খেলার পাতায় এহেন শিরোনাম দেখে আপনি পাতা ভুল করেছেন ভেবে যদি শঙ্কিত হয়ে থাকেন আপনাকে দোষ দেয়ার সুযোগ নেই। খেলার পাতায় এহেন শিরোনাম ব্যবহার করে শঙ্কার সৃষ্টি করার সুযোগ দিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক।
বাংলাদেশের ঘরোয়া লিগে নিয়মিত রান করার পরেও তুষার ইমরানের সাথে যে আচরণ করা হচ্ছে তাতে তাকে বিসিবির সৎপুত্র বলেই মনে হতে পারে। যে, যত কিছুই করুক তাতে সৎ মায়ের মন গলানো সম্ভব না। একই লিগে টানা দুটি অর্ধ শতক করার যোগ্যতায় যেখানে অনেকের জন্য খুলে যায় জাতীয় দলের বদ্ধ দুয়ার, সেখানে টানা সেঞ্চুরি হাঁকিয়েও তুষার থেকে যান উপেক্ষিত।
তুষারে আরো বিস্তারিত যাবার আগে একবার অতীত মনে করিয়ে দিতে চাই বর্তমান প্রধান নির্বাচকের। যিনি নিজেই ‘বয়স বেশি’ এই শব্দ যুগলের জাতাকলে পড়ে জাতীয় দলে ব্রাত্য থেকেছেন দিনের পর দিন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, তার ওপর হওয়া অন্যায়টা অনুধাবনে ব্যর্থ হয়ছেন তিনি। ফলে, সে সময় যারা তার পক্ষে সরব ছিল তাদের নীরব করে তুষারকে অবহেলা করে এক আশ্চর্য তাসকিন পাচ্ছেন তিনি।
এবার আসি তুষারের কথায়। ঘরোয়া পর্যায়ে সফল হলেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অনুপুযক্ত; যে সময় কাল বিবেচনায় এ কথাটি বলা হচ্ছে সেদিকটায় একবার নজর দেয়া দরকার। তখন তুষার নিজে তো বটেই, টেস্ট আঙ্গিনাতে বাংলাদেশই নতুন মুখ। বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেট; টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার আঠারো বছর পরেও যেটির মান নিয়ে প্রধান নির্বাচক নিজে সন্দিহান, সেটি তখন কেমন ছিল সহজেই আঁচ করা যায়। তো, সে লিগের বোলারদের খেলার পর বিশ্বমানের বোলারদের সামনে কেউ যদি প্রমোদ গুণেন তাকে দোষারোপ করার সুযোগ নেই।
এখন, প্রশ্নটা হচ্ছে সেই ব্যক্তি, প্রমোদ গুণে পালিয়েছিলেন নাকি নব প্রত্যয়ে নিজেকে প্রমাণে ব্রত হয়েছিলেন সেটি বিবেচনা করা। নিকট অতীত আমলে নিলে এটা অন্ধও বুঝবে যে, তুষার নিজেকে ছাড়িয়ে যাবার সম্ভাব্য সকল কিছুই করেছেন। সুতরাং, অতীতে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন এবং বর্তমানে তার বয়স বেশি এহেন হাস্যকর যুক্তিতে তাকে বিবেচনার বাইরে রাখা এক প্রকার অন্যায়ই বলা যায়।
দল গঠনের ক্ষেত্রে প্রধান নির্বাচক তুষারকে অগ্রাহ্য করার ক্ষেত্রে যে বিষয়টি সামনে আনছেন সেটি হচ্ছে শুধু মাত্র তাদেরই বিবেচনা করা হচ্ছে যারা আগামী তিন-চার বছর দলকে সেবা দিতে পারবেন। এখানে যে প্রশ্নটি আসে, সেটি হচ্ছে কোন অদৃষ্ট শক্তিতে নির্বাচক মহোদয় এ বিষয়ে নিশ্চিত হলেন যে তুষার তিন-চার বছর খেলার ক্ষমতা রাখেন না? বিশ্ব শাসন করা অজি দলের অন্যতম স্তম্ভ হাসির অভিষেকই হয়েছিল ত্রিশেরও পরে। একই দৃশ্য দেখা গিয়েছে অ্যাডাম ভোজেসের বেলায়ও। মিসবাহ উল হক তো চল্লিশ পর্যন্ত নেতৃত্বই দিলেন পাকিস্তানকে। একজন খেলোয়াড় যদি ফিট থাকে এবং রান করার ক্ষমতা রাখে তাহলে শুধু মাত্তর বয়সের সংখ্যা বিবেচনায় দলের বাইরে রাখার চিন্তাটা প্রাগৈতিহাসিকই বলা যায়। উপরে উল্লেখিত নামগুলো যদি পুরোনো ঠেকে তাহলে পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়ার সর্বশেষ সিরিজই স্বরণ করা যায়। বিলাল আসিফ একত্রিশ বছর বয়সে ডাক পেয়েও বাজিমাত করেছেন।
কথা হচ্ছে, আপনি যখন মনঃস্থির করে ফেলেন যে কি করবেন, কি করবেন না; সেক্ষেত্রে যত যুক্তিই সামনে আনা হোক তা অসাড় হয়ে যায়। তুষারের বেলাতেও যে যুক্তি নির্বাচক প্রধান দিচ্ছেন তিনি নিজেও জানেন যে এটি কতটা হাস্যকর। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে ‘বয়স’ নামক বাংলাদেশের কর্তাদের সৃষ্ট ব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে প্রহসনের শিকার হয়েছেন মোহাম্মদ রফিক, আব্দুর রাজ্জাক এমন কি বর্তমান ওয়ান ডে অধিনায়ক মাশফারি বিন মুর্তজাও। এক রকম জোর করেই তাকে বাধ্য করা হয়েছে টি টোয়েন্টি থেকে অবসর নিতে।
সর্বদিক বিবেচনায় বলাই যায়, সতিনের পুত যেমন বাজান হয় না; তেমনি তুষার সেঞ্চুরি-ডাবল সেঞ্চুরি বা ট্রিপল সেঞ্চুরি যাই করুন না কেন নির্বাচকদের নেক নজরে আসতে পারবেন না। তাদের নেক দৃষ্টি কয়েকজনের জন্যই সীমাবদ্ধ। তাই, সাধ্যের সবটুকু উজাড় করে দিয়েও তুষার ব্রাত্যই থেকে যান সিরিজের পর সিরিজ।