দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যদি জাতীয় পার্টি ভবিষ্যৎ রাজনীতি এবং ক্ষমতা পরিবর্তনে নিরপেক্ষতা নিয়ে ভেবে নির্বাচনে অংশ না নিতেন হয়তো বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্য অন্যরকম হতো। সে যাই হোক, তা আর হয়নি। দেশজুড়ে প্রার্থী দিয়ে সুনির্দিষ্ট আসনের নিশ্চয়তায় সেদিন দলীয় সরকারের অধিনে এক সাজানো নির্বাচনে বিরোধী দল হয়েছিল তারা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এসে যখন প্রকৃত অর্থে রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করছে, তখন আওয়ামী লীগের সাথে জোট করে দলীয় ভাঙনের মুখে পড়েছে দলটি। আওয়ামী নেতৃত্বাধীন মহাজোটের অন্যতম শরীক দল তারা। আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে শরীকদের জন্য ৬৫-৭০টি আসন ছাড়তে রাজি তারা। আর তাতেই সংকটে পড়েছে দলটি।
শরীকদের জন্য বরাদ্দ হওয়া দলে ইতোমধ্যে ১৩টি আসন বরাদ্দ হয়ে গেছে। যার মধ্যে জাসদ (ইনু) ৩টি আসন, জাসদ (আম্বিয়া) ২টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ৫টি, জেপি মঞ্জু ১টি ও তরিকত ফেডারেশন ২টি আসনে মনোনয়ন পেয়েছে। এখন মনোনয়ন দিতে ব্যর্থ হচ্ছে জাতীয় পার্টি। আর অসন্তোষে পদত্যাগ করছে মনোনয়ন প্রত্যাশী হেভিওয়েট নেতারা। এসবের মধ্যে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ও মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারকে টাকা দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
গতকাল বুধবার হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের কাছে চিঠি দিয়ে পদত্যাগ করেছেন গাইবান্ধা-২ আসনের প্রার্থী ও পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রশিদ সরকার। আজ বৃহস্পতিবার চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে এসে পদত্যাগের ঘোষণা দেন ঢাকা-১৩ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম সেন্টু। তিনি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর । এছাড়াও বিভিন্ন পর্যায়ের মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতাদের পদত্যাগ করার কথাও উঠেছে।
জাতীয় পার্টি সংবাদ সম্মেলন করে ১১০ জন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়ার কথা জানিয়েছিলেন। ওই তালিকার কয়েকজন মনোনয়নের জন্য অর্থ দেয়ার কথা বলেছেন সংবাদমাধ্যমকে। টাকা নিয়েও মনোনয়ন নিয়ে টালবাহানার অভিযোগ করেছেন, নীলফামারী-৪ আসনের জাতীয় পার্টির সাংসদ শওকত চৌধুরী, গাজীপুর-৫ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী গাজীপুর মহানগর জাপার সহ-সভাপতি গাজী ওবায়দুল কবির মজনু, দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও দিনাজপুর-৫ আসনে প্রার্থিতার আবেদন সংগ্রহ করা মো. সোলায়মান সামি, চট্টগ্রাম মহানগর জাতীয় পার্টির সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আলী, সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের শেখ শরিফুল ইসলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী কাজী মামুনুর রশীদ এবং জয়পুরহাট-২ আসনে আবুল কাশেম রিপন।
অনেক নেতা-কর্মী মনোনয়ন না দিলে টাকা ফেরত দেয়ার দাবিও করেছেন। ভোট এবং ভোটার বিহীন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা আর শক্তিশালী প্রতিপক্ষ মাঠে থাকা অবস্থায় নির্বাচন করা এক কথা নয়, সেটাও বুঝতে হচ্ছে জাতীয় পার্টিকে। এসবের মধ্যে এখনো এরশাদ নিশ্চিত করেন নি যে তিনি একক নির্বাচন করবেন না মহাজোটের সাথে। এই নিয়েও ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে নেতা-কর্মীদের ভিতরে। এখন দেখার বিষয়, হুসেই মুহাম্মদ এরশাদ কিভাবে এই সংকট সমাধান করেন? নাকি এই ভাঙনই জাতীয় পার্টিকে বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠ থেকে চিরদিনের জন্য বিচ্ছিন্ন করে দেয়, সেটাও দেখার বিষয়?