপাদিত প্রাকৃতিক গ্যাসের পরিমাণ ৭৭ মিলিয়ন টন এবং এই সংখ্যাকে বৃদ্ধি করে তারা ১১০ মিলিয়ন টনে উপনীত করতে ইচ্ছুক বলে জানা যায়”।
ওপেক জোট থেকে বের হয়ে আসার ঘটনা এটাই প্রথম এবং কাতারই প্রথম রাষ্ট্র। ৬ই ডিসেম্বর হতে যাওয়া ওপেক সম্মেলনের ঠিক কয়েকদিন আগেই এমন সিদ্ধান্ত জানালো দেশটি।
এদিকে কাতার ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল-জাজিরার সাংবাদিক চার্লেট বেলিস জানিয়েছেন “তারা বলছে কাতারের উপর নিষেধাজ্ঞার সাথে এই সিদ্ধান্তের কোন সম্পর্ক নেই। ওপেক থেকে বেরিয়ে আসার চিন্তা তারা আরো কয়েক মাস আগে থেকেই করে আসছিল। এখানে বেলিস কাতারের উপর দেয়া সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিশর ও বাহরাইনের ডাকা কূটনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কথাই উল্লেখ করেছেন।
বেলিস আরো বলেন “যদি ওপেক থেকে নাম প্রত্যাহার করতেই হয় তবে তা অন্তত একবছর আগে সিদ্ধান্ত হওয়া উচিৎ। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে তাদের আরো স্বচ্ছ হওয়া উচিৎ এবং ৬ই ডিসেম্বরের বৈঠকে তাদের অংশগ্রহণও করা প্রয়োজন”।
২০১৩ সাল থেকে কাতারের দৈনিক তেল উৎপাদন ক্রমান্বয়ে কমেই আসছে। ২০১৩ সালে তাদের দৈনিক উৎপাদিত তেলের পরিমাণ ছিল ৭ লক্ষ ২৮ হাজার ব্যারেল যা ২০১৭ সালে ৬ লক্ষ ৭ হাজার ব্যারেলে এসে ঠেকেছে যা ওপেক এর মোট উৎপাদনের মাত্র ২ শতাংশ।
এদিকে বৈশ্বিক তেল উৎপাদন ৩০.৭ মিলিয়ন ব্যারেল থেকে বেড়ে দাড়িয়েছে ৩২.৪ মিলিয়ন ব্যারেলে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। ওপেক গঠন হওয়ার একবছর পর ১৯৬১ সালে কাতার ওপেকের অন্তর্ভুক্ত হয়।
এই সপ্তাহের শুরুতে ওপেক এবং রাশিয়া যারা বিশ্বে মোট উৎপাদিত তেলের ৪০ শতাংশ উৎপাদন করে একটি বৈঠকে বসেন। তারা সেখানে সিদ্ধান্ত নেয় নতুন করে তেল উৎপাদন কমিয়ে আনবে তারা যেন তেলের দাম খুব বেশি কমাতে না পারে।
গত অক্টোবর মাসে তেলের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৮৬ ডলার প্রতি ব্যারেল যা চার বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কিন্তু তার পরেই সেই দাম পরে আবার ব্যারেল প্রতি ৬০ ডলারে নেমে গিয়েছে।