বর্তমান সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক বিপর্যয় শরণার্থী সমস্যা। ২০১৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৫৬ হাজার ৮০০ শরণার্থী নিহত এবং নিখোঁজ হয়েছেন। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা আইওএম’র অনুসন্ধান প্রতিবেদন থেকেই জানা গিয়েছে এমন তথ্য।
আইওএম’র তালিকা অনুযায়ী এ বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ইউরোপগামী শরণার্থীর মধ্যেই মৃত এবং নিখোঁজ আছে প্রায় ২৮ হাজার ৫০০ জন।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েট প্রেসের (এপি) বরাতে আরো জানা যায়, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, ফরেনসিক প্রতিবেদন, নিখোঁজ ব্যাক্তিদের তালিকা, মৃত ব্যাক্তিদের তালিকা এবং শরণার্থীদের সাক্ষীর মাধ্যমে মোট নিখোঁজের এবং নিহতদের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে। যার সংখ্যা ২৮,৩০০। এই তথ্যে কোন ভুল নেই বলে আশ্বস্ত করেছে সংস্থাটি।
উদাহরণ সরূপ ধরা যাক, এপি’র মতে ৮০০ শরণার্থী জাহাজ ডুবিতে মারা গিয়েছিলো ইতালি যাওয়ার পথে। ইতালিয়ান তদন্ত সংস্থা নিহতদের চিহ্নিত এবং তাদের পরিবার সদস্যদের খোঁজার কাজে নিয়জিত ছিলো। তবে তিন বছর পর নতুন সরকার আসাতে এই কাজের জন্য তাদের অর্থায়ণ বন্ধ হয়ে যায় এবং কাজও থেমে যায়।
ইউরোপের বাইরের শরণার্থীদের পরিণতি আরও ভয়াবহ এবং কোন কোন ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট তথ্য সংগ্রহও সম্ভব হয়নি। দক্ষিন আমেরিকায় এবং এশিয়া মহাদেশের শরণার্থী সম্পর্কে আরো কম জানা গিয়েছে। উল্লেখ্য, দক্ষিন আমেরিকায় ভেনেজুয়েলিয়ান শরণার্থী দিনে দিনে বেড়েই চলেছে আর এদিকে এশিয়া বরাবরই শরণার্থী সমস্যায় জর্জরিত যার প্রমাণ বর্তমান রোহিঙ্গা সংকট।
মিক্সড মাইগ্রেশন সংস্থা, যারা ২০১৪ সাল থেকে ২০,০০০ শরণার্থীর উপর জরিপ চালিয়ে এসেছে, এর প্রধান ব্র্যাম ফ্রউস বলেছেন “আমরা পুরো অভিবাসী ব্যাবস্থাপনা নিয়ে বিতর্কে কে কোথায় অবস্থান করছি সেটা দেখার বিষয় না। দেখার বিষয় মানুষ এখনো শরণার্থী হচ্ছে।”
“তারা যতই শরণার্থী হোক না কেনো, কর্মসংস্থানের খোঁজে যারা ঘুরে বেড়াচ্ছে তারা সবাই মানুষ।”
অন্যদিকে আফ্রিকায় এই সমস্যা আরো বেশি ঘনীভূত হচ্ছে। বর্তমান আফ্রিকায় প্রায় ১ কোটি ৬০ লক্ষ মানুষ ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে শরণার্থী হওয়ার প্রক্রিয়াতে আছে। ২০১৪ সাল থেকে আফ্রিকান শরণার্থীর মধ্যে মৃতের সংখ্যা ১৮ হাজার ৪০০। আইওম আরো জানিয়েছে দক্ষিন আফ্রিকার গোটেং প্রদেশে ৪ হাজার ৩০০ শরণার্থীর লাশের পরিচয় এখনো সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
এই প্রতিবেদনে অন্তত এটা স্পষ্ট যে, তৃতীয় বিশ্বে শরণার্থী সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করছে। দ্রুত এর সমাধান করতে না পারলে রাষ্ট্রগুলো ভয়াবহ সংকটের মধ্যে পড়বে। যেহেতু শরণার্থী সমস্যার সাথে পৃথকভাবে একটি রাষ্ট্র নয়, বরং অনেকগুলো রাষ্ট্র জড়িত থাকে।