২১ আগস্ট নিয়ে রেডিও তেহরানকে বিশেষ সাক্ষাৎকারে রেজাউল করিম রনি

২১ আগস্ট নিয়ে রেডিও তেহরানকে বিশেষ সাক্ষাৎকারে রেজাউল করিম রনি

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় নিয়ে রেডিও তেহরানকে দেয়া সাক্ষাৎকারে সিনিয়র সাংবাদিক – ও দ্যা জবান ডট কমের সম্পাদক-রাজনৈতিক বিশ্লেষক রেজাউল করিম রনি রেডিও তেহরানকে বলেছেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক গতিপ্রবাহে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে রাজনৈতিক দিক থেকে আনটাইমলি। তিনি বলেন, তবে এ রায়ের ফলে বিএনপি তেমন কোনো ক্ষতির মুখে পড়বে বলে আমি মনে করি না।

এখানে রেডিও তেহরানের সৌজন্যে পুরো সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো। এটি গ্রহণ ও উপস্থাপনা করেছেন গাজী আবদুর রশীদ।

রেডিও তেহরান: জনাব রেজাউল করিম রনি, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় হয়েছে। রায়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অনেকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও কয়েকজনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে। রায়কে আপনি কীভাবে দেখছেন?

রেজাউল করিম রনি: দেখুন, বাংলাদেশের এই মুহূর্তের রাজনীতির যে গতিপ্রবাহ তার ভিত্তিতে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে এই রায় নিয়ে আলোচনার আগে একটা বিষয়ে অবশ্যই বলে নিতে হবে সেটি হচ্ছে বিচার বিভাগের এখনকার যে অবস্থা! আর এই অবস্থার প্রেক্ষিতে এরকম একটি জনগুরুত্বপূর্ণ রায়কে আমরা যদি তর্কের খাতিরে ধরেই নেই যে রায়টি খুবই সুষ্ঠু ও আইনানুগ হয়েছে কিন্তু যেহেতু গোটা  বিচার বিভাগ এবং বিচার ব্যবস্থা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন আছে ফলে এই সময়ে এসে রাজনৈতিক দিক থেকে এবং জনগুরুত্বপূর্ণ রায়টি আনটাইমলি। আনটাইমলি রাজনৈতিক দিক থেকে। এটি হচ্ছে প্রথম পয়েন্ট।

দ্বিতীয় পয়েন্টটি হচ্ছে- এই মামলাটি আর দশটা হত্যা-খুন বা ফৌজদারি অপরাধের মামলার মতো না। এই মামলার সাথে রাজনৈতিক সম্পর্কটি খুব সরাসরি। এই মামলার বিচারিক দিকগুলো যদি আমরা খতিয়ে দেখি এবং পরবর্তী সময় মামলা নিয়ে যেসব রিপোর্টিং আমাদের বড় বড় মিডিয়াগুলোতে এসেছে তাতে দেখা যাচ্ছে বর্তমান বিচার ব্যবস্থার যে ক্রুটি এমনকি এই মামলার বিচারিক ত্রুটির বিষয়ে আমি পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করব।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রাজনৈতিক ইমাজিনেশন যদি আমরা চিন্তা করি তাহলে মাইনাস-টুর বিষয়টি আসতে পারে। পরস্পরকে এলিমেনেট করা, একজন আরেকজনকে বা একটি গ্রুপ অন্য গ্রুপকে অথবা ধরুন আওয়ামী লীগ- বিএনপিকে এবং বিএনপি-আওয়ামী লীগকে নির্মূল করতে চায় এটার একটা ইঙ্গিত আছে এই রায়ে।

 

ধরুন মুফতি হান্নানের জবানবন্দির ভিত্তিতে পরবর্তী সময়ে যাদের নাম চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করা হলো- সেই মুফতি হান্নানকে অন্য একটি মামলায় ফাঁসীতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরা করা হলো। যেহেতু এরকম একটি মামলার পূর্ব শিডিউল ছিল  সেটি জানা ছিল। আর দ্রুত বিচার আইনে মামলাটি হয়েছে। কাজেই আমরা আশা করতেই পারি এই মামলার নিষ্পত্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত তার মৃত্যুদণ্ড স্থগিত রাখা যেত, তারপর এটি কার্যকর করা যেত কিন্তু তাকে তড়িঘড়ি করে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হলো। এমনকি আদালতে তার যে জবানবন্দি নেয়া হয়েছিল যার ভিত্তিতে পরবর্তীতে অনেককে যুক্ত করা হয়েছিল। তিনি কিন্তু মৃত্যুর আগে তার সেই জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন করেছিলেন। ফলে এখানে একটা বড় ধোয়াশা থেকে যাচ্ছে যে যেহেতু ওই বিষয়টি সুরাহা করা হয়নি তাই এই মামলার রায়ে একটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য স্পষ্টভাবে আছে।

অন্যদিকে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রাজনৈতিক ইমাজিনেশন যদি আমরা চিন্তা করি তাহলে মাইনাস-টুর বিষয়টি আসতে পারে। পরস্পরকে এলিমেনেট করা, একজন আরেকজনকে বা একটি গ্রুপ অন্য গ্রুপকে অথবা ধরুন আওয়ামী লীগ- বিএনপিকে এবং বিএনপি-আওয়ামী লীগকে নির্মূল করতে চায় এটার একটা ইঙ্গিত আছে এই রায়ে।

 

জনাব রেজাউল করিম রনি- বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ রায়কে ‘ফরমায়েশি রায়’ বলে মন্তব্য করেছেন। তার এ মন্তব্য সম্পর্কে আপনি কী বলবেন? 

রেজাউল করিম রনি: দেখুন, মির্জা ফখরুল ইসলাম তার রাজনৈতিক বিবেচনায় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়কে ফরমায়েশি বলেছেন। এটা উনি বলতেই পারেন কিন্তু এই রায় নিয়ে এর আগে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা মন্তব্য করেছেন, মন্তব্য করেছেন সেতুমন্ত্রী ও দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ওবায়দুল তাঁর মন্তব্যে বলেছেন-এ রায়ের ফলে বিএনপি বিপদে পড়বে। তো বিচারাধীন একটা মামলার রায় নিয়ে পাবলিক আলোচনার মধ্যে তাঁরা মন্তব্য করেছেন। আর ওই মন্তব্যের মধ্য দিয়েই মামলার যে আইনি ভিত্তি তা নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে বিরোধী দল যদি এই দাবি বা অভিযোগ করে সেটা আমার মনে হয় জনগণ খুব গুরুত্বের সাথে নেবে।

 

আচ্ছা জনাব আদালতের এই রায়ের কারণে দল হিসেবে কী বিএনপি বড় ক্ষতির মুখে পড়ল বলে আপনি মনে করেন? 

রেজাউল করিম রনি: না, আমি একদমই মনে করি না যে এই রায়ের ফলে বিএনপি বড় ক্ষতির মুখে পড়বে। এই রায়ের ফলে বিএনপি কোনো বিপদের মধ্যেও পড়েনি বরং এ রায়ের ফলে বিএনপি যে সতর্ক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে তাতে আমি মনে করি তারা রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছে।

এরকম একটা পরিস্থিতিতে জনগুরুত্বপূর্ণ একটা মামলার রায় দিয়ে এবং বিএনপিকে উসকানি দিয়ে যদি তাদেরকে রাস্তায় নামানো যেত তাহলে একটা বড় ধরনের ক্রাকডাউনের সুযোগ পেত সরকার। যেহেতু সরকার একটা ক্রাকডাউনের সংস্কৃতির মধ্যে আছে। ফলে তখন মাঠটি আরো পরিষ্কার হতো। ফলে সরকারের যে সাংবিধানিক অজুহাতের নির্বাচন সেক্ষেত্রে তারা হয়তো একটা সুযোগ সৃষ্টি করতে পারত কিন্তু সেই অর্থে প্রতিবাদও হয়নি তারা মাঠে নামেওনি।

 

তবে প্রশ্ন হচ্ছে কেন নির্বাচনের আগে এভাবে রায়টি দেয়া হলো? আমরা জানি যে অনেক গায়েবি মামলার কথা বলা হচ্ছে আসলে গায়েবি না রাজনৈতিক মামলা। এসব মামলায় অসংখ্য আসামি। এসব মামলা নিয়ে আওয়ামী লীগের লোকজনের মধ্যেও সন্দেহ ও বিতর্ক আছে। এসব মামলায় বিএনপির অনেক নেতাকর্মী জেলে আছেন। অনেকে আবার মামলার ভয়ে বাড়িতে থাকতে পারছেন না। এরকম একটা পরিস্থিতিতে জনগুরুত্বপূর্ণ একটা মামলার রায় দিয়ে এবং বিএনপিকে উসকানি দিয়ে যদি তাদেরকে রাস্তায় নামানো যেত তাহলে একটা বড় ধরনের ক্রাকডাউনের সুযোগ পেত সরকার। যেহেতু সরকার একটা ক্রাকডাউনের সংস্কৃতির মধ্যে আছে। ফলে তখন মাঠটি আরো পরিষ্কার হতো। ফলে সরকারের যে সাংবিধানিক অজুহাতের নির্বাচন সেক্ষেত্রে তারা হয়তো একটা সুযোগ সৃষ্টি করতে পারত কিন্তু সেই অর্থে প্রতিবাদও হয়নি তারা মাঠে নামেওনি। বিএনপি এ রায়কে স্বাভাবিকভাবে নিয়েছে এবং সতর্ক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। ফলে এই মামলার রায়ের কোনো প্রভাব বৃহত্তরভাবে বিএনপি এবং

 

রেজাউল করিম রনি-গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ের পর তারেক রহমান প্রকাশ্য রাজনীতিতে অংশ নিতে পারবেন কি না- এ সম্পর্কে আপনি কী বলবেন?

রেজাউল করিম রনি: দেখুন, বাংলাদেশের আাগামী দিনের রাজনৈতিক সংকটটি হচ্ছে-নির্বাচনকেন্দ্রিক। মানুষের ভোটাধিকার এবং গণতন্ত্র সুষ্ঠুভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় কি না সেই সংকট। যদি জনগণের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে সরকার আসে সেক্ষেত্রে আজকের মতো পরিস্থিতি থাকবে না। এ প্রসঙ্গে একথা বলে নিতে চাই বর্তমান যে সরকার ক্ষমতায় আছে যেখানে ১৫৪ জন অনির্বাচিত সংসদ সদস্য আছেন। ফলে জনগণের সরকার এলে আজকের পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটবে এবং বর্তমানে যে ধরনের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে তেমনটিও থাকবে না। আপনি যদি গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়কার পরিস্থিতি দেখেন তাহলে সেখানে দেখবেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও কিন্তু বেশ কয়েকটি মামলা ছিল। সেই মামলাগুলো কিন্তু এখন আর নাই। ফলে ক্ষমতার পরিবর্তন হলে বর্তমান পরিস্থিতিরও পরিবর্তন ঘটবে বলে আমার মনে হয়