সৌম্যে সমব্যাথী পর্ষদ আমাদের মতন নিন্দুকদের উদ্দ্যেশ্যে একটি সাওয়াল ছুড়ে দিয়েছেন। অন্যরা ব্যর্থ হলে যখন আমরা নীরবতা পালনে ব্রত থাকি তখন সৌম্যের সামান্য ছন্দপতনেই আমরা রে রে করে তেড়ে উঠি কেন? যৌক্তিক সাওয়াল। এটির জওয়াব দেয়ার আগে কিছু পাল্টা সাওয়াল রাখবার জারুরাত অনুভব করছি।
অন্যরা যেখানে দুটো সিরিজ তো দূর দু’টো ম্যাচ খারাপ করলেই মূল একাদশ তো মূল একাদশ পুরো স্কোয়াড থেকেই ছিটকে যান; সেখানে ক্রমাগত ব্যর্থতার পরেও সৌম্য কি করে বারবার সুযোগ পান?
পরের সাওয়ালে যাই, ঘরোয়া আসরে তুষারদের মতন খেলোয়াড়রা একের পর এক ম্যাচে নিজেদের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টার পরেও যখন সতিনের পুত হয়ে থাকেন তখন সেই ঘরোয়া আসরে তুষারের এক ইনিংসের আধেক রান করেই সৌম্য কি করে ডাক পান?
একটি স্কোয়াড নিয়ে কোনো সফরে যাত্রার পর সে সফরে মূল একাদশের কেউ খারাপ করার পরে স্কোয়াডের অন্য একজনকে সুযোগ না দিয়ে ফর্ম যেমনই হোক সৌম্যর শরণাপন্ন হতে হয় কেন? কি করে স্কোয়াডের বাইরে থেকেও হুট করে গিয়েই তিনি মূল একাদশে সুযোগ পেয়ে যান?
উচ্চকন্ঠে প্রতিবাদী হবার আগেই আমিই বরং স্ব-উদ্যোগে তিনটি ফরম্যাটে তার আমলানামাটা একটু তুলে ধরি সকলের সুবিধার্থে। আজকের অসাধারণ ইনিংসটিসহ সর্বশেষ নয় টেস্টে তিনি বিশের বেশি করতে পেরেছেন মাত্র একবার। টি টোয়েন্টিতে সর্বশেষ এগারো ইনিংসে বিশের বেশি করতে পেরেছেন সাকুল্যে একবার। এবং সর্বশেষ আঠারোটি ওয়ান ডে ইনিংসে ত্রিশের বেশি করেছেন চারবার। এর মধ্যে আবার একটি যে সেঞ্চুরিও আছে সেটা আমিই ইয়াদ করিয়ে দিচ্ছি তবে সেটি প্রতিপক্ষসহ। যেটি ছিল জিম্বাবুয়ে। তার আরো একটি চোখ ধাঁধাঁনো ইনিংসে প্রতিপক্ষ ছিল পরাক্রমশালী আয়ারল্যান্ড!
যে তথ্যটা আমি তুলে ধরলাম তা সৌম্যের সুসময়; যার স্থায়ীত্বকাল ছিল মাত্র দুটো সিরিজ তার পরের সময়টুকুর। ওপেনিংয়ে বাংলাদেশের সমস্যা নয়া কিছু না। এক তামিমকে বাদ দিলে বাকিদের হালত হতশ্রী। যাকে হটিয়ে সৌম্যের উইন্ডিজের বিপক্ষে দলে ঢোকা সেই লিটনও ব্যাট হাতে খাবি খাচ্ছিলেন সত্য। একই হালত ইমরুলেরও। কিন্তু এই নওবাতের মাঝে সৌম্য কি এমন করে ফেললেন যে তার দ্বারস্থ হওয়া বৈ কোনো বিকল্প পেলেন না নির্বাচকরা? লিটনের মান নিয়ে সন্দিহান খুব কম বিশ্লেষকই। বারবারই বলা হচ্ছে তাকে কিছুটা সময় দেয়ার জন্য। যেটি মুশফিকের বেলায় করা হয়েছিল বলেই আমরা আজ বিশ্বমানের এক ব্যাটসম্যান পেয়েছি। সেটিতে নির্বাচকদের অনীহা এবং সৌম্যে শত সমালোচনার পরেও ঢালাও সাফাই সাওয়ালতো তুলবেই। এই ম্যাচেরই স্কোয়াডে আরেক ওপেনার রয়েছেন; যিনি ঘরোয়া লিগে দারুণ ছন্দে রয়েছেন। তাকে খোদ নির্বাচকরাই বলছেন তিনি নাকি যথেষ্ট পরিণত। তাহলে, তার ওপর ভরসা করতে দোষ কোথায়? নাকি একই টেস্টে দু’জন নতুন মুখকে খেলাতে লাজ এসে ভর করেছে হঠাৎ? এমনটাও তো হবার কথা না, কারণ; নিকট অতীতে যা দেখা যাচ্ছে তাতে নির্বাচকরা কানে যেমন তুলো গুজেছেন চোখেও কালা চমশা পড়েছেন বলেই মনে হয়; যার ফলে শত আলোচনা সমালোচনার কিছুই তাদের স্পর্শ করে না। সুতরাং, আচানক লাজ হারানোর ভয়ে সৌম্যকে ব্যবহার করে ঘোমটা দেয়ার কথাটাও বিশ্বাস যোগ্য না।
আরো একটি বিষয় হচ্ছে তার আউট হবার ধরণ। প্রথম ইনিংসে অনেকেই বলেছেন ঐ রকম বলে যে কেউই আউট হতে পারতেন। মানলাম হক কথা। তো, তেমন এক বলে তো লিটন গত টেস্টে আউট হয়েছিলেন। সেটি বিবেচনায় আসে না? আর প্রথম ইনিংস বাদ দিয়ে যদি দ্বিতীয় ইনিংসের কথায় আসি সেটি আরো তেতো শোনাবে। দিনের শেষ সেশন, যখন পিচে বল ফনা তুলে আঘাত হানার চেষ্টা করছে সেখানে টেস্টের বদলে টি টোয়েন্টি মেজাজের ব্যাটিংও যদি বিতশ্রদ্ধ না করে কিসে করবে অধমের জানা নেই।
সৌম্য তো এক দুই ইনিংস না, বরং বহুদিন ধরেই রানক্ষরায় ভুগছেন। এটি থেকে বেড় হয়ে আসার আন্তরিকতা কি তার মধ্যে লক্ষ্য করা গিয়েছে? যারা ক্রিকেটের নিয়মিত খোঁজ রাখেন তারা অবগত যে, নেটে বা প্র্যাক্টিসে সবচেয়ে বেশি সময় ব্যায় করা মানুষটির নাম মুশফিক। সাকিবও যখনই সমস্যা মনে করেন, ছুটে যান শৈশবের গুরুর কাছে সালাহ নিতে। সৌম্যের বেলায় এমন নজির উপস্থাপন সম্ভব? উল্টো তিনি বলেছিলেন, তার ঠিক কোথায় সমস্যা তিনি নিজেই জানেন না!
সাদা চোখে স্পষ্ট যে তার পা ঠিক মত চলে না, সমস্যা রয়েছে টেকনিক এবং টেম্পারেও। একই সাথে বলের মেরিট বুঝে তাকে শায়েস্তা করার ক্ষমতাও তেমন নেই। আপনি যদি শুরুর দিককার কথা ইয়াদ করিয়ে আমার তোলা সাওয়ালগুলো আমার দিকেই নিক্ষেপ করতে চান, তাহলে বলে রাখি; তিনি তখন ছিলেন ফর্মের চূড়ায়। ঐ অবস্থায় কারো মান যাচাই সম্ভব না। মোস্তাফিজও মাঝে খেই হারিয়েছিলেন। তার বেলায় সমালোচনার বদলে যেটি কাজ করছিল সেটি হচ্ছে ভয়। কারণ, মোস্তাফিজের মান নিয়ে কারো দ্বিধা নেই। এবং যদি ভালো করে খেয়াল করেন, মোস্তাফিজ কিন্তু সময়ের সাথে সাথে নিজেকে ঠিকই ফিরে পাচ্ছেন। আর সৌম্যর হয়ে নিত্য নতুন যোগ্যতার বয়ান দিতে হচ্ছে নির্বাচকদের!
আমাদের দেশে অবশ্যি এটা নতুন কিছু নয়। সঙ্গত কারণেই নাম না উল্লেখ পূর্বক একজন সাবেক প্রধান নির্বাচকের সময়কালের ঘটনা তুলে ধরবো। হঠাৎই ইয়াদে এসে গেল কি না! তিনি বরাবরই রাজশাহী অঞ্চলের খেলোয়াড়দের ওপর ছিলেন দুর্বল। তো, সে অঞ্চল থেকেই এমন এক অলরাউন্ডার খুজে বার করলেন যে লেখক অধম বিষম খেয়ে বসে ছিল যে, কোন যোগ্যতায় তাকে অলরাউন্ডার বলা হয়? যাই হোক মন দিলাম তার কলার প্রদর্শনী দেখতে। তাতে আরো পেরেশান হবার যোগার। বহু কষ্টে একদিন আবিষ্কার করলাম যে জাতীয় সংগীত গাইবার সময় তিনি জীবন দিয়ে গান। জাতীয় সংগীতের সময় স্বভাবতই আমরা আবেগপ্রবন হয়ে পরি। কিন্তু, চোখ বুজে এটি গাইবার যোগ্যতায় জাতীয় দলে খেলার নজির বোধ করি ধরণীতে তিনিই স্থাপন করেছিলেন।
সৌম্যরও নিশ্চয় এমন কোনো গুণ আছে বৈকি যা অধমের নজরে আসেনি। একজন সাংবাদিক হিসাবে বাদই দিন, বাংলাদেশি হিসাবে আমার অধিকার রয়েছে দলের জন্য যারা সেরা তাদেরকেই দলে দেখতে চাওয়ার; কারণ যে জার্সিটা গায়ে খেলোয়াড়রা প্রতিনিধিত্ব করেন এবং যাদের প্রতিনিধিত্ব করেন আমিও তাদের একজন। নির্বাচকদের নিত্য নতুন যোগ্যতা আবিষ্কারের শ্রম দেখবার চেয়ে আমি যোগ্য কাউকেই দলে দেখতে চাই, কোনো দুধভাতকে না।
হালতের যে হাল, পাড়ার ক্রিকেটে বর্তমানে যারা দুধভাত হিসাবে খেলছেন তারাও না কয়দিন পর আন্দোলনের ডাক দিয়ে বসেন, তাদের অবমাননার দায়ে! সমস্যাটা হলো, চারিত্রিকভাবেই আমরা বাকিদের চেয়ে আলাদা। অন্য দেশে যেখানে দেশের স্বার্থ আগে দেখা হয় আমাদের এখানে সেটি হয় ব্যক্তিস্বার্থ। আপনি লিখে রাখুন, বর্তমান নির্বাচক প্যানেলে পরিবর্তন আসলে সৌম্য নামের কেউ যে দিস্তার পর দিস্তা কাজগের অপচয়ের হেতু হয়েছে সেটিই ভুলতে বসবেন। কিন্তু, সমস্যাটা হচ্ছে তখনো নিস্তার মিলবে না, তার যায়গা নিবেন একই যোগ্যতার আরো একজন।
যাই হোক, দলকে যে হালতেই রাখুন আদমি যে আমার আস্থার প্রতিদান নিয়তই দিয়ে যাচ্ছেন তাতে আমি প্রীত! এমন নিঃস্বার্থ ভালোবাসাই বা কয়জন দেখায় বলুন? তাই বলতে বাধ্য হচ্ছি :
আহ্ সৌম্য !!!
বাহ্ সৌম্য !!!