ওয়েন রুনি: ফুটবলার হয়ে ওঠার গল্প

ওয়েন রুনি: ফুটবলার হয়ে ওঠার গল্প

ইংলিশ ফুটবলের রাজপুত্র ওয়েন মার্ক রুনি লিভারপুলের ক্রসস্টেথে ১৯৮৫ সালের ২৪ শে অক্টোবর থমাস রুনি ও জিনেট ম্যারি নামক আইরিশ পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। থমাস রুনির তিন ছেলে ওয়েন রুনি, গ্রাহাম রুনি এবং জন রুনির মাঝে ওয়েন রুনি সবার বড় ছিলেন। ওয়েন রুনি সম্ভ্রান্ত ক্যাথলিক পরিবারের ছেলে ছিলেন। তাছাড়া তার বাবা ব্যবসায়ী হওয়ার সুবাদে পড়ালেখাও করেছেন ইংল্যান্ডের সনামধন্য আওয়ার লেডি এন্ড সেন্ট স্মিথিন প্রাইমারি স্কুলে। ছোটবেলায় রুনি স্কুলে ফুটবল খেলা অবস্থায় তার বলটি স্কুল কর্তৃপক্ষ জব্দ করেন। এতে রুনি প্রচণ্ড রেগে গিয়ে স্কুলের ল্যাবের দেয়ালে লাথি মারে। তাতে ল্যাবের অনেক দামি জিনিস নষ্ট হয়ে যায় এবং এর শাস্তি স্বরূপ তাকে দুই দিনের জন্য স্কুল থেকে বহিস্কার করা হয়। দুই দিন পর সে স্কুলে আসার পর ল্যাবের দেয়ালে লাথি মারার কারণ জানতে চাইলে ছোট্ট রুনি উত্তর দেন, তার বল স্কুল কর্তৃপক্ষ জব্দ করার সে খুব রেগে গিয়েছিলো। ছোটবেলা থেকে ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা থাকলেও তার ফুটবল প্রতিভার বহিঃপ্রকাশ হয় দে লা সাল্ল হিউম্যানিটি কলেজে যোগ দেয়ার পরে। স্কুল জীবনে রুনির ফুটবলের প্রতি আকর্ষণ দেখে তার বাবা থমাস রুনি তাকে ইংলিশ ক্লাব এভারটনের যুব দলে ভর্তি করে দেন। তখন তার বয়স ছিল মাত্র নয় বছর। স্কুল,পড়ালেখা ফুটবল প্র্যাক্টিস সব কিছু মিলিয়ে বেশ চলছিলো রুনির শৈশব।

ষোল বছর বয়সে জোড়ালো শ্যূট ও বলিষ্ঠ শরীরের রুনি ইংলিশ ম্যামের প্রেমে পড়লেন। প্রেমিকা তার স্কুল জীবনের বান্ধুবী কোলিন মেরি ম্যাকলফলিন। প্রেমে পড়ার পরের বছরেই ডাক পেলেন এভারটন এফসিতে। সে বছরেই মাত্র ১৬ বছর ৩৬০ দিন বয়সে গোল করে রুনি প্রিমিয়ার লিগ ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সে গোল করার রেকর্ড করেন। সেই ম্যাচে রুনি দুইটি গোল দিয়েছিলেন। ২০০২-২০০৪ সাল পর্যন্ত দুই সিজনে ৬৭ ম্যাচ খেলে ১৫ গোল করেন এই এ্যাটাকিং মিডফিল্ডার। তার দুই সিজনের পারফর্মেন্স দেখে মুগ্ধ হয়ে তাকে দলে ভেড়ান ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের লিজেন্ড কোচ স্যার এ্যালেক্স ফার্গুসন। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের তারকা খচিত দলে যোগ দেয়ার পর ই যেন রুনির ফুটবল জাদু কলি ফুটে ফুটন্ত ফুলে রূপ নিলো।

যার সুবাস ইউনাইটেড শিবিরে ছড়িয়েছে দীর্ঘ ১৩ বছর। এই ১৩ বছরে ইউনাইটেডের হয়ে খেলেছেন ৩৯৩ টি ম্যাচ এবং গোল করেছেন ১৮৩ টি। ২০০৮ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার অন্যতম কারিগর ছিলেন এই ইংলিশ জেন্টেলম্যান। ২০০২ সালে প্রফেশনাল ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু করার পর পর ই ডাক পেয়েছিলেন ইংল্যান্ড জাতীয় দলে। জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন প্রায় ১৫ বছর। এর মাঝে ইংল্যান্ড ফুটবল ইতিহাসে লিখে নিয়েছেন নিজের নাম স্বর্নাক্ষরে। ১২০ ম্যাচ খেলে ইংল্যান্ডের ২য় সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার রেকর্ড এবং ৫৩ গোল করে ইংল্যান্ড জাতীয় দলের সর্বোচ্চ গোল স্কোরারের রেকর্ড নিজের করে নেন ওয়েন রুনি।

২০০৮ সালে চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়সহ তখন চলছিলো ক্যারিয়ারের সব চাইতে ভালো সময় আর তখনই নিজের জীবনের সব চাইতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন রুনি। ১২ জুন ২০০৮ সালে তার স্কুল জীবনের প্রেমিকা কোলিন মেরি ম্যাকলফলিনের সাথে বিয়ের বাঁধনে আবদ্ধ হন। পেশাদারী ফুটবলার হলেও তিনি ছিলেন অসাধারন রোমান্টিক। তার প্রেমিকাকে উৎসর্গ করে লিখা কবিতাগুলো তার নিদর্শনমাত্র। বিয়ের এক বছর পরেই রুনি দম্পতির প্রথম সন্তান জন্মগ্রহন করেন। তার নাম দেয় কাই ওয়েন রুনি।

২০১৩ সালের ২১ শে মে দ্বিতীয় সন্তান ক্লে এ্যান্থোনি রুনি ও ২০১৬ সালের ২৪ জানুয়ারি তৃতীয় পুত্র কিট জোসেফ রুনি জন্ম গ্রহণ করেন। ক্যারিয়ারের মাঝ পথে এসে জীবনে বেশ কয়েকবার উত্থান-পতনের মুখোমুখি হোন এই ইংলিশ ফুটবলার। সে সময় ফুটবল মাঠে জুয়া খেলার অপরাধে রুনির বাবাকে গ্রেফতার করেন লন্ডন পুলিশ। যদিও তার কয়েকদিন পরই ছাড়া পেয়ে যান তিনি। ২০১১ সালে আবারও শিরোনামের পাতায় ওয়েন রুনি। এবার বিতর্কিত হন নিজেকে নিয়েই। কোকাকোলার একটি অ্যাড করার সময় তার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের মামলা করেন এক নারী যদিও তা পরবর্তীতে মিথ্যা প্রমানিত হয়েছে। সে সময় রুনিকে তার স্ত্রী কোলিন মেরি যথেষ্ট পরিমানে সাহস যোগায়। তিনি পরবর্তীতে তাদের বাড়ির দৈনন্দিন জীবন নিয়ে ‘দ্যা ম্যান বিহাইন্ড দ্যা গোলস’ নামে একটি ডকুমেন্টারি তৈরি করেন। ২০১৭ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে তার আগের ক্লাব এভারটন এফ সিতে যোগ দেন। তার কিছুদিন পরেই ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ শুরুর আগ মুহুর্তে জাতীয় দল থেকে অবসরের ঘোষনা দেন রুনি। যদিও এবছর নভেম্বরের ১৫ তারিখে অবসর ভেঙ্গে আবার মাঠে নামেন রুনি এবং তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় দেয়া হয়। ২০১৮ সালে এভারটন থেকে মেজর টুর্নামেন্টের ক্লাব ডিসি ইউনাইটেডে যোগ দেন।