ঢাবিতে ‘মধুর ক্যান্টিন’ সিনেমার শুভ মহরত অনুষ্ঠিত

ঢাবিতে ‘মধুর ক্যান্টিন’ সিনেমার শুভ মহরত অনুষ্ঠিত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক মধুর ক্যান্টিনকে উপজীব্য করে নির্মিত পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মধুর ক্যান্টিন’র শুভ মহরত অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল ২৫ নভেম্বর বিকেল সাড়ে চারটা নাগাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সামনের চত্বরে উপাচার্য ড. মুহাম্মদ আখতারুজ্জামান এই মহরত অনুষ্ঠানেরই উদ্বোধন করেন। ছবিতে অভিনয় করবেন নায়ক ওমর সানী, নায়িকা মৌসুমী, সোহানা সাবা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই শুভ মহরত অনুষ্ঠানে ‘মধুর ক্যান্টিন’ ছবির পরিচালক সাইদুর রহমান সাইদ বলেন, আমি ৬৬ থেকে ৭১ সাল পর্যন্ত ঢাবির আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলাম। মধুদা আমার পিতৃতুল্য ছিলেন। ‘৭১ সালে তাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। আমি তার স্মৃতি নতুন প্রজন্মের মাঝে তুলে ধরতে চলচ্চিত্রটি বানাচ্ছি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আখতারুজ্জামান বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক সিনেমা-নাটক হয়েছে; কিন্তু এই মধুর ক্যান্টিন নিয়ে কোনও কিছু হয়নি। এটা দুঃখজনক!

মধুর ক্যান্টিনের সাথে বাংলাদেশের ইতিহাস জড়িত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে বাংলাদেশ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের সম্পর্ক আছে। আর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন, যেখান থেকে ছাত্ররা জাতীয় নেতৃত্বে গিয়েছে এবং যাচ্ছে। এই সিনেমা দেখে যেন নতুন প্রজন্ম উদ্বুদ্ধ হয়, সেটাই আশা থাকবে। তারা বুঝবে যে, এই ক্যান্টিন বাংলাদেশের ইতিহাসে ভূমিকা রেখেছে।

মধুর ক্যান্টিনকে অসাম্প্রদায়িকতা চর্চার স্থান উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই মধুর ক্যান্টিন ভিন্ন মতের চর্চার অসাম্প্রদায়িক একটি স্থান। এখান থেকেই ছাত্ররা এটা শিক্ষা লাভ করে। চায়ের কাপের মধ্যেই এখানে জাতি ও রাষ্ট্র বিনির্মানে বিভিন্ন আলোচনা হতো এবং এখনও হয়।

এই চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে জাতীয় পুরস্কার লাভের আশাবাদ ব্যক্ত করে ‘মধুসূদন দে’ চরিত্রে অভিনয়কারী ওমর সানী বলেন, আমার মাধ্যমে অনেকেই চলচ্চিত্রে এসেছে। তারা জাতীয় পুরষ্কারও পেয়েছে। কোন কারণে আমার পাওয়া হয়নি। আমি এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে কোন কিছু করতে চাই।

চলচ্চিত্র পরিচালক আজিজুর রহমান বলেন, মধু দা’কে আমি অনেক আগ থেকেই চিনি। অথচ মধু দা’র সাথে বাংলাদেশ সৃষ্টির ইতিহাস জড়িত। ধন্যবাদ জানাচ্ছি সাইদুর রহমানকে।

এসময় বাংলাদেশ চলচিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি বদিউল আলম খোকন, মধু দা’র সন্তান ও মধুর ক্যান্টিনের বর্তমান পরিচালক অরুন কুমার দে, বাংলাদেশ চলচিত্র পরিচালক সমিতির সাবেক সভাপতি শাহ আলম কিরণ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এর সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, ছাত্র রাজনীতির আতুরঘরখ্যাত মধুর ক্যান্টিনের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মধুসূদন দে। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান, এবং পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে মধুর ক্যান্টিন সুপরিচিত। মধুসূদন দে, মধুদা নামেই সমধিক পরিচিত ছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ তারিখে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের উপরে যে হামলা শুরু করে, তার অংশ হিসাবে মধুর ক্যান্টিনে হানা দেয় এবং মধুসূদন দে ও তার পুত্রকে গুলি করে হত্যা করে।