অন্ধকার ভোর 

অন্ধকার ভোর 

সারারাত অবিরাম বৃষ্টির কারণে সকালটা যেন ভেজা ভেজা দরদে কাছে টানছে। জীবনের সমস্ত শূন্যতা মুক্তি পেতে চায় বর্ষার গান ঠোঁটে ধরে।

নিসার ঘুম আজ ভাঙলো ছয়টারও আগে। দু’মাস হলো ওর বিয়ে হয়েছে। স্বামী আনাম সাধারণত ওঠে দশটার দিকে তারপর নাস্তা খেয়ে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যায়। কাজ শেষে আড্ডা মেরে ফিরে দশটার পরে। এতে নিসার কোনো চ্যাতবোধ নেই কারণ আনামের জন্য কোনো অনুভূতি কাজ করে না। বিয়ের রাতকে নিসা বাসররাত ভাবতে পারে না। ভাবার কারণও নেই।

বান্ধবী, কাজিনদের কাছ থেকে বাসররাতের টুকটাক যেসব গল্প শুনেছে তার সঙ্গে নিসা কিছুই মেলাতে পারে না। নিসা টের পায় চোখে পানি জমছে। আজ আনাম আরো দেরী করে উঠেছে। নিসার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে শোনো চোখে পানি গরম না করে চায়ের পানি গরম করো। নিসা ভ্যাবাচেকা খেয়ে একশ্বাসে কিচেনে দৌড়।

নিম্ন মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে নিসার বিয়ে হয়েছে ঘটকের নানারকম মিথ্যায়। ওর বাবা সরকারি সৎ কর্মকর্তা। নিসারা দুইবোন একভাই। প্রত্যেকের জন্মের পর বাবা যার যার নামে মাটির ব্যাংকে টাকা জমান।

বেশ স্বচ্ছল পরিবারে বেড়ে ওঠা আনামের ভদ্র দুটো বোন খুব চিন্তিত থাকতো ভাইয়ের বিয়ে নিয়ে। পড়াশোনা ভাইয়া ভালোভাবে শেষ করলেও পাশাপাশি নোংরামীও রপ্ত করেছে। মদ, জুয়া, নারীনেশা, পরিবারের সঙ্গে বাজে আচরণ এগুলো নিয়ে আনামের মা, ভাই -বোনদের চিন্তার শেষ নেই। আনামের বড়ো বোন নীতার বান্ধবীর মাধ্যমে নিসা নামের মেয়েটির বিয়ের প্রস্তাব আসে। প্রথমে দুইবোনই আরেকটা মেয়ের জীবনের কথা ভেবে রাজি হচ্ছিল না। ওরা দুজনেই ভদ্র জামাই নিয়ে সন্তুষ্টির সাথে সংসার করছে। আপন ভাই’র জন্যে বিবেক হেরে যায়, এবং প্রস্তাবটি এগুতে থাকে।

বারান্দার গাছগুলো ঝাড়া দিয়ে মরা আর হলুদপাতাগুলো ফেলে নিতা আনমনা হয়ে যায়। নিজেকে একটা ঝাঁকুনি দিয়ে ছোটবোন তৃষাকে কল দেয়।

শোন বড়ো ভাইয়ার বিয়েটা নিয়ে সিরিয়াসলি ভাবা দরকার। দেখতে সুন্দর মেয়েরতো অভাব নেই কিন্তু মেয়েটা নাকি সবদিক দিয়েই অসম্ভব ভালো। যাক এবার যদি আম্মুর একজন সাথী জোটে। আম্মু এত নিঃসঙ্গ থাকে আমাদের বিয়ের পর থেকে, ভাবলেই কান্না আসে।

শোন আপু তুইতো আম্মুর কথা ভাবছিস কিন্তু বিয়েটাতো হবে আমাদের বজ্জাত ভাইটার সাথে। নিসা কন্ঠ নামিয়ে বলে তাও ঠিক, কি আর করা। নিজের ভাইটার একটা পারমানেন্ট গতি হওয়াওতো দরকার। আনামের বন্ধু শিহাব ফোন করে নিসাকে বলে শুনলাম ভাই’র জন্য কন্যা দেখছো, তা ভালো কথা তবে শোনো বিয়েতে বেশি খরচপাতি কইরো না। কয়দিন টিকে এই বিয়ে তাই দেখো।

নিসা আম্মুর বাসায় রাতে থেকে গেলো। তৃষাও স্বামীসহ বাবার বাড়ি থাকলো। ওদের বাবা তিনবছর আগে মারা গেছেন। আনামের বন্ধু শিহাবের প্রসঙ্গ নিয়ে বাসায় হইচই। রাতে আনাম ফেরার সাথে সাথেই বোনদের নালিশ, আনাম মুচকি হেসে ডাইনিং টেবিলে বললো আমি বিয়েতো দশটা করবো না কাজেই মহা আয়োজনেই বিয়ে হবে। কোনো ঘাটতি থাকবে না। সবাই খুশিতে গল্পের পর গল্প জমায়।

পহেলা আগষ্ট জাঁকজমকভাবে বিয়ে হলো। বউ নিয়ে বাড়ি ফিরে সবাই গ্রুপ ছবি, সেলফি তুলে

রাত দুটো বাজালো। নিসা ভাবে বাহ্ পরিবারটা বেশ ফুর্তিবাজ। আনামকেও গর্জিয়াস বিয়ের পোশাকে খুব ভালো লাগছিল। দেবর আদিল নিসার দিকে তাকিয়ে বলে ভাবীতো একদম শাকিলা জাফরের মতো দেখতে। বলেই মোবাইলে শাকিলার জনপ্রিয় সেই গানটা ছাড়লো। তুমি আমার প্রথম সকাল….। নিসা একটা ঝাঁকুনি খেলো কারণ এই গানটা তারও ভীষণ প্রিয়। কি জানি আনামের কোন ধরনের গান পছন্দ। বোনরা নিসাকে বুকে নিয়ে আদর করে লাল গোলাপের উপর হাঁটিয়ে আনামের ঘরে নিয়ে যায়। গোলাপ পায়ের নিচে চাপতেই নিসার হৃদয় কচকচ করে। বিষয়টা এড়িয়ে নিসা স্বাভাবিক হতে থাকে। হলুদ গোলাপ, গোলাপী রঙের লাইটিং আর দেয়ালজুড়ে রজনীগন্ধার  বাসরঘরে নিসাকে লাগছিল এমাত্র জন্ম হওয়া গোলাপী শিশু। নিসার মুখের দিকে তাকিয়ে আদিল ভাবতে থাকে এই মুখটা মেকাপ ছাড়া আর সুতি শাড়িতে কেমন লাগবে।

নিসা শান্ত মেয়ে হলেও তার দৃষ্টি শক্ত। আনাম রুমে ঢুকেই নিসাকে বলে আমি একঘন্টা পর আসবো। বিয়েবাড়ির সবাইকে অবাক করে গ্যারেজ থেকে গাড়ি বের করে বেরিয়ে যায়। আনাম ভাবে সেতো ওয়াইফকে বলেই বের হলো, সমস্যারতো কিছু নেই। প্রায় দেড়ঘন্টা পর আনাম রুমে আসে। এসেই গোলাপী বাতি নিভিয়ে টিউবলাইট জ্বালায়।

আচ্ছা নিসা দেয়ালজুড়ে রজনীগন্ধাগুলোকে কেমন যেন অগোছালো লাগছে, গোলাপগুলোর ঘ্রাণে কেমন যেন বমি আসতেছে।

নিসা তাড়াতাড়ি গোলাপগুলো বিছানা থেকে ফ্লোরে ফেলতে থাকে। আনাম বিছানায় হেলে পড়ে।

শোনো নিসা তুমি আমাকে রাতে ডাকবে না। কেউ কখনো ডাকলে আমি ভাঙচুর করি।

নিসা এই প্রথম বাস্তবে মাতালকন্ঠে কথা বলতে কেউকে দেখলো।

বিয়ের সাতদিন পর আনাম নিসাকে মোবাইলে মেসেজ দেয়, তোমার সাথেতো এখনও ভালোবাসাই হলো না, আজ হবে। আজ রাতে মদ অল্প খাব। অল্প খেয়ে আদর করতে আমার খুব ভালো লাগে।

অপেক্ষায় থেকো বউটি আমার।

সন্ধ্যার পর থেকে নিসা এমন জঘন্য মেসেজ পেয়েও আনামের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।

আজ নয়টায় ফিরলো আনাম।দরজা বন্ধ করতেই নিসা শিহরনে স্থির হয়ে পড়ে।

সকালে আদরগলা রোদে আনামকে নিসা দেখতে থাকে। নিসা সারাদিন ভাবে স্বামীকে সারাজীবন খুব ভালোবাসবে।

আনামকে কয়েকবার লজ্জা ফেলে কল দেয়। প্রতিবারই আনাম লাইন বিজি করেছে। রাতে ফিরেছে নেশা করে। নিসা দেখছিল আনাম স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছে কিন্তু ওর শরীরটা যে ভেতরে ছুটাছুটি করছে বোঝাই যায়।

আদিল ভালোই জানে তার ভাই বউটাকে কেমন রাখতে পারে। বাসায় দুটো কাজের লোক থাকায় নিসাকে তেমন কিছু করতে হয় না। আদিল চায়ের কাপ গালে লাগিয়ে বলে শোনো ভাবী তোমাকে নিয়ে আমি আগামীকাল নাটক দেখতে শিল্পকলা একাডেমি যাবো।

শাশুড়িও বললো হুম নিয়ে যা, বাসায় সারাদিন মেয়েটা একা কীভাবে সময় কাটায় তা নিয়ে আনামের কোনো ভাবনা আছে নাকি।

ভাবী তুমি অফহোয়াইট বেইজে যে কোনো সুতি শাড়ি আর মেটালের জুয়েলারি পরবে।

আদিল আর নিসা এভাবে প্রায়ই প্রোগ্রাম দেখতে বের হয়। আনাম যেন হাফ ছেড়ে বাঁচে। নিসার কোনো অভিযোগ নেই চাহিদাও নেই। এরকম একটা মেয়েই সে বউ হিসেবে চেয়েছিল। তার স্বাধীনতা বিয়ের পর এতটুকু কমেনি অন্য বন্ধুদের মতো।

নিসা রুপালী রঙের শাড়ি পরে অমাবস্যার রাতে ছাদে লেবুপাতা ডলে গন্ধ নিতেই আদিলের ঘ্রাণে চমকায়। দুজনেই আঁধারকে আরো কাছে নিয়ে দূরে সরে যেতে চাইলেও পারলো না। আঁধারও যে এত রঙিন হয় চোখ বুঝি আজই জানলো।

নিসা তুমি আজ রাতে আমার কাছে আসবে?

নিসা একগোছা লেবুপাতা ছিঁড়ে আদিলের হাতে দিয়ে বললো তোমার আঙুলগুলোতে পাতা ঘঁসো। আমি রাত দুটায় আসবো। অমাবস্যা রাতে আমরা জোছনা হবো। শরবতী জোছনা জানে প্রেম যখন চোখ থেকে হৃদয়ে ঘুরে তখন অযৌক্তিক হতেই লোভ জাগে।

সকালে নাশতা খাওয়ার সময় দুজনেই লেবু চায়ের ফরমায়েশ দিলো। আদিল অফিসে গেলো আনচান মনে, বারবার থামছিল নিসার চোখে।

আনাম নিসাকে বললো আগামী সপ্তাহে আমাদের ম্যারেজ ডে। প্রথমবার বেশ আয়োজন করেই করবো। তুমি ওইদিন আমার সাথে একটু ঢলাঢলি করবা। কারণ আমার দুজন গার্লফ্রেন্ড আসবে। ওরা যখন দেখবে তোমার আমার রোমান্টিকতা তখন জ্বলতে থাকবে। দুজনের মধ্যে একজন আরেকজনকে চেনে না। এটাই মজা দেখার বিষয়। দুজনেই জানে আমি জাস্ট ফ্রেন্ডদের চাপে পড়ে এই ডে ফে যাপন করতে যাচ্ছি।

আচ্ছা আদিল তোমার ভেতরের ইচ্ছাটা আসলে মজা দেখা, তাইতো?

ওকে আমি ঢলাঢলির বন্যা বইয়ে দেব।

তুমি খুশিতো?

হুম, তুমি যে ঘাউড়া রাজি হবে ভাবিনি।

থ্যাংকস নিসা।

নিসা ভেবে পায় না এই অদ্ভুত সংসার কেন করছে।

নিসা কয়েকদিন থেকে চাকরি করার কথা ভাবছে। শাশুড়ি রুবিকে বিষয়টা কালই জানাবে। স্বামী আনাম বাঁধাও দেবে না আবার উৎসাহও দেবে না। এটা নিসা ভালোভাবেই জানে।

শরতকালে নিসা একটু পরপরই আকাশ দেখে।

ঘুম থেকে উঠেই বারান্দায় গিয়ে গ্রিলের খোপে চিবুক ঢুকিয়ে চোখ উঁচুতে তুলে শরতের আকাশে বেদনাগুলো ভাসিয়ে দেয়। তারপর হাতপায়ের অলসতা ঝেড়ে ফ্রেশ হতে যায়।

নিসা রুম থেকে বের হতেই রুবি চিৎকার করে বললো শোনো নিসা আজ প্রথম আলোয় মহাদেব সাহার কবিতা ছাপা হয়েছে। পেপার হাতে নিয়েই নাশতা গোছাতে লাগলো রুবি। আদিল, নিসা খেতে বসতেই রুবি কবিতার কয়েকলাইন জোরেজোরে পড়তে লাগলো..

আমি কি তোমার জন্য এই বুকে

জাগাইনি হাহাকার ধ্বনি

দীর্ঘশ্বাস করি নাই আমার সতত সঙ্গী

চৈত্রের দুপুরে হই নাই বিষন্ন মলিন

ঝরা পাতা?

 

নিসা সবার চায়ের কাপে চোখ ঘুরিয়ে নিল।

তার কথাটা কতটা গুরুত্ব পাবে একটু মেপে নিল।ধাম করে বলেই ফেলল, মা শুনুন আমি অনেক ভেবে দেখেছি এভাবে আমি জীবন কাটালে অসুস্থ হয়ে পড়বো। আর তাই আমাকে চাকরি করতে হবে। আদিল কাপে মুচকি ঠোঁট চেপে নিসাকে দেখল।

শোনো ভাবী আমি তোমাকে পুর্ন সহযোগিতা করব।

রুবিও খুশিমনে বললো হুম ঠিক আছে এখন থেকে চাকরি খোঁজো।এমনসময় নিতা ফোন দিল।রুবি

হাসির সুরে বলে শোন নিসা চাকরি করবে।

শুনেই নিতা বলে কি বলো আম্মু,  তাহলেতো তুমি একদম নিঃসঙ্গ হয়ে যাবে।

শোন নিতা আমার নিঃসঙ্গতা ঘুচানোর চেয়ে নিসার সুস্থ স্বাভাবিক জীবন অনেক জরুরি। আমার ছেলেটাতো অমানুষ।আচ্ছা রাখি রে এখন।

আচ্ছা ভাবীকে নিয়ে বাসায় এসো।

একমাস পরেই নিসার একটা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে চাকরি হলো। প্রতিদিন শাড়ি পরার কারণে হ্যাংগারে ঝুলানো শাড়িগুলো কাজে লাগছে। টিচার হয়ে নিসা ভালো ফিল করছে। কিছুদিন ধরে আদিলের সাথে তেমন একটা কথাবার্তাও হয় না। সম্পর্কটা কি তার চাকরির কারণে ঠাণ্ডা হয়ে গেলো নাকি অন্য কোনো কারণে। নিসা এক্সেটলি বুঝতে পারছে না।

নিসা রাতে আদিলকে ভাইবারে ম্যাসেজ দেয়

আদিল তুমি আগের মতো কেন নেই?

নিসা তুমি আমাকে নিঃসঙ্গ করেছ,

কেন এই কথা?

নিসা তুমি কি টের পাওনা আমার দিকে তুমি ঠিকমতো তাকিয়েও দেখো না।

হুম তা ঠিক।কিন্তু কেন এমন হলো বুঝতেও পারছি না।

চাকরিতো কারণ হতে পারে না, নিসা বলো।

না হতে পারে না।

আজ মাসের বাইশ তারিখ। দুই তারিখ তোমাকে স্কুলে যাবার আগে রুম থেকে কল দিয়ে বলেছিলাম আমাকে তুমি স্কুলে নামিয়ে দিও।

আরও বলেছিলাম তোমার দেয়া ফিরোজা শাড়িটা পরেছি সেইসাথে কালো টিপ।

তুমি বললে আজ আমি পারবো না।দেরী হয়ে যাচ্ছে।

হম বলেছিলাম।তাতে কি প্রেম শেষ হয়ে যাবে?

আজবতো।

আদিল, সেদিনের পর থেকে আমার মধ্যে আর ফুরফুরা মেজাজ কাজ করে না।ঠেলে ঠেলে চলছি।আমি কি তাহলে সম্পর্ক বুঝি না।এই বাড়িতে তুমি আছো বলেই আমি বুঝি গরম চায়ের চেয়েও আমার ঠোঁট কতটা তাপ তাপ। ভালো লাগাগুলো দলামচা হলেও তোমার ভারেই আমার ঘুম হয়।

আদিল নিসাকে কাছে না পেয়ে অস্থির হয়ে বলে ঘুমাও নিসা।

শুভরাত্রি প্রিয়

ইদানিং রুবি আদিলের বিয়ের বিষয়ে নিসার সাথে ঘনঘন আলাপ করছে। সেসব সময় নিসা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর মত ব্যথায় কাতরাতে থাকে। নিঃশব্দে কণ্ঠনালী বেয়ে ব্যথাগুলো বুকে দাউদাউ করে।

ঘুরে ফিরে দেয়ালকে হত্যাকারী মনে হয়। দেয়ালে কি রশি ঝুলে থাকে?

তাহলে রশিটা কেন গলায় বাঁধে না।

নিসা বোঝে সে ভালো নেই আর ভালো থাকা হবেও না। আদিলের সাথে সম্পর্ক তার শেষ। নিসা এই সম্পর্কের শেষে কোনো অভিযোগও খুঁজে পায় না। হৃদয়ে ঈশ্বর পুঁতেছে কষ্টের সারগাম।

বৃহস্পতিবার রাত। আনাম ঘুমাচ্ছে। দুদিন আগে নিসা এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামীকাল ভোরে নিসা কেউকে না বলে ভুল ঠিকানার বাড়ি থেকে চলে যাবে। নিসা দেখছে আনামকে ঘুমের চেহারায় কেমন মিষ্টি বালকের মতো লাগে। অথচ, নাহ্ আর ভাবতে ভালো লাগছে না।

একটা কাগজে নিসা আনামকে চিঠি লেখার জন্য বসে আছে।

আনাম

তোমাকে চিঠি লিখছি। আমি এই ভুল ঠিকানায় পড়েছিলাম তোমার ভাই আদিলের জন্য।তোমাকে বলতে আমার কোনো সংকোচ নেই এমনকি লজ্জাও নেই। সেটি হলো আদিলের সাথে আমি গভীর প্রণয়ে জড়িয়ে পড়ি। তোমার বিরুদ্ধে আমি কোনো প্রচলিত অভিযোগ করবো না।তুমি আমার কেউ নও।আমি ভোরে চলে যাব। আদিলকে মা সহসাই হয়তো বিয়ে করাবেন।আমি কি করে তাহলে এখানে থাকবো?

ভেবেছিলাম মা কে চিঠিটা লিখবো কিন্তু আমার দেখা এমন শ্রেষ্ঠ রমনীকে কি করে লিখি আমার বিদায়ের কথা। তাঁকে লিখতে গেলে কাগজ অশ্রুতে চুপসে যাবে।

তারপর ভাবলাম আদিলকে লিখবো। যাকে তীব্রভাবে জানি তার ঘরে উঁকি দিতেও পারছি না। আদিলকে লিখতে গেলে আটকে যাবো কথার পর কথায়।আর তাই তোমাকে লিখতে হলো। এখন আমি এ বাড়ির সবগুলো কোণ দেখবো। খুব খুব খুব কষ্ট হচ্ছে। দম রাখা অসম্ভব।

নিসা

রাত তিনটা।

 

সময়ের দিক থেকে ভোর হয়েছে।ভোর আজ কতটা মোলায়েম আলো নিয়ে এলো তা দেখার জন্য বারান্দায় আসতেই চারপাশের অন্ধকার চেপে ধরে গোঙাতে থাকে। নিসা আতংকে কুঁকড়ে যায়। ঘরে ঢুকে আদিলের রুমের দরজায় হেলান দিয়ে স্মৃতির কাছে অসহায় হয়ে পড়ে।

কেবলই কানে বাজছে এই মেয়ে আমাকে পাগল করে তুমি পালাবে কোথায়?

নিসা জানে না কোথায় যাবে শুধু জানে এই মাটিতেই তার আশ্রয়।