নিশাচর শব্দ
আধখাওয়া জীবন নৌকার মতো ভাসছে সুদূর আকাশে
আমি কিছু জানি না রাত্রির আগামীকালও নেই…
যতদূর দেখা যায় ঘনবসতির নক্ষত্ররা তৈরি করেছে একটি শহর
সমুদ্র-পারে আলো জ্বলছে আরো কিছু বিলুপ্ত নগরীর
যে-গাছগুলোর সাথে আমার কথা হয়েছিল
সন্ধ্যায় তারা চলে গেছে প্রাচীনকাল অতিক্রম করে
ওপরের জোয়ারে পাখি হয়ে উড়ছে পূর্বজন্মের মাছেরা;
নিশাচর শব্দ
আর না-দেখা একটি বাড়ির ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছে কেউ
ততক্ষণে ডুবে গিয়েছে ভূতুড়ে চাঁদ
ঘণ্টা বাজছে বিগত শতাব্দীর
জলের খরস্রোতের মুখে তার আবির্ভাব
অযাচিত জীবন
তবুও অর্ধেকের বেশি খাওয়া!
সাতটি তারার প্রবন্ধ
সাতটি তারার প্রবন্ধ
আমার হাতে কাগজ
একলা আমি
আকাশ যেখানে কালির ফোঁটার মতো একটি বিন্দু
এমন সময়ে জীবনের ছায়া পড়ছে আমার মাথার ওপরে
জ্ঞানশূন্য হাহাকার
দূরে ঘুমন্ত পৃথিবীর ওপর দিয়ে ভেসে যাচ্ছে ডাকহরকরা চাঁদ
মাঠের সরু জাঙালগুলো প্রাগৈতিহাসিক সকাল
সন্ধ্যার আলো জ্বলছে কুন্ঠিত বোধ
মৃত মানুষের দেউল
হাওয়ার গজানো চুলে রুক্ষ শহর
বহুদিন তেল পড়েনি এত প্রবল শীতে
আকাশ গোটানো একটি পাণ্ডুলিপি।
হাত মাত্র এক খণ্ড জারজ কাঠ
বিচূর্ণ হয়ে আছে আকাশ
মেঘ আর পিতামহ গাছ
তারপর মাথা থেকে পা অনন্ত অসীম
মানুষের সময় ধরে আমরা এগিয়ে চলেছি
শেষ নক্ষত্রটির দিকে হৃদয়ের খোঁজে
মাঝে মাঝে দু’একটি আগামীকাল
ভুয়ো দর্শন আয়নার ভেতরে আলোর মতো জ্বলজ্বল করে…
নীরব সূর্যাস্ত
কবরের রাত্রিগুলো আর পাঁচটা ব্যবহৃত আসবাবের মতো পড়ে রয়েছে ইতিউতি
নিয়তিতাড়িত আমাদের ভাগ্য-জন্তু প্রবাহমান জাবনার পাত্রে
তাদের জবাইয়ের দৃশ্য বেগুনি রঙের
অজস্র জাঙাল
দ্বিধাবিভক্ত মাঠ
সুদূরপ্রসারী গ্রাম
হাওয়ায় ছবি
ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে দূরবর্তী দুঃখবোধ
ভাঙা প্রাচীর
মরণের সাজঘর
আলমারির শহর
প্রাচীন ময়লার গন্ধ কখনও-সখনও
গভীর করে দেয় জীবন
আর রক্তের খরস্রোতে বিতাড়িত হয় আমাদের নৌকা
হাত মাত্র এক খণ্ড জারজ কাঠ
ভেসে চলে অনন্তকাল!
জীবন অববাহিকায় শুধু গাছ
মৃত মুখগুলোর ওপর দিয়ে পরস্পর জাহাজগুলো ভেসে যাচ্ছে
আমি তারাদের গলির মুখে বসে রাতভর শব বাহকদের গান শুনছি
দূর থেকে দেখা গাড়িগুলোর কান্নার রং শহরের আলোগুলোকে আরও উজ্জ্বল করছে।
প্রাচীন উপত্যকায় গ্রাম
বাড়িঘর ভাঙাচোরা আসবাবের মধ্যে একবার মা
আঁতুড়ঘরে গিয়েছিল তার গন্ধ
পাঁচিলের ওধারে নিষিদ্ধ দুঃখের মতো চাঁদ উঠছে
আর জীবন-অববাহিকায় শুধু গাছ
তারপর যতদূর দেখা যায় কবর সভ্যতা
একসাথে আগামী রাত্রিগুলো
আমি একা গলির মুখে
আমার হাতের না ধরায় সেই দ্রাঘিমারেখা
তারপর বিমাতৃসুলভ আলো-অন্ধকার!