ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটে ফাঁস হওয়া প্রশ্নে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের নতুন করে পরীক্ষায় বসতে হবে। আজ মঙ্গলবার বিষয়টি নিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা আলোচনার পর ঢাবি ডিনস কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক উত্তীর্ণ হওয়া প্রায় সাড়ে আঠারো হাজার শিক্ষার্থীর কাছ থেকে পুনরায় পরীক্ষা নেয়া হবে বলে জানান উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান।
গত ১২ই অক্টোবর ‘ঘ’ ইউনিটের পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার কথা জানাজানি হওয়ার পর থেকে পরীক্ষা ও ফলাফল বাতিলসহ বেশ কিছু দাবিতে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ এই সিদ্ধান্ত নেয় ঢাবি প্রশাসন। উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, উত্তীর্ণ ১৮ হাজার ৪৬৪ জনকে নিয়ে নতুন করে এই পরীক্ষা হবে। পরীক্ষার দিনক্ষণ পরে জানিয়ে দেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, ঘ-ইউনিটে প্রশ্নফাঁসকে কেন্দ্র করে এককভাবে প্রথম প্রতিবাদ শুরু করে ঢাবির আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আখতার হোসেন। গত ১২ই অক্টোবর শুক্রবার ‘ঘ’ ইউনিটের পরীক্ষার পূর্বেই প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ উঠলে বিশ্বিবিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি একজন ভর্তিচ্ছুর মোবাইলে সকাল ৯টা ১৭ মিনিটে প্রশ্ন পাওয়ার প্রমাণ পায়। প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণ পাওয়া সত্ত্বেও পরীক্ষা বাতিল না করে গত ১৬ই অক্টোবর মঙ্গলবার ফল প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ। ঐ দিনই দুপুর ১২ টায় পরীক্ষা বাতিলসহ চারদফা দাবিতে অনশনে বসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যে আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আখতার হোসেন। সেদিন দুপুর ১টা থেকে অনশন শুরু করে দীর্ঘ ৪৯ ঘন্টা অনশনের পর অসুস্থ হয়ে পড়লে পরে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়।
এদিকে, আজ (২৩ অক্টোবর) মঙ্গলবার বেলা সাড়ে বারোটার দিকে ‘ঘ’ ইউনিটের পরীক্ষার ফল বাতিলসহ তিনদফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থীর সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত মিছিলটি ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে সন্ত্রাসবিরোধ রাজু ভাস্কর্যে এসে শেষ হয় এবং এরপর তারা সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে।
‘ঘ’ ইউনিটের পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে তাদের উত্থাপিত দাবিগুলো ছিলো :
১. ‘ঘ’ ইউনিটের পরীক্ষা পুনরায় নেওয়া,
২. প্রশ্নফাঁসে জড়িত মূল হোতাদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চত করা এবং
৩. বিগত বছরগুলোতে জালিয়াতি করে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ভর্তি বাতিল করা।
এদিকে আজ বেলা বারোটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের পরীক্ষা যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে পুনরায় নেওয়ার দাবি জানিয়ে চার দফা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামানকে স্মারকলিপি প্রদান করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। স্মারক প্রদান অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস।
ছাত্রলীগের চার দফা দাবি হলো :
১. পুনরায় ভর্তি পরীক্ষা (যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে) নেওয়া অথবা উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিশেষ ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে সুস্পষ্ট প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে আসা;
২. ডিজিটাল জালিয়াতি, প্রশ্নফাঁস বা যেকোনো ধরনের অসাদুপায় অবলম্বনকারীর বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ প্রশাসনিক ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া
৩. জালিয়াতি, প্রশ্নফাঁস বা অসাদুপায় উপায়ের মাধ্যমে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব বাতিল ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া। এবং
৪. আধুনিক, যুগোপযোগী ও মানসম্মত ভর্তি পরীক্ষার স্বার্থে শিক্ষাবিদ, বিশেষজ্ঞ, সিনেট, সিন্ডিকেট, অংশীজন এবং ছাত্র সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে পলিসি ডিবেটের মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতির সংস্কার করা।
স্মারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ, প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন)অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ, প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রব্বানী। এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনসহ সংগঠনটির বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীবৃন্দ।
ছাত্রলীগের স্মারকলিপির পরিপ্রেক্ষিতে পুনরায় পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা আসার মূল হিসেবে কাজ করেছে আখতার হোসেনের অনশন। ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পড়ানো শিক্ষার্থীর প্রশ্নের উত্তর দিতে না পেরে। বিবেকের তাড়নায় অনশনে বসেন আখতার হোসেন। আর তাতেই ভিত নড়ে যায় প্রশাসনের। দেশজুড়ে আলোচনায় আসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নফাঁস কেলেঙ্কারি। পুনরায় পরীক্ষা নিয়ে হয়তো কলঙ্কের দাগ কিছুটা মুছতে পারবে ঢাবি প্রশাসন।