নতুন ইমরুলের শুরু হোক এ ম্যাচ থেকেই

নতুন ইমরুলের শুরু হোক এ ম্যাচ থেকেই

অতীত বিবেচনায় ওয়ান ডে দলে ইমরুল কায়েসের থাকা না থাকা এখন সে অর্থে আর আলোচনার জন্ম দেয় না। তার ওয়ান ডে রেকর্ডও তার হয়ে তর্কে জড়ানোর পথ বন্ধ করে রেখেছে আগেই। এশিয়া কাপের মধ্যপথে গিয়েই ম্যাচ বাঁচানো এক ইনিংস খেলে তামিমের পরিবর্তে ওপেনের সুযোগ পেয়েছিলেন এ ম্যাচে। আগে দুটো সেঞ্চুরি থাকলেও অ্যাভারেজ, স্ট্রাইক রেট বিবেচনায় বর্তমান সময়ের ওয়ান ডে ওপেনার হিসাবে তাকে নিয়ে আলোচনার তাগিদ সে অর্থে কেউই অনুভব করেননি। কিন্তু, আজকের ম্যাচে যে ইনিংসটি তিনি উপহার দিলেন, সেটি তার তো বটেই বাংলাদেশের ওয়ান ডে ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা ইনিংস।

শুরুতেই নেই ওপেনিং এর অপর সঙ্গী লিটন। তার পথ ধরে পা বাড়ালেন অভিষিক্ত ফজলে রাব্বিও। আস্থার অপর নাম মুশফিকের সাথে জুটি জমে উঠার আগেই বিদায় নিলেন মুশফিকও। চিত্রনাট্যের ধারাবাহিকতাক ব্যতিক্রম ঘটিয়ে সাঁজঘড়ে মাহমুদুল্লাহও। ১৩৯/৬; এমন অবস্থা থেকে বাংলাদেশ ২৭১ করবে, সেটি ইমরুলের ব্যাটে ভর করে; চরম আশাবাদী মানুষটিও বোধহয় এমনটি ভাবেননি। সেই অভাবনীয় কাজটিই ইমরুল করে দেখিয়েছেন প্রথমে ধৈর্য্য ধরে, তারপর থিতু হয়ে এবং সবশেষে বোলারদের শাসন করে।

বাংলাদেশের মাটিতে তার এই ১৪৪ এমনিতেই যেকোনো বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ। শুধু রানের সংখ্যা বিবেচনায় না, যে ভাবে তিনি পুরো ইনিংসটা খেলেছেন তাতে নিঃসন্দেহে এটিকে বাংলাদেশের ওয়ান ডে ইতিহাসের অন্যতম সেরা ইনিংসের একটি বলা যায়। পিচে বাউন্স ছিল অসমান, বলও কাটছিল বেশ ভালো মতই। এমন অবস্থায় খোলসে ঢুকে পরাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ইমরুলের ১৩টি চারের সাথে ৬ টি বিশাল ছয় বুঝিয়ে দিচ্ছে খোলস বন্দি তো হনই নি, বরং শাসনই করেছেন বোলারদের।

ইনিংসটির মাহাত্ম্য আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে এমন কন্ডিশনেও নিখুঁত খেলাটা। বলার মতন কোনো সুযোগ যেমন দেননি, তেমনি বাজে বলকে তার প্রাপ্যটা বুঝিয়ে দিতেও কসুর করেননি সামান্য। সবচেয়ে বাহবা পাবেন যে জন্য, সেটি হচ্ছে যাকে নিয়ে তিনি ইনিংসটিকে জিম্বাবুয়ের জন্য পর্বতসম প্রমাণ করেছেন সে সাইফ সে অর্থে অভিজ্ঞ কোনো ক্রিকেটার নন। তাকে সামলে নিজে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে যে ইনিংসটি খেলেছেন সেটি চোখে লেগে থাকার মত। সেঞ্চুরির উদযাপনে নবজাতক সন্তানকে স্বরণ করে মুহূর্তটাকে রাঙ্গিয়েছেন আরো সুন্দর ভাবে।

সন্দেহ নেই এমন একটি ইনিংস এর পর রঙিন পোশাকে ইমরুলের ভবিষ্যত নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে নির্বাচকদের। প্রত্যাশা একটাই থাকবে, এ ইনিংসটি যাতে মরিচীকা না হয়ে নতুন এক ইমরুলের জন্ম দেয়। যে বাংলাদেশকে উপহার দিবে এমন আরো মহা কাব্যিক ইনিংস।