ফিক্সিং নিয়ে নতুন বোমা ফাটাল আল-জাজিরা

ফিক্সিং নিয়ে নতুন বোমা ফাটাল আল-জাজিরা

খেলার জগতে জুয়াড়িদের আনাগোনা নতুন নয়। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে ফাইভ স্টার হোটেল, খেলার মৌসুমে সব জায়গায় থাকে জুয়ারিদের পদচারণ। সম্প্রতি কাতার ভিত্তিক গণমাধ্যম, আল-জাজিরার দুই পর্বের প্রামাণ্যচিত্রের তদন্তে বেড়িয়ে এসেছে স্পট ফিক্সিং নিয়ে চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্য। তদন্তের এই প্রামাণ্যচিত্র কাপিয়ে দিয়েছে ক্রিকেটবিশ্ব। এই প্রামাণ্যচিত্রের মাধ্যমেই ফিক্সিং-এর সাথে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের রাঘব বোয়ালদের সমকৃক্ততা উন্মোচিত হয়েছে।

তদন্তে ১৫টি ম্যাচে স্পট-ফিক্সিং এর প্রমাণ পাওয়া গেছে, যার মধ্যে ইংল্যান্ডের খেলোয়ড়েরা জড়িত রয়েছে ৭টি ম্যাচ ফিক্সিং-এ, অসিরা ৫টি, পাকিস্তানি খেলোয়াড়েরা ৩টি এবং অন্য আরেকটি ম্যাচে অন্যান্য খেলোয়াড়দের সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে। কিছু খেলায় একইসাথে দুই দলই ফিক্সিং-এ জড়িত রয়েছে। আবার বেশ কয়েকটি ম্যাচে একাধিক ফিক্সিং-এর প্রমাণও পাওয়া গেছে। এভাবে ১৫টি ম্যাচে মোট ২৬টি স্পট-ফিক্সিং এর প্রমাণ পাওয়া যায়। উল্লেখ্য যে স্পট-ফিক্সিং এ পুরো ম্যাচ ফিক্স করা হয়না। খেলার একটা অংশ ফিক্স করা হয়ে থাকে। প্রামাণ্যচিত্রে আরও বেরিয়ে আসে, ফিক্সিং সাধারণত ব্যাটসম্যানরা করে থাকে। তারা ইচ্ছাকৃত খারাপ ব্যাটিং করে ম্যাচ চলাকালীন।

আল-জাজিরার প্রামাণ্যচিত্রে ম্যাচ ফিক্সার অনিল মুনাওয়ারের পরিচয় বের হয়ে আসে। মুনাওয়ার আল-জাজিরার ড্যাভিড হ্যারিসনের সাথে হোটেল তাজ এ সাক্ষাৎ করে। সেখানে গোপন ক্যামেরায় ভিডিও ধারণ করা হয়। মুনাওয়ার ২০১০ সাল থেকে ম্যাচ ফিক্সিং-এ জড়িত। মুনাওয়ারের ফিক্সিং-এ জড়িত ১৫টি ম্যাচের মধ্যে রয়েছে ৬টি টেস্ট ম্যাচ, ৬টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ এবং ৩টি টিটোয়েন্টি বিশ্বকাপের ম্যাচ। ১৫ ম্যাচে ২৬ ফিক্সিং-এর মধ্যে ২৫ স্পটেই মুনাওয়ারের ফলাফল সঠিক ছিল।

একজন ভারতীয় বুকমেকার ফিক্সিং-এর সাথে মুনাওয়ারের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে নিশ্চিত করেন। এছাড়া সিনিয়র ইন্সপেক্টার প্রদীপ শর্মা অপর একজন হাই-প্রোফাইল ক্রিমিনাল সনু জালানের বরাত দিয়ে বলেন, ”সনু জালান মুনাওয়ারের সাথে সাক্ষাৎ করেছিল দুবাইয়ে। মুনাওয়ারের সাথে ডি-কোম্পানির সংযোগ রয়েছে। মুনাওয়ার ডি-কোম্পানির বেটিং সিন্ডিকেট দেখাশোনা করে”। উল্লেখ্য ডি-কোম্পানি দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় মাফিয়া।

ভিরাট কোহলি ও মুনাওয়ার। ছবিঃ আল-জাজিরা

 

রোহিত শর্মা এবং মুনাওয়ার। ছবিঃ আল-জাজিরা

মুনাওয়ারের সাথে বর্তমান প্রজন্মের অনেক খেলোয়াড়ের যোগাযোগ রয়েছে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন খেলোয়াড়ের সাথে মুনাওয়ারের ছবি তা-ই প্রমাণ করে। তার মধ্যে ভারতের বর্তমান অধিনায়ক ভিরাট কোহলি, রহিত শর্মা, সুরেশ রায়না, বালাজি পাকিস্তানের উমার আকমল, অস্ট্রেলিয়ার এন্ডি বিকেল, ছাড়াও কোচ সহ অনেকে। ২০১২ সালের শ্রীলংকায় অনুষ্ঠিত টিটোয়েন্টি বিশ্বকাপ চলাকালীন সময়েও অনেক খেলোয়াড়ের সাথে মুনাওয়ারের ফটোগ্রাফ পাওয়া গেছে। যদিও এই ফটোগ্রাফ থেকে ফিক্সিং এর সাথে সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হয়না। তবে মুনাওয়ারের সাথে ইংলিশ ক্রিকেটারের কথপকথনের রেকর্ড পাওয়া যায়। একজন ফরেনসিক স্পিচ সায়েন্টিস্ট রেকর্ডিং-এর সত্যতা যাচাই করে সঠিক বললেও খেলোয়াড় নিজে ঘটনার সত্যতা অস্বীকার করে। তার মতে রেকর্ডিংটি বানানো হয়েছে। এছাড়া ক্রিকেট ইংল্যান্ড এবং ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার আইনজীবীগণ আল-জাজিরর তদন্তকে প্রত্যাখান করেছে।

ব্যাগ হাতে উমার আকমলের সাথে মুনাওয়ার। ছবিঃ আল-জাজিরা

কিন্ত সবচেয়ে উদ্বেগজনক ব্যাপার আইসিসি মুনাওয়ারের সম্বন্ধে জ্ঞাত আট বছর যাবত। এতদাসত্ত্বেও শুধুমাত্র এই প্রামাণ্যচিত্র প্রকাশ হওয়ার পরই আইসিসি মুনাওয়ারের বিরুদ্ধে আপিল করে। এছাড়া মুনাওয়ার প্রশ্নে আইসিসি মুখ খুলতে রাজি হয়নি।