জয়তু সৌম্য! জয়তু বাংলাদেশ !

জয়তু সৌম্য! জয়তু বাংলাদেশ !

সৌম্যকে নিয়ে এক নয়া মুসিবতের মধ্যে আছি। আদমিকে নিয়ে যতবারই লিখতে চাই প্রত্যেকবারই শৈশবের কোনো  না কোনো স্মৃতি মনে পড়ে যায়। এর আগে একবার দুতভাত’র সময় স্মরণ করিয়ে দমেছিলেন তিনি। এবারও তাকে দেখে শৈশবেই ফিরেছি। তবে, এবার কৃতিত্বটা সৌম্যর একার না, আমাদের নির্বাচকদেরও।

আমার এক বন্ধু ছিল, মাথা গরম গোছের। ক্ষেপালে তো বটেই সাধারণ কথাতেই আদমি ফুঁসে উঠত ফোঁস করে। তো এই বিপদ থেকে রক্ষা পেতে তাকে একটি সালাহ দিয়েছিলাম যেটি পরে শান্তি হারামের হেতু হয়েছে। কথায় কথায় বলেছিলাম, কি দরকার সবার কথার জওবাব দেয়ার? সোজা হোক বা বক্র যা শুনবি ঠোঁটে একটা হাসি নিয়ে চুপ করে বসে থাকবি, দেখবি কেউ আর তোকে ঘাটাবে না। সরল মনে দেয়া সে পরামর্শকে সে যে এত গুরুত্বের সাথে নিবে তখন সেটা ভাবিনি। এরপর থেকে বক্র কথার জওয়াবে তো বটেই সোজা সাপ্টা কথাতেও ঠোঁটে হাসি মেখে বসে থাকত। এখন সন্দেহ হয়, আমার সালাহয় সুস্থ একটা আদমি বেবোধই হয়ে গেল কি না?

আচমকাই সে বন্ধুর কথা ইয়াদে আনলেন নির্বাচকরা সৌম্যকে দলভুক্ত করে। সৌম্যের টেকনিক, ফর্ম, টেম্পার নিয়ে বিস্তর সমালোচনা হলেও নির্বাচকরা বোধ করি পণ করেছেন যে, কটাক্ষ যতই হোক যেমনই হোক ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে নিজেদের যেটা সহীহ ঠেকে সেটাই করবেন। কতক্ষণ আর লিখবেন সাংবাদিকরা? সমালোচকরাই বা চাপা চালাবেন কতক্ষণ? তাই, গণমাধ্যম রানের ফোয়ারা ছোটানো তুষারের পক্ষে বিস্তর লিখলেও নির্বাচকরা পুরো উল্টো পথে হেঁটে দলে টানলেন সেই সৌম্যকেই। এর কোনো তাশহির তাদের কাছে আছে বলে মনে হয় না। যাই হোক, আমি অন্তত সৌম্যের কাছে কৃতজ্ঞ। তাকে দুধভাত বলা যে যথার্থ ছিল সেটি প্রমাণের জন্য আদমি দুই বলের বেশি অপেক্ষা করাননি আমাকে। অন্তরের গভীর থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই তার এই উদারতার জন্য।

পিচ নিয়ে এত আলোচনাও যে কর্তারা গা করেননি তা সকালেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। এবার আবারো রঙ্গমঞ্চে হাজির ফাটা পিচ। পয়লা দিনই ব্যাটসম্যানদের নৃত্যকলার যে পরীক্ষা নিয়েছে পিচ তাতে সামনে চারদিন কি অপেক্ষা করে রয়েছে তা অনুমানে খুব একটা কষ্ট হয় না। লিখলাম তো চারদিন, তবে পয়লা দিনেই পিচের যে হালত দেখলাম তাতে পুরো পাঁচদিন খেলা হলে সেটা বিস্মিতই করবে।

খালেদ, রাহী, আরিফ; ঠিক কার জন্য সমবেদনা অনুভব করব সেটি ঠাহর করতেও কষ্ট হচ্ছে। একজন যখন প্রস্তুতি ম্যাচে পঞ্চাশ মেরেই বর্তে যান তখন অন্যরা জাতীয় দলের পরিবেশ বোঝার আগেই ছিটকে পড়েন। গেল উইন্ডিজ সফরে রাহী বেশ করেছিলেন। খুব একটা খারাপ করেননি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও। তার পুরষ্কার হিসাবে এবার স্কোয়াড থেকেই বাদ তিনি! শ্যানন গ্যাব্রিয়েল যে আগুনটা ঝরালেন তাতে ম্যাচ শেষে খালেদের অনুপস্থিতি আফসোসের জনম দিতেই পারে। সবচেয়ে মজার হচ্ছে কে যে কখন দলে ঢুকছেন আর বের হচ্ছেন সেটির হিসাব রাখার জন্যই আলাদা একজন আদমি প্রয়োজন। কেনই বা বাদ পড়ছেন তাও বোধ করি কারো কাছেই পরিষ্কার না।

আরেক মজার বিষয় বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডার। গত ম্যাচেই অভিষিক্ত মিথুন নামলেন চারে, আর দলের মূল স্তম্ভ ছয়ে! কোন ভাষায় এর তারিফ করা যায় জানা নেই। মাঝে মধ্যে মনে হয় ম্যানেজমেন্টর সাথে কর্তারাদের সত্যজিৎ এর উপর ব্যাপক দূর্বলতা রয়েছে। হীরক রাজার দেশে একেকজন কমপক্ষে হাজার বারের ওপরে দেখেছেন। নতুবা, এই রুপ খামখেয়ালীর আর কি তাশহির থাকতে পারে?

কর্তার খেয়াল যে কর্মীর ওপরও ভর করবে এতে আর আশ্চর্য কী? সৌম্যর কথা নতুন করে উল্লেখ নিষ্প্রয়োজন। ইমরুলও আজকে যা দেখালেন তা তো লা জওয়াব। একদমই অচেনা এক বোলারকে পয়লা মোলাকাতেই সীমানা ছাড়া করতে গেলেন টেস্টে! ফলাফল? ওৎ পেতে থাকা ফিল্ডারের হাতে ধরা! বিধাতার খেয়ালে নো বলের কল্যান্যে বেঁচে গিয়ে যে কলা তিনি দেখালেন, সেটি ছিল চিরায়ত টেস্ট খেলার ধরনকে কাচকলা দেখানোর মত। জীবন পাবার রোমাঞ্চে এরপর রঙ্গই দেখালেন তিনি। শুরুতেই উইকেট হারানোর পর নিজে একবার জীবন পাবার পর তার বাসনা জাগল রিভার্স সুইপ খেলার! তাতে বিপদ না ঘটলেও তাকে বিদায় করতে লাঞ্চ পর্যন্তও অপেক্ষা করতে হয়নি উইন্ডিজকে।

বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের প্রায় পুরোটাই তো মুমিনুল ময়। ম্যাচ শেষে না হয় তার বন্দনা করা যাবে। বাংলাদেশ যে প্রথম দিন শেষে এখনো ম্যাচে টিকে রয়েছে তার কৃতিত্ব মিরাজ, তাইজুল এবং অভিষিক্ত নাঈমের। যে লেজ প্রতিপক্ষ ছাটার আগে আপনাতেই খসে পরে তাদের আশ্চর্য প্রতিরোধই দিন শেষে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে শুধু তিনশই এনে দেয়নি, বরং ফাটা পিচের ফায়দা নেয়ার সম্ভাবনা জাগিয়ে আপাতত চোখ রাঙ্গাচ্ছে ক্যারাবিয়ানদের।

বলে রাখা ভালো, এ লেখাটি লেখার সময়ই নাঈমের নাম পরের টেস্টেও নিতে পারব কি না, সে সন্দেহ উঁকি দিচ্ছে মনে।

তবে, একটি বিষয়ে সাধুবাদ জানাই। ব্যঙ্গকে রঙ্গ ভেবে তা নেহায়েত রসিকতা হিসাবে নেবার যে কলা আমাদের কর্তারা রপ্ত করেছেন তা বাহবাযোগ্য। যেটি দিতে গিয়ে মাঝে মধ্যে নিজেকেই বেবোধ বলে মনে হয়!