বাংলাদেশে হ্যাশট্যাগ মিটু, প্রণব সাহা ও ধর্ষ-প্রেমী নারীবাদ

বাংলাদেশে হ্যাশট্যাগ মিটু, প্রণব সাহা ও ধর্ষ-প্রেমী নারীবাদ

ক.

কিছুদিন আগেই আমি লিখেছিলাম ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন আর মাসুদা ভাট্টির ঘটনা নিয়ে, তনু ধর্ষণ ও হত্যা মামলার কথাই মূলত তুলে ধরেছিলাম। বলেছিলাম মাসুদা ভাট্টিকে নিয়ে কিছু কথা বলাতে বাংলার পুরো নারীবাদ যখন তোলপাড় শুধু মইনুলের বিচার নিয়ে, তখন সেই নারীবাদীরা কেনো তনু ধর্ষণ-হত্যার বিচার নিয়ে মুখ খুলছে না? কেনো দু’বছর যাওয়ার পরেও তনুর পরিবার তার কাঙ্ক্ষিত বিচার থেকে বঞ্চিত? তখনই সরকারি নারীবাদের কথা এসেছিলো।

এরা তোষামোদি নারীবাদী। ব্যারিস্টার মইনুল শাসক দলের জন্য বড় হুমকি তাই তাকে যেকোন মূল্যে দমন করা ছিল মাসুদা ভাট্টি এবং তার মত কিছু প্রগতিশীল ও চেতনাধারী নারীবাদীদের প্রধান কাজ।

এবার এরই সূত্র ধরে আসল প্রনব সাহার নাম। মইনুল-ভাট্টির ঘটনার পর ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন তিনি। স্ট্যাটাসে বলেছিলেন—

“মাসুদা ভাট্টিকে ফোন করেছিলেন মইনুল হোসেন। ৭১ টিভিকে চিঠি দিয়েছে। হবে না হবে না। একাত্তর জার্নালে এসে, লাইভে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। নইলে মাসুদাকে বলেছি আবারো বলছি একটা মানহানির মামলা করতেই হবে।”

জ্বি এটাই ছিলো মাসুদা ভাট্টিকে দেয়া তার উপদেশ।

“মানহানির মামলা করতেই হবে”। মইনুল হোসেনের মুখে “চরিত্রহীন” কথাটা শুনে যখন মাসুদা ভাট্টি ভীষণ বিপর্যস্ত, ঠিক তখনই দেবদূতের ন্যায় এভাবেই ভাট্টির পাশে এসে দাড়িয়েছিলেন ডিবিসি নিউজের ‘হেড অব নিউজ’ পদধারী বাংলাদেশের বিখ্যাত একজন বেসরকারিরূপি সরকারি সাংবাদিক- প্রণব সাহা। সেদিন মাসুদা ভাট্টির চরিত্র উদ্ধার করে জাতির সামনে তার নারীবান্ধব চেহারা উন্মোচিত করেছিলেন তিনি। যেকোন বিপর্যস্ত নারীর পাশেই বোধহয় এভাবেই দাঁড়ান এই প্রণব সাহা। তবে আমারো খুব জানতে ইচ্ছে হয় এই তনু হত্যার খবরে যখন দেশ উত্তাল ছিলো তখন কি করছিলেন এই প্রণব সাহা?

বর্তমানে যেটা আর ব্যাক্তিগত নয় তা হল শুচিস্মিতা সীমন্তির সাথে সম্পর্ক! সীমন্তি সুপ্রীতি ধরের কন্যা। প্রণয়ের কালে যখন একই বাড়িতে সুপ্রীতি-প্রণব থাকতেন তখন সীমন্তিও থাকতেন তাদের সাথে। মায়ের সাথে প্রেম। গর্ভপাত, ঝগড়া আর সাথে সাথে কন্যার সাথেও চলছে সম্পর্ক।

খ.

এখন প্রণব সাহার ইতিবৃত্তে আসা যাক। বর্তমানে প্রণব সাহেব ডিবিসি নিউজের হেড অব নিউজ হিসেবে কর্মরত আছেন। মিডিয়া পাড়ায় খ্যাতিমান এক নাম। সাংবাদিকতায় তার নাম ডাকও কম নয়। চিরকুমার এক চরিত্র। মইনুল-ভাট্টি ইস্যুতে তার নাম যোগ করার কারণটা হয়ত অনেকেই ধরতে পারবেন তাও বলি, মাসুদা ভাট্টির ইস্যুটিকে পরিকল্পিত ভাবে যে মিডিয়া হাইপ দেয়া হয় তার মূল পরিকল্পনাকারীদের একজন এই প্রণব সাহা। একদা কাজ করতেন প্রথম আলোয়। সেখান থেকে সহকর্মী সুপ্রীতি ধরের সাথে চলাচল, অতঃপর প্রণয়। প্রথম আলোর সাবেক সাংবাদিক ছাড়া সুপ্রীতি ধরের আরো পরিচয় আছে। নারীবাদী ওয়েবসাইট উইমেন চ্যাপ্টারের প্রতিষ্ঠাতা এবং গণজাগরণ মঞ্চের গুরুত্বপূর্ণ একজন চরিত্র ছিলেন এই সুপ্রীতি ধর। প্রণয়ের এক পর্যায়ে সুপ্রীতির বাসায় ওঠেন প্রণব। সুপ্রীতি একজন ডিভোর্সি নারি, দুই সন্তানের জননী। এমন একজনের সাথে প্রণয়ে জড়িয়ে পরাটা অবশ্যই দূষণীয় নয়। কিন্তু প্রণয়ের পরে বিয়ে ছাড়া একটি পারিবারিক সম্পর্ক কতটুকু গ্রহণযোগ্য বলে মানা যায়? আচ্ছা মেনে নিচ্ছি সেটাও স্বাভাবিক যেহেতু আমাদের সংস্কৃতি পশ্চিমে কিছুটা হেলে পরেছে। প্রগতিশীলতা বলে কথা। কিন্তু সুপ্রীতি ধরের মত মেধাবী, স্বাধীন একজন নারীকে অন্তঃস্বত্ত্বা বানিয়ে আবার বন্ধু আষীশ (বর্তমানে ইন্ডীপেন্ডেন্ট টিভিতে কর্মরত)কে  সাথে নিয়ে তার গর্ভপাত করানোটা কতটা মানবিক? হ্যাঁ তাই হয়েছে। সুপ্রীতি ধরের গর্ভে যখন প্রণবের সন্তান ঠিক তখনই তার সাথে কলহ বাধিয়ে নিজের বোনের বাড়িতে গিয়ে ওঠে প্রণব। নষ্ট করে সুপ্রীতির গর্ভে নিজের সন্তান, নিজের রক্তে গড়া একটি ভ্রুণ। আচ্ছা এটা না হয় গেলো প্রণবের ব্যাক্তিগত জীবন। তবে বর্তমানে যেটা আর ব্যাক্তিগত নয় তা হল শুচিস্মিতা সীমন্তির সাথে সম্পর্ক! সীমন্তি সুপ্রীতি ধরের কন্যা। প্রণয়ের কালে যখন একই বাড়িতে সুপ্রীতি-প্রণব থাকতেন তখন সীমন্তিও থাকতেন তাদের সাথে। মায়ের সাথে প্রেম। গর্ভপাত, ঝগড়া আর সাথে সাথে কন্যার সাথেও চলছে সম্পর্ক। এতো ‘চটি’ গল্পের কাহিনীর চেয়ে কোন অংশেই কম নয়। আর মজার ব্যাপার হল, এরাই আমাদের এখানে জাতিকে নসিহত করেন। এরাই নারীবাদি, এরাই প্রগতিশীলতার ব্যাবসাটা করেন। আর কিছু লেখার মতো রুচি হচ্ছে না -প্রিয় পাঠক।

মাসুদা ভাট্টিকে পরামর্শস্বরূপ দেয়া প্রণব সাহার স্ট্যাটাস

গ.

এবার আসি প্রণবের বর্তমান নিয়ে কিছু কথায়। প্রণব যখন সুপ্রীতির বাসায় থাকতেন তখন থেকেই শুরু হয় প্রণব সাহার বর্তমান। এক যৌন দানবের উপাখ্যান! গত মাসের ত্রিশ তারিখে এক ফেসফুক স্ট্যাটাসে হ্যাশ ট্যাগ মিটু দিয়ে ঝড় তোলেন প্রণবের প্রাক্তন প্রেমিকার কন্যা সীমন্তি। ভারতে যৌন নিপিড়ন বিরোধী সামাজিক আন্দোলন রীতিমত বিপ্লব করে ছেড়েছিল, যা এখনও চলছে। এখন সেই হ্যাশট্যাগ মিটুকে তরবারি হিসেবে হাতে নিয়ে প্রণবের গর্দান নিলেন সীমন্তি। স্ট্যাটাসে তিনি বলেছেন হাই স্কুল জীবনে কি রকমের পাশবিক আর মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে তাকে। আর এই পাশবিকতার পুরোটুকুই করেছেন আজকের সুনাম ধন্য সাংবাদিক প্রণব সাহা! নিজের প্রেমিকার মেয়েকে সে নিজের মেয়ে হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন নাই। না পারুক, কে চায় সৎ বাপ হতে? তবে ১১ বছরে পূর্বে একটি ১৬ বছরের কিশোরীকে তো নিজের যৌনক্ষুধা থেকে মুক্তি দিতে পারতেন, সেটাও করেননি এই লোক। সীমন্তির ভাষ্য অনুযায়ী আরো জানা যায়, তাকে বাবা বলে সম্মোধন করতেন প্রণব। তবে তাকে কাছে আনা বা তার শরীরে হাত দেয়াটা কখনোই বাবার ছোয়ার মত ছিলো না।

সীমন্তি নিজেও মিডিয়ার সাথে কথা বলার সময় বলেছেন, এত বছর পরে এই কথাগুলো উঠানো হয়েছে শুধু অন্য কিশোরীদের সাহস যোগানোর জন্য। যেনো এমন কোন ঘটোনা ঘটলে তারা তাদের পরিবারের সাথে নির্দ্বিধায় সমস্যার কথা বলতে পারে। যেনো তারা ভয় না পায়। প্রণবের পেশাজীবনকে ধ্বংস করার কোন প্রয়াস সীমন্তির নেই সেই কথাও জানিয়েছেন। তবে সীমন্তি এটাও বলেছেন ক্ষমতাধরদের বিচার হয় না এই দেশে। আর প্রণব অনেক ক্ষমতাধর। সীমন্তি ঠিকই বলেছিলেন।যে লোক ব্যারিস্টার মইনুলের মত মানুষকে জেলের ভাত খাওয়ানর এত বড় পরিকল্পনা করতে পারে মাসুদা ভাট্টিকে দিয়ে সে অনেক ক্ষমতাধরই বটে। তবে তার ক্ষমতার অদ্যপান্ত যাচাই না করেই তাকে যৌনসন্ত্রাসী আখ্যা দেওয়াই যায়। সরকারি তোষামোদকারী যৌনসন্ত্রাসী প্রণব সাহা। তার বর্তমান পেশাস্থল ডিবিসিতেও তাকে নিয়ে নানা ঘটনা হর হামেশায় শোনা যায়। এদিকে ডিবিসি’র সিইও মঞ্জুরুল সাহেব তার বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট কোন অভিযোগ পেলে ব্যাবস্থা নিবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন। এদিকে গত দু’সপ্তাহ ধরে কোন টক শো’র সঞ্চালনা করা থেকে বিরতও রাখা হয়েছে তাকে।

এরা আসলে নারীবাদের নামে নষ্টামিটা নিজেদের ঘরেই রাখতে চায়। আর জনগণকে জানাতে চায় চকচকা গল্প। লোক দেখানো আন্দোলন। নারীর মুক্তির মৌলিক প্রশ্ন তাদের এজেন্ডায় কখনও ছিল না এখনও নাই। এখন নিজেদের ঘরের গল্প ‘মিটু’র কল্যানে বের হয়ায় মি টু বাদ দিয়ে পুরানা ধর্ষণ বিরোধী আবেদন করছেন এরা। এই হল এদের নারীবাদী ভূমিকা। এ ধরনের নারীবাদকেই আমরা বলছি ধর্ষ-প্রেমী নারীবাদ।

 

ঘ.

সুপ্রীতি ধর এমন একজন জেহাদি নারীবাদি যিনি সব সময় লড়েছেন নারীদের হয়ে। গড়ে তুলেছেন উইমেন চ্যাপ্টারের মত এক বিশাল নারীবাদী ওয়েবসাইট। অথচ সেই সাইটেই এই ‘হ্যাশ ট্যাগ মি টু’ আন্দোলনকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার জোর চেষ্টা হচ্ছে। সেখানে এও বলা হয়েছে ‘মি টু’ আন্দোলন থেকে বেশি জরুরি ধর্ষণ প্রতিরোধ আন্দোলন। কেন? নিজের প্রেমিক আর কন্যার যৌন নির্যাতনের ঘটনা ফাঁস হওয়াতেই কি ‘মিটু’ নিয়ে এই অস্বস্তি?

আমার কথা হচ্ছে তনু হত্যার পর এই কথা তাদের মাথায় আসেনি কেন? এদিকে প্রণব সাহা যার জন্য করল চুরি সেই বলল চোর। শুনতে কিছুটা হাস্যকর লাগছে বটে কিন্তু তাই হয়েছে। মাসুদা ভাট্টি সীমন্তির ইস্যু নিয়ে মুখ খুলেছেন! যেই মইনুল তাকে ‘চরিত্রহীন’ বলে এত বড় অনাচার করেছিলো সেই অনাচারের জবার দেয়ার জন্য যে দেবদূতের ন্যায় পাশে ছিলো ভাট্টির, প্রণবের বিরুদ্ধেই মুখ খুললেন সেই মাসুদা ভাট্টি। প্রথমে এই ভাট্টি সামাজিক আন্দোলনের গুরুত্ব নিয়ে কথা বলেন এবং পরে সীমন্তির সাহসিকতার প্রশংসা করেন। তার পরেই তিনি এই অভিযোগের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যাবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন। দোষী যেন একচুলও ছাড় না পান সেই কথাও বলেছেন। আমার মনে হয় কি, মাসুদা ভট্টিকে নিয়ে যে মিডিয়া হাইপ তৈরি করা হয়েছিল এতে ব্যারিস্টার মইনুলের চেয়ে ভাট্টির নিজের সন্মানই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন আর তাই ব্যাক্তি ক্ষোভ থেকেই এমন কথা জানিয়েছেন। নইলে প্রণবের মত একজন দেবদূতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে কেন মাসুদা ভাট্টি এমন মন্তব্য দিবেন?

এখন আবার আসি সেই ‘ধর্ষণ প্রতিরোধ’ এর কথায়। উইমেন চ্যাপটারে যা বলা হয়েছে। এই হ্যাশ ট্যাগ ‘মিটু’ আন্দোলন বন্ধ করে কেন ধর্ষণ প্রতিরোধ আন্দোলনের দিকে যেতে হবে? ধর্ষণ হওয়া পর্যন্ত কেন নারীকে অপেক্ষা কারার পরামর্শ দিচ্ছেন এই তথাকথিত নারীবাদিরা। কেন যেখানে অন্যায় সেখানেই প্রতিরোধের কথা মুখে বলছেন না। কেন মিটুতে অনাগ্রহ? আশা করি আপনারা বুঝতে পারবেন। এরা আসলে নারীবাদের নামে নষ্টামিটা নিজেদের ঘরেই রাখতে চায়। আর জনগণকে জানাতে চায় চকচকা গল্প। লোক দেখানো আন্দোলন। নারীর মুক্তির মৌলিক প্রশ্ন তাদের এজেন্ডায় কখনও ছিল না এখনও নাই। এখন নিজেদের ঘরের গল্প ‘মিটু’র কল্যানে বের হয়ায় মি টু বাদ দিয়ে পুরানা ধর্ষণ বিরোধী আবেদন করছেন এরা। এই হল এদের নারীবাদী ভূমিকা। এ ধরনের নারীবাদকেই আমরা বলছি ধর্ষ-প্রেমী নারীবাদ।

সীমন্তির মত সাহসী মেয়েরা যদি একবার সাহস করে ঘর থেকে প্রতিরোধ করা শুরু করে তখন সেই আন্দোলন এমনিতেই ধর্ষণ প্রতিরোধের দিকে যাবে। তবে এমন লেখনিতে আমি শুধুই একজন সরকারি দালালকে বাচানোর চেষ্টা দেখতে পাচ্ছি। আর সেই চেষ্টাটা হচ্ছে ওই নারীবাদীদের কাছ থেকেই। এটা দুঃখজনক। আর তারা কেনইবা এখন ধর্ষণ প্রতিরোধের কথা তুলছেন? তনুর সময় কেনই বা তুললেন না?

কেন এই নারীবাদেরা তনুকে এড়িয়ে যান? তনুর ইস্যু আওয়ামী-গদি কাপিয়ে দিতে পারে এই ভয়েই বোধ হয়। তবে এই বলেই শেষ করতে চাই, প্রণবের মত যৌনদানব আমাদের মধ্যেই আছে, এদের চিহ্নিত করে অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনা উচিৎ, তোষামোদির জন্য এই সব যৌনসন্ত্রাসীর পার পেয়ে যাওয়াটা আসলেই দুঃখ জনক হবে। নারীবাদের নামে নারী নির্যানতের যে কারখানা ধীরে ধীরে দেশে চালু হয়েছে তাও বন্ধ করতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার বিকল্প নাই।