দেশকে স্বৈরশাসন থেকে মুক্ত করার কৌশল হিসেবেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ

দেশকে স্বৈরশাসন থেকে মুক্ত করার কৌশল হিসেবেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ

দেশে এখন স্বৈরশাসন চলছে -বললেন নাগরিক ঐক্যের আহ্ববায়ক ও জাতীয় ঐক্যফ্রণ্টের অন্যতম নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না। নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে সংবাদ সম্মেলনের পরে যমুনা টিভির এক টকশোতে হাজির হয়ে একথা বলেন মান্না। টকশো তে আরো উপস্থিত ছিলেন মানবাধিকার কর্মী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী এবং কম্যুনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।

মান্নার কাছে সংলাপ এবং ঐক্যফ্রণ্টের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি তাদের প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে নানাবিধ অনৈতিক আক্রমনের কথা তুলে ধরেন। সংলাপের কথায় তিনি সুপষ্ট ভাবে বলেছেন সংলাপে ছাড় দেওয়ার কথা ছিল সরকারের। ঐক্যফ্রন্টর ছাড় দেয়ার কিছু নাই। তবে সংলাপে তাদের প্রাপ্তি শূন্য। তাদের কোন দাবিই মানা হয়নি বরঞ্চ হামলা এবং মামলার মাধ্যমে তাদের সাথে প্রতারণা করেছে সরকার।

নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তিনি আরো বলেন

“আন্দোলনের অংশ হিসেবেই আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি। সংলাপের মাধ্যমে দড় কষাকষি করে আমরা যে দাবী আদায় করতে পারিনি তাই এখন নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের কাছে পৌছে আমরা জনগণকে নিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে চেষ্টা করব, এবং এই স্বৈরশাসনের পতন ঘটানোর চেষ্টা করব। এই জন্যেই নির্বাচনে আমাদের অংশগ্রহণ।“

এদিকে নির্বাচনের তফসিল পেছানোর উপরেও যুক্তি প্রদর্শন করেন তিনি। তার মতে সরকার খুব সুচতুর ভাবেই নির্বাচন কমিশনকে নিয়ন্ত্রণ করেই তাদের সুবিধাজনক সময়ে নির্বাচনের তারিখ ঠিক করেছেন। এই তফসিল অনুযায়ী নির্বাচন হলে দেশে আর একটা একতরফা নির্বাচন হবে বলে মত দেন তিনি।

এদিকে তার নির্বাচনি প্রতীক কি হতে যাচ্ছে তা নিয়ে গুঞ্জন আছে এমন প্রশ্ন করা হয়, এই বিষয়ে তার কাছে জানতে চাওয়া হলে এই বিষয়েও আওয়ামীলীগ সরকারকেই দোষারোপ করেন তিনি। তার মতে সরকার খুবই চতুর এবং দুষ্টবুদ্ধি দিয়ে তাকে এবং তার দলকে  দলীয়প্রতীক থেকে বঞ্চিত করেছে। তবে আসন্ন নির্বাচনে তার নির্বাচনি প্রতীক কি হতে পারে সেই বিষয়ে কোন সুস্পষ্ট ধারণা না দিলেও তিনি তার নিজ দল এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাথে বৈঠক করেই এই বিষয়ে সকলকে জানাবেন। তবে মান্নাসহ আর কিছু ঐক্যফ্রন্ট নেতার নির্বাচন ধানেরশীষের প্রতীক নিয়েই করার কিছুটা আভাসও তার কথায় পাওয়া গিয়েছে।

সংলাপ ব্যার্থ। সারা দেশে ব্যাপক গ্রেফতারের পরেও আনন্দোলন না করে কেন নির্বাচনের পথে হাটছে ঐক্যফ্রন্ট তা নিয়ে জনমনে একটা প্রশ্নচিহ্ন থেকেই যাচ্ছে। যখন আগামী নির্বাচনে কি হতে যাচ্ছে তা সবার কাছেই পরিস্কার তখন এই নির্বাচনের পথে হেটে আসলে কতটা সয়লতা পাওয়া যাবে তা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও আওয়ামী ঐতিহ্য অনুযায়ী নির্বাচন হলে এবং সেই নির্বাচন বর্জন করে আন্দোলন করে এই দাবির দিকে ফিরে আসার সুযোগ তৈরি হতে পারে। অন্যদিকে সারা দেশের নেতা-কর্মীরা মামলা ও গ্রেফতারের কারণে স্বাভাবিক জিবন নিয়েই পেরেশানিতে আছেন। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনে আসার ঘোষণা মাঠ পর্যায়ের নেতাদের জন্য কিছুটা অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে পারে। যদিও এই ঘোষণার পরেও গ্রেফতার চলছে।

অন্যদিকে সরকারী দল চাচ্ছে নিজেদের পাতানো নকশা মোতাবেক, বিদেশী পর্যবেক্ষক ছাড়া একটি যেনতেন নির্বাচন। ভোট চুরি ও ডিজিটাল কারচুপির মাধ্যমে এই স্বৈরশাসন বজায় রাখতে। আরএকদিকে বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট চাচ্ছে এই নির্বাচনকেই স্বৈরশাসনের অবসানের উপায় হিসেবে ব্যবহার করতে। দেখার অপেক্ষা কে জয়ী হয়।

সব মিলিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর জটিল হিসেব-নিকেষের এক মৌসুম যেন শুরু হয়েছে। সমানে কি হতে যাচ্ছে তাই নিয়ে সবার মধ্যে রয়েছে উৎকন্ঠা।