মনোনয়ন নিয়ে কোন্দল আওয়ামী লীগে

মনোনয়ন নিয়ে কোন্দল আওয়ামী লীগে

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বারবার মিডিয়া’র সামনে বলে যাচ্ছেন, বিএনপির আভ্যন্তরীণ কোন্দলের কথা। এমনকি বুড়িগঙ্গায় মনোনয়ন প্রত্যাশী বিএনপি নেতার লাশ পাওয়ার বিষয়টিকে বিচারের আওতায় আনার চেয়ে তার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছিল, আভ্যন্তরীণ কোন্দলের অভিযোগ করা। কিন্তু আসলে আভ্যন্তরীণ কোন্দলে বিএনপি নয়, পতিত হয়েছে আওয়ামী লীগ। মনোনয়ন নিয়ে সেই কোন্দলের একটি চিত্র জনগণের সামনে খোলাসা হয়ে গিয়েছে।

আওয়ামী লীগের নাম নিলে যেসব নেতার ছবি ভেসে ওঠে, সেই জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং সাজেদা চৌধুরীর মতো নেতারা যখন মনোনয়ন পাননি তখনই দেশের জনগণ বুঝতে পেরেছিল, ভাঙনটা তবে আওয়ামী লীগেই লেগেছে। জনপ্রিয় নেতাদের বাদ দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এবং দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের মনোনয়ন দেয়ায় বিক্ষোভ দেখা গেছে মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের ভিতর। বিক্ষোভে তারা বিভিন্ন আসনে দুর্নীতিগ্রস্ত মনোনীত প্রার্থীদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে সড়ক-মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছেন। কোথাও কোথাও অনশন করার খবরও পাওয়া গেছে। কেউ কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবেও মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন।

ফরিদপুর-২ আসনটি জাকের পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা আমীর ফয়সলের জন্য সংরক্ষণ করেছিল আওয়ামী লীগ। যার কারণে মনোনয়ন বঞ্চিত হয়। আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের কাণ্ডারী ও সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরীকে। ব্যাপক সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভের মুখে তাকে মনোনয়ন দিতে বাধ্য হয়।

মনোনয়নে দুর্নীতির বিরোধিতা করে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আশরাফুর রহমান পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।

ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য এমদাদুল হক নৌকা প্রতীকে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে ঠাকুরগাঁও-৩ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তিনিও পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার এম রায়হান শাহের কাছ থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।

বিক্ষোভ দেখা যায় জাসদ নেত্রী শিরিন আখতারের মনোনয়ন নিয়েও। ফেনিতে নেতা-কর্মীরা ঝাড় মিছিল বের করে।

এর আগে ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) জামালপুর-৫ (সদর), কুড়িগ্রাম-২ ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ), ময়মনসিংহ-৮, কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর), ফরিদপুর-২ (নগরকান্দা-সালথা-কৃষ্ণপুর), চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ এবং কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনসহ বিভিন্ন আসনে দল ও মহাজোট প্রার্থীদের বিরোধিতা করে ব্যাপক বিক্ষোভ, ঝাড়ু মিছিল, সড়ক ও মহাসড়ক অবরোধ করেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।

একই কারণে বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে ফেনী-১ (পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া), ঢাকা-২ (কেরানীগঞ্জ), শেরপুর-১ (সদর), নেত্রকোনা-১ (দুর্গাপুর-কলমাকান্দা), নরসিংদী-৩ (শিবপুর), নরসিংদী-৪ (মনোহরদী-বেলাব),কুমিল্লা-৪, মেহেরপুর-২ (গাংনী)।

দলটির নেতাকর্মীদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কার্যনির্বাহী সভায় ৭০ জন এমপি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল বলে আলোচনা হয়েছিল। ওই সভা থেকে শতাধিক এমপি এবার ‘লাল কার্ড’ পেতে পারেন বলে আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা জানিয়েছিলেন। তবে চূড়ান্ত মনোনয়নে যেসব এমপির বিরুদ্ধে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, হাইব্রিডদের পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া, বহিরাগতদের লালন করা এবং আওয়ামী লীগের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টির অভিযোগ ছিল তাদের নাম তালিকায় দেখে হতাশ হয়েছেন নেতাকর্মীরা।

দেশের বিভিন্ন স্থানে নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, একটি আসনের বিপরীতে গড়ে ১৩ জন করে মনোনয়ন তুলেছেন। এক আসনে মনোনয়ন পাবেন মাত্র একজন। সবাইকে তো খুশি করা যাবে না।

শেষ পর্যন্ত কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হলে দলের সিদ্ধান্ত কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আজীবন বহিষ্কার করা হবে। তাকে আর দলে নেয়া হবে না’।

আওয়ামী লীগ তবে কাদের বাদ দিতে চাচ্ছে? বহুদিন ধরে রাজনীতি করে আসা নেতাদের। দুঃসময়ে যাদেরকে পাশে পেয়েছিল সে সকল নেতাদের? আর দলে রাখতে চাইছেন শামীম ওসমান, পংকজ দেবনাথদের মতো দণ্ডপ্রাপ্তদের?