ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) পালিত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) পালিত

“উপমা তোমার কেউ দেখেনি কখনো কখন; তোমার মতো কেউ হয়নি সৃজন”— ঢাবি শিক্ষার্থী ইহসান ফারুকের কণ্ঠে আলা হযরত ইমাম আহমদ রেজা খাঁ বেরেলভি (র.) কর্তৃক নবীজির শানে রচিত এই নাতের মধ্য দিয়ে আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় পবিত্র ইদে মিলাদুন্নবী (দ.) উপলক্ষ্যে ‘প্রিয় নবীর আগমন মানব জাতির সমাধান : শান্তি প্রতিষ্ঠায় ও সন্ত্রাস দমনে ইসলামের অবদান’ শীর্ষক সেমিনার।

ফাইন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী ওমর ফারুক শাওন ও মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল নোমানের যৌথ উপস্থাপনায় আজ সকাল ১০টায় সিরাজুল ইসলাম লেকচার থিয়েটার ভবনে মিলাদুন্নবী (দ.) উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত এই সেমিনার উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সাইয়্যেদ আবদুল্লাহ আল মারুফ। উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন, জন্মের পর নয়; বরং হযরত নবী (দ.) জন্মই নিয়েছিলেন নবী হয়ে। সুতরাং, আজ আমরা কোনও সাধারণ মানুষের নয়, একজন জন্মগত নবীর বিলাদত (জন্ম) পালন করছি।

যারা ঈদে মিলাদুন্নবী (দঃ) কে ‘ঈদ’ মানতে নারাজ, তাদের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “হাদিসে জুমার দিনকে মুসলমানের জন্য ঈদ বলা হয়েছে। সুতরাং, ঈদ শুধু দুইটি নয়; এর বাইরেও ঈদ আছে। আর নবীজীর আগমনকে ‘ঈদ’ হিসেবে পালন করা যথেষ্ট যৌক্তিক, কারণ ওঁনার জন্ম না হলে সমস্ত বিশ্বই সৃষ্টি হতো না”

সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব ড. মুহাম্মদ এমদাদ উদ্দীন বলেন, হযরত মুহাম্মদ (দ.) শুধু মুসলমানদের জন্য নয়; বরং সমস্ত বিশ্ববাসীর জন্য রহমত স্বরূপ। তার এই বেলাদত শরিফ বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে পালিত হয়। বঙ্গভবন থেকে শুরু করে একেবারে গরীবের কুটিতে পর্যন্ত সব জায়গাতেই হয়। গুটি কতেক ‘বিভ্রান্ত মুসলমান’ ব্যতিরেকে এই নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলে না।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রফেসর ও চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আতাউর রহমান মিয়াজি বলেন,  শুধু আল্লাহকে ভালোবাসার মধ্য দিয়ে ঈমানদার হওয়া যায় না; রাসূল (দ.)-কেও ভালোবাসতে হবে।

পবিত্র কোরআন শরিফের উদ্বৃতি দিয়ে তিনি আরও বলেন, শুধু ভালোবাসা নয়; বরং সর্বোচ্চ ভালোবাসতে হবে। মিলাদুন্নবী উদযাপন প্রশ্নে ‘বিদআত’ এর কানাঘুষো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই মিলাদুন্নবী পালন কোরআন-হাদীস প্রমাণিত শুদ্ধ এবং জায়েজ। এই নিয়ে প্রশ্নের কোনও সুযোগ নাই।

হযরত মুহাম্মদ (দ.) মানবতার মুক্তির দূত হিসেবে এসেছেন উল্লেখ করে পবিত্র কোরআনের  সূরা আম্বিয়ার ১০৭নং আয়াত-এর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যে নবী ইসলাম ধর্ম নিয়ে এসেছেন, বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হিসেবে এসেছেন, তিনি তো আরবের জাহেলিয়াত-অনাচার দূর করবার জন্যই এসেছিলেন; সুতরাং তার ইসলাম কখনও জঙ্গিবাদকে প্রশ্রয় দেয় না।

অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবুল হোসেন, আরবি বিভাগের সহকারি অধ্যাপক  আহমাদ হাসান চৌধুরী, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের লেকচারার এস এম মাসুম বাকি বিল্লাহ, মোহাম্মদপুর কাদেরিয়া আলিয়া মাদ্রাসার সিনিয়র আরবি প্রভাষক ড. মো: নাসিরুদ্দীন নঈমীসহ প্রমুখ অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের ১২ই রবিউল আওয়াল তারিখে জন্মগ্রহণ করেছিলেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (দ.)। একে উপলক্ষ্য করে আজ সারাদেশের সকল শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান ও সরকারি অফিস-আদালতে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।