মুনশি আফতাবউদ্দিন’র কবিতা

মুনশি আফতাবউদ্দিন’র কবিতা

মসীহা

 

স্বপ্ন তো কত রকমেরই হতে পারে-

নানা রঙের, হরেক ইচ্ছের; অর্গলহীন

বাধা থাকলে সেটা স্বপ্ন হবে কেন?

স্বপ্ন মানে ভোকাট্টা ঘুড়ি আকাশে উড্ডীন।

 

আমার একরোখা দস‍্যিপনার ছেলেবেলায়

যখন আমি নরম কচি ঘাসে হাঁটু গেঁড়ে

বনবাদাড়ে অত্যন্ত চুপিসারে গঙ্গাফড়িং ধরতাম;

উড়ানের সশব্দ আনাগোনা শোনামাত্র

একছুট্টে এসে তাকাতাম আকাশপানে

ভাবতাম: আমিও যদি ওরম ওড়াতে পারতাম!

 

তারপর থেকে যত বড় হতে থাকলাম দুচ্ছাই

ভুলেই গেলাম আমি হতে চাইতাম আকাশচারী;

আর লালন করেই-বা কী লাভ এমন স্বপ্ন

আমার দেশে, আমার সমাজে চললে মহামারী?

 

দেহের সঙ্গে যত সরেস হতে থাকল মগজ

ঠিক করলাম, আমায় হতে হবে এমন কেউ:

যে পথহারাদের সবিনয় দেখিয়ে দেবে রাহা

ঢক্কানিনাদ করে তো বিখ্যাত হয় অনেকে

আমি জায়গা নিতে চাই অবহেলিতের বুকে

ভবেই স্বর্গপ্রাপ্তি তাঁরা আমায় মানলে মসীহা!

 

কেয়ামত হতে ঠিক আর কত বছর কত ঘন্টা দেরি

হিসেবনিকেশ করুন যাঁদের সময় এবং অর্থ আছে অগাধ

আমার কথা স্পর্শ করেছে যাঁদের, দীক্ষা নিন সেবাধর্মে

আমার মতোই যাঁদের হৃদয়ে দীপ‍্যমান মহার্ঘতম সাধ।

 

অসহায়ের অশ্রুধারা মুছিয়ে দেওয়ায় কী অক্ষয় আনন্দ-

শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কাঁচঢাকা পৃথিবী থেকে বোঝা যায় না;

আর্তজনের আত্মজন হওয়া অতিশয় সহজ কাজ নয়

কল‍্যাণ-সাধনায় আরাধ‍্য হওয়া সবার শোভা পায় না!

 

এক সন্ধ্যায় গুলতানি করতে গিয়ে

‘আচ্ছা, তোদের কার কী প্রিয় শব্দ?’

বন্ধুদের জিজ্ঞাসা করে ফেললাম হঠাৎ;

জ‍্যোৎস্না, বরিষণ, নীলাদ্রি, বনানী, প্রেম…

উচ্চারিত হল এমনতর কিছু শব্দরাজি

আওয়াজ উঠল: ‘ফাটাফাটি, কেয়াবাত!’

 

আমার প্রিয় শব্দটা বলতেই সবার শেষে

হেসেই কুটিপাটি, বিদ্ধ করল তীব্র শ্লেষে:

‘ইয়ার, তুই এত রসকষহীন কেন রে?

এটা কি কোনও প্রিয় শব্দ হতে পারে?’

 

ওরা বুঝতেই অপারগ শব্দটা আমার আয়াত, আমার স্বাহা

নিভৃতে থাক আমার হতে চাওয়ার স্বপ্ন

এবং প্রিয়তম শব্দ:

মসীহা!

 

 

শেষতম ইচ্ছা

 

তোমায় আমি প্রতারণা করেছি?

কক্ষনও না।

মিথ্যা প্রলোভনে ভুলিয়ে রেখেছি?

কক্ষনও না।

তাজমহল বানিয়ে দেব বলেছি?

কক্ষনও না।

আমিনিয়ায় ডিনার হবে বলেছি?

কক্ষনও না।

 

প্রেমপর্বে হয়তো কাঠখোট্টা কথাবার্তা চলে না

মেয়েদের মন শুষ্ক কথায় কোনওদিন গলে না!

তুমি কুহেলিকা হয়ে থেকে গিয়েছ দীর্ঘদিনের সম্পর্কে

আমিও জানতে চাইনি তোমার আগ্রহ বিফ না পর্কে!

 

তিন বছরে শিশু শিখে যায় চলতে, থাকে না টালমাটাল

সম্পর্কের মেরুদণ্ড হয় না শক্ত, কেটে যায় কত কাল!

কীই-বা লাভ হবে আর পুরনো সেইসব কথা তুলে?

তবু আজ আমি শেষতম ইচ্ছা ব্যক্ত করব মন খুলে:

 

আবারও আমি বেদনাদীর্ণ স্মৃতিগুলো চাখতে চাই

তোমারই সাথে মহানন্দে সায়ানাইড মাখতে চাই!