যুদ্ধে আমেরিকার আকাশচুম্বী ব্যয়, ১৮ বছরে ৬ ট্রিলিয়ন ডলার

যুদ্ধে আমেরিকার আকাশচুম্বী ব্যয়, ১৮ বছরে ৬ ট্রিলিয়ন ডলার

যুক্তরাষ্ট্র নাইন ইলেভেন বা ৯/১১ এর পর থেকে ৬ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করেছে যুদ্ধের পেছনে আর যে যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে ৫ লক্ষাধিক মানুষ। ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াটসন ইন্সটিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল এন্ড পাবলিক অ্যাফেয়ারস’র বার্ষিক প্রতিবেদন ‘কস্ট অফ ওয়ার’ এ উঠে এসেছে এমন তথ্য।

পেন্টাগনের বিদেশে অবস্থানরত সেনা দলের খরচ হিসাব, যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র সচিবালয়ের যুদ্ধ সংক্রান্ত হিসাব, যুদ্ধ অভিজ্ঞ কল্যান তহবিল হিসাব, যুদ্ধকালীন ঋণের সুদ হিসাব এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় হোমল্যান্ড সিকিউরিটির হিসাব থেকে তৈরি করা হয়েছে প্রতিবেদনটি।

এই প্রতিবেদনের চূড়ান্ত হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র সরকার যুদ্ধ বাধ্যবাধকতা এবং বণ্টন খাতে বর্তমান ডলার মূল্যে খরচ করেছে মোট ৫.৯ ট্রিলিয়ন আমেরিকান ডলার। হিসাবটি নির্ধারণ করা হয়েছে ২০১৯ অর্থবছর পর্যন্ত। যেখানে ৯/১১ পরবর্তী যুদ্ধ ঘটিত সকল ব্যয়ের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনের উপসংহারে বলা হয়েছে “যুদ্ধ এবং যুদ্ধ বিষয়ক সকল ব্যয় জাতীয় সুরক্ষার অন্তরায় কারণ এই সকল ব্যয় মোটেও টেকসই কাজে খরচ হচ্ছে না। এর চেয়ে বরং এই সকল ব্যয়ের হিসাবে স্বচ্ছতা থাকা প্রয়োজন এবং যুদ্ধ খাতে খরচ না করে যুদ্ধ বন্ধ করা এবং জাতীয় সুরক্ষায় টেকসই কাজে ব্যয় করা হলে তা হত বেশি যৌক্তিক।

৯/১১ এর পরপরই ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র এবং এতে আল-কায়েদাসহ বিভিন্ন ইসলামিক সশস্ত্র সংগঠনের প্রায় ৩০০০ সদস্য নিহত হন। এর কয়েক সপ্তাহ পরেই যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানের উপর আক্রমণ করে যা আল-কায়েদার বন্ধুপ্রতিম সংগঠন তালেবানদের দখলে ছিল। ২০০৩ সালের মার্চ মাসে একইভাবে ইরাকের উপর আক্রমণ করে সাদ্দাম হোসেনকে ক্ষমতাচ্যূত করে তারা। যুক্তরাষ্ট্র দাবি করে সাদ্দাম হোসেন গণহত্যার পরিকল্পনায় নানা অস্ত্র এবং গোলাবারুদ তৈরি করছে এবং তিনি আমেরিকা বিদ্বেষী বিভিন্ন ইসলামিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে আশ্রয়ও দিচ্ছে।

যুদ্ধে তাদের বিজয় লাভ হলেও তারা সৈন্য প্রত্যাহার না করেই দেশ দু’টিতে নিজেদের ঘাঁটি তৈরি করে এবং সন্ত্রাস’র বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থানের কথা ঘোষণা করে সেখানে নানা সেনা অভিযান পরিচালনা করে। এছাড়াও তারা লিবিয়া, পাকিস্তান, সোমালিয়া এবং ইয়েমেনে তাদের অভিযান পরিচালনা করেছে এবং এখনো করছে। ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র একটি আন্তর্যাতিক জোট তৈরি করে এবং ইসলামিক স্টেট (আইএসআইস) এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করার ঘোষণা করে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে “যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী পৃথিবীর ৭৯ টি দেশে তাদের সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে যা পৃথিবীর সমগ্রদেশ সমূহের ৩৯ শতাংশ, তারা তাদের এই অভিযান খুব দ্রুতই বিস্তৃত করছে।” সেখানে আরো উল্লেখ করা হয়েছে “এই সকল অভিযানের কারনে খোদ আমেরিকাসহ সকল জায়গায় মানবাধিকার, নাগরিক স্বাধীনতা খর্ব হয়েছে।”

গবেষকদের বরাতে জানা গিয়েছে, ৯/১১ পরবর্তী সময়ে পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং ইরাকের যুদ্ধে আমেরিকান বাহিনীর হাতে নিহতের সংখ্যা আনুমানিক ৪ লাখ ৮০ হাজার থেকে ৫ লাখ ৭ হাজারের জন। যদিও এই পরিসংখ্যানে ২০১১ সাল থেকে চলে আসা সিরিয়ার যুদ্ধে ৫ লক্ষ নিহতদের কথা উল্লেখ নেই যখন থেকে সেখানকার কিছু বিপ্লবী সংগঠনগুলো সরকার পতনের আন্দোলন শুরু করে এবং যুদ্ধে রাশিয়া এবং ইরানের মিত্রবাহিনী সেখানে যোগদান করে। একই বছরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা রাষ্ট্র সমূহের সামরিক জোট ন্যাটোর মাধ্যমে লিবিয়ায় হামলা করা হয় এবং সেখানে বহুদিনের ক্ষমতায় থাকা মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে অপসারণ করে তারা দেশত্যাগ করে এবং এর ফলে সেখানে এখন পর্যন্ত গৃহযুদ্ধ চলে আসছে এবং হাজার হাজার মানুষ এখনো নিহত হচ্ছে।

সম্মিলিতভাবে আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং ইরাকের সাথে যুদ্ধে ৬ হাজার ৯৫১ জন সেনা, ২১ বেসামরিক নাগরিক, ৭ হাজার ৮২০ জন ঠিকাদারসহ মোট ১৪ জন ৭৯২ জন আমেরিকানও নিহত হয়েছে।

ঐ প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে “সাধারণত যুদ্ধে কত সৈন্য নিহত হয় তার সংখ্যা জানা গেলেও অনেক সময় সঠিক সংখ্যাটি বের করা মুশকিল এতে নিহতের সংখ্যা আরো বাড়ে, যেমন, ইসলামিক স্টেটের কাছ থেকে মসুল শহর বেদখল করার সময় দশ হাজারেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয় এবং তাদের লাশের হদীসও পাওয়া যায় নাই।”

প্রতিবেদনটিতে যুদ্ধের কারনে পরোক্ষ মৃত্যুর কোন পরিসংখ্যান যুক্ত করা হয় নি। যেমন, ধ্বংসযজ্ঞের ফলে মৃত্যু, যুদ্ধক্ষেত্রের পরোক্ষ আক্রমণের শিকার হওয়া ও অবকাঠামোগত ও জীবনযাপনজনিত কারনে মৃত্যু।