মুশফিকের মুসকানে ম্লান মাসাকাদজা

মুশফিকের মুসকানে ম্লান মাসাকাদজা

মুশফিক মানেই মুসকান, মুশফিক মানেই মুগ্ধতা। প্রথম বাংলাদেশি হিসাবে একাধিক ডাবল সেঞ্চুরির মালিক এখন তিনি। সাথে বাড়তি পাওনা টেস্টের এক ইনিংসে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের ইনিংসও। আর তাতেই ম্লান মাসাকাদজার মুখের হাসি।

ব্যাটিং ক্রম মানলে তিনি একজন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। কিন্তু টপ অর্ডারের নিয়মিত ‘সাফল্য’এ তাকে প্রায়শ নামতে হয় ইনিংসের শুরুতেই। এ ম্যাচেই যখন ব্যাটিংয়ে নামেন তখন ধুকছে বাংলাদেশ। সেখান থেকে মমিনুলকে নিয়ে প্রাথমিক বিপর্যয় সামাল দিয়েছেন রেকর্ড জুটি গড়ে। এর মাঝে মমিনুলের সেঞ্চুরির কারণে প্রথম দিনের আলোটা তাকেই ঘিরে ধরেছিল। কিন্তু, যেদিন মুশফিক ছন্দে থাকেন তখন কার সাধ্য নিজের দিকে পুরো আলো টেনে নেয়ার?

সেই যে গতকাল সকালে নামলেন আজকে ইনিংস ঘোষণার আগ পর্যন্ত ক্রিজে ছিলেন, খেলেছেন ৪২১ বল। ডাবল পূর্ণ হবার পরে তার মুসকুরাহাটটি মনে গেথে থাকবে অনেকদিন। আর ডাবলে পৌছানোর পূর্বে মিরাজকে নিয়ে গড়েছেন আরো একটি রেকর্ড জুটি। সবচেয়ে নজরকাড়া বিষয় হচ্ছে ৪২১ বলের মধ্যে তাকে আউট করার সুযোগ সে অর্থে দেননি বললেই চলে। যেভাবে ক্রিজে জমে গিয়েছিলেন ইনিংস ঘোষণা না করলে তাকে আউট করা সম্ভব বলে মনে হচ্ছিল না একবারো।

মুশফিক-মমিনুলের ওপর ভর করে যে পর্বতসম সংগ্রহ দাড় করিয়েছে বাংলাদেশ তার জওয়াব দিতে নেমে দিনের শেষে একটি উইকেট খুইয়েছে মাসাকাদজার দল। উইকেট পতনের চেয়ে বেশি চোখে পড়েছে খালেদ আহমেদকে। মিথুনের ক্যাচ আরিফুল বাগড়া দিয়ে হাতছাড়া না করলে স্বপ্নের মতন শুরুই হতে পারত সিলেটের এই সন্তানের। কিন্তু তাকে যেমন দেখলাম তাতে সঠিক পরিচর্যা পেলে তাকে নিয়েই স্বপ্ন দেখতে পারে বাংলাদেশ।

প্রথম ওভারটিতে লাইন খুঁজে পেতে সমস্যা হলেও যে আগ্রাসী মনোভাবটা দেখা গিয়েছে এমনটি বাংলাদেশের পেসারদের মাঝে শেষ কবে দেখেছি ইয়াদেও নেই। গতি তার প্রধান অস্ত্র বলা হলেও বলে কাজও রয়েছে বেশ। ওয়ালশের মতন জহুরীর হাতে পড়লে খালেদের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে পরিপূর্ণ মুক্ত হিসাবে প্রকাশ পাওয়ার। আর অপর প্রান্তে মোস্তাফিজ ছিলেন তার নিজের মতন, ব্যাটসম্যানকে একাধিকবার নাড়িয়ে দিয়েছেন বৈচিত্র্যে।

প্রত্যাশার পারদ বাড়াবো না। কিন্তু, এই টেস্টে যে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে খেলতে দেখা যাচ্ছে সেটা কেন দু এক ম্যাচ পরপরই উধাও হয়ে যায় সে সাওয়ালটি মনে উঁকি দিচ্ছে। দিনের শেষে যে আক্রমণাত্বক ফিল্ডিং সাজানো দেখলাম তাও মুগ্ধ করার মতন। এইটাই তো টেস্ট। ইতিবাচক এবং আগ্রাসী। এ মনোভাব নিয়ে খেলতে দেখাও সুখের।

মাঝে সামান্য ভীতি জেগেছিল মুশফিকের ডাবলের পর। তারপরই তার জন্মস্থানের নাম ইয়াদে আসায় আপাত স্বস্তি অনুভব করছি! মিরপুর টেস্ট যে ফল দেখবে এটা নিশ্চিতভাবেই বলে দেয়া যায়। এরচেয়ে স্বস্তির হচ্ছে মুশফিকের আজমাতে ক্রিকেট ফিরলো ক্রিকেটিও আলোচনায়।