অনুধাবনে সমস্যা, অযোগ্যতা নাকি নিজেকে সস্তা ভাবার প্রবণতা?
ঠিক এর আগের ম্যাচটিতেই লিটন খেলেছিলেন চোখ ধাঁধানো এক ইনিংস। ঘরোয়া ক্রিকেটে তার পারফরম্যান্স এবং এশিয়া কাপে সর্বশেষ ইনিংসটি বিবেচনায় নিলে তার মান নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। কিন্তু এই ম্যাচে তার আউট হবার ধরণ কয়েকটি প্রশ্ন তুলে আনছে সামনে। বর্তমান বাংলাদেশ যে ‘১৫ পূর্ববর্তী বাংলাদেশ না; যে দলে পাঁচ দশ ম্যাচ পরপর রান করলেও বাহবা জুটত সেই বাংলাদেশ আর নেই; এই সহজ সত্যটা কী তিনি অনুধাবন করতে পারছেন? কারণ, লিটন এক ম্যাচে অসাধারণ খেলার পরের ম্যাচেই নিজের উইকেট এক প্রকার বিলিয়েই দিয়ে আসছেন। তিনি যদি বর্তমান বাংলাদেশের পরিস্থিতি বুঝে থাকেন তাহলে বলতে হয় তার যোগ্যতার অভাব রয়েছে। আর দুটোর কোনোটাই যদি না হয়, তাহলে বলতেই হয় নিজের উইকেটের মূল্য বোঝার ক্ষমতা তার নেই। একবার লাইফ পাবার পরেও; না খেলে না ছেড়ে যে ভাবে আউট হলেন সেটা চরম দৃষ্টিকটূ।
একই সমস্যা দেখা যাচ্ছে মিথুনের ক্ষেত্রেও। এশিয়া কাপের দু’টি ম্যাচেও সেট হবার পর উইকেটটি ছুড়ে দিয়ে এসেছেন। ঠিক একই কাজটি করেছেন আজকের ম্যাচেও। সুতরাং, লিটনের ক্ষেত্রে সামনে আসা প্রশ্নগুলো তার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
ফজলে রাব্বির প্রথম ম্যাচ বলে তাকে আলোচনার বাইরেই রাখতে চাই। তিনি যে বলটায় আউট হয়েছেন অভিষিক্ত যে কোনো ব্যাটসম্যানের জন্যই সেটা দুঃস্বপ্নের মত একটি ডেলিভারি। এক ম্যাচ বিবেচনাতেই সমালোচনায় যাওয়াটাও সমীচীন ঠেকছে না। মিডল অর্ডারে মুশফিক এবং মাহমুদুল্লাহ যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা আরো একবার দেখা গেল এই ম্যাচে। ভারতের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে মিরাজের ব্যাটিং বেশ আশা জাগানিয়াই ছিল। কিন্তু তিনিও যেন আজ পণ করেছিলেন লিটন-মিথুনকে অনুসরণ করার। পা না চালিয়ে বাইরের বলে অহেতুক খোঁচা দিয়ে যে ভাবে আউট হয়েছেন সেটি ছিল হতাশ করার মত।
মিরাজ পূর্বেও তার ব্যাটিং দক্ষতা দেখিয়েছেন। বোলিং দিয়ে ইতোমধ্যেই দলে নিজের জায়গা পাকা করে নিয়েছেন তিনি। এখন, যদি ব্যাটিং বাড়তি মনোযোগ দেন, তাহলে শুধু তার নিজেরই না; দলের জন্যও লাভ। মিরাজের ব্যাটিং নিয়ে বারবার কথা বলার কারণ, ব্যাটিংটা তিনি জানেন। যদি একটু বাড়তি মনোযোগ দেন তাহলে লোয়ার মিডল অর্ডারেও নির্ভর করার মত একজন পাবে বাংলাদেশ। যেটি দলের শক্তি বাড়াতে বেশ সহায়ক হবে।
একমাত্র ইতিবাচক সাইফ
এ ম্যাচের সবচেয়ে ইতিবাচক দিকের একটি হচ্ছে সাইফের ব্যাটিং। আগের লেখাগুলোতেও আমি বলেছিলাম, বোলার হিসাবে এখনো যথেষ্ট ধারালো না হলেও ব্যাটিং সক্ষমতা বিবেচনায় তিনি বাড়তি মনোযোগের দাবী রাখেন। এ ম্যাচে ইমরুল এর সাথে জুটি বেঁধে যেভাবে দলকে উদ্ধার করেছেন সেটি ছিল দেখার মত। শুরুর দিকে কিছুটা জড়তা কাজ করলেও সময় গড়ানোর সাথে সাথে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যেই ব্যাটিং করেছেন তিনি। সাইফউদ্দিন মূলত পরিচিত তার স্লগ করার ক্ষমতার জন্য। এ ইনিংসটি দিয়ে তিনি যেন নিজেকে নতুন ভাবেই চেনালেন। শুধুই স্লগ না, দলের প্রয়োজনে উইকেটে টিকে থাকার ক্ষমতাও তার রয়েছে। মিরাজের যেমন ব্যাটিং নিয়ে বাড়তি কাজ করা প্রয়োজন তেমনি সাইফ যদি বোলিং নিয়ে বাড়তি কাজ করেন বেশ ভালো একটি সিমিং অল রাউন্ডার পাবে বাংলাদেশ; যার অভাব বহুদিনের। বিশেষ করে, সামনের বিশ্বকাপ যেহেতু ইংল্যান্ড এ, সে হিসাবে সাইফ যদি বোলিং এ আশানরুপ উন্নতি আনতে পারেন, তিনি একটি বড় সম্পদ হতে পারেন দলের জন্য। বাড়তি হিসাবে থাকছে অ্যাথলেট হিসাবে তার চমৎকার দক্ষতা।
এ সিরিজটির ফলের চেয়ে আমি বেশি মনোযোগ দিচ্ছি সামনের দিকে। বাংলাদেশ এখন যে পর্যায়ে রয়েছে, তাতে এ সিরিজগুলো ভবিষ্যতের অস্ত্রগুলো তৈরি রাখার জন্য সবচেয়ে ভালো সুযোগ। সামনে আরো ম্যাচ আছে, নতুন যারা এসেছেন, আর পুরনোদের মধ্যে যারা পুনরায় সুযোগ পেয়েছেন, সবার জন্যই বড় সুযোগ যাদের বদলে দলে এসেছেন পারফর্ম করে তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করার। তাহলে, যে প্রতিযোগিতাটার জন্ম নিবে সেটির সুফল দল বেশ ভালো ভাবেই ভোগ করতে পারবে। প্রশ্ন হচ্ছে, এ সহজ বিষয়টি লিটনরা অনুধাবন করবেন নাকি বোলারকে নিজের উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসবেন?