ডিপ্রেশন বা হতাশা সবারই থাকে। কেউ সিচুয়েশনের কারণে ডিপ্রেশনে পড়ে যায় আবার কেউ ডিপ্রেশন ডেকে আনে। ব্যাপারটা খাল কেটে কুমির আনার মতো বা সেধে সেধে কষ্ট পাবার মতো।
আমরা বেশিরভাগ সময় ডিপ্রেশনে কেনো ভুগি জানেন? অন্যের সুখ সহ্য করতে না পেরে অথবা নিজের দূর্বল দিক না মানতে পেরে। এরপর আরেকটা বিষয় থাকে কম্পেয়ারিজন। অন্যের চাপ্টার একের সাথে নিজের চাপ্টার বিশ মেলানো। যে ডিপ্রেশন আপনার উপর চেপে বসে, সেগুলো যত সফলভাবে মোকাবেল করতে পারবেন, আপনি তত সফল। আপনার উপরে চেপে বসা সমস্যা একদিন দূর হবেই, আর সেটার জন্য কাজ করতে হবে আপনাকেই। অন্যদিকে কিছু কিছু সমস্যা আমরা তৈরি করি একেবারে দাওয়াত দিয়ে।
তার অমন হয়েছে বলে আপনারও অমন হবে তা নয়। আপনার পটেনশিয়ালিটি হয়তো অন্য জায়গায় আছে। সেটাতে ফোকাস দিন। ওর মত নয় কেন, তার মতো না কেন এসব ভাবনা নিজের মানসিক অশান্তির বড় কারণ। তার যেটা সেটা তার অর্জন। ভেবে দেখুন, আপনার এমন অনেক অর্জন রয়েছে যার কিছুই আবার অই মানুষটার নেই। ব্যাপারগুলো এমনই।
আপনার সন্তান এ+ পায়নি কিন্তু বন্ধুর সন্তান এ+ পেয়েছে। ব্যাপারটা আপনার মোটেও সহ্য হচ্ছে না। কারণ আপনি মনে করেন এটা পাবার কথা ছিল আপনার সন্তানের। তারচেয়েও অনেক গুণ ভালো ছাত্র আপনার সন্তান। এখন এটা নিয়ে আপনি ডিপ্রেসড বা হতাশ।
কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে আপনি কি এই সিচুয়েশন মেনে না নিয়ে অন্যকিছু করতে পারবেন? আপনি যদি মেনে না নেন তখন ডিপ্রেশন তো আসবেই। সহজভাবে মেনে নিয়ে যদি এটা ভাবেন- আমি জানি আমার সন্তানের যোগ্যতা আছে। এ+ পায়নি, তাতে কি? লাইফে নিজেকে প্রমাণ করার আরো অনেক সুযোগ আসবে। তাহলেই কিন্তু ডিপ্রেশন আর আসে না। মনে রাখা দরকার, আপনি যোগ্য হলে অবশ্যই নিজেকে বারবার প্রমাণ করতে পারবেন, সুযোগ আসবে। হয়তো অন্য কোথাও, অন্যভাবে। ওটা আপনার ছিলোনা। যেটা আপনার আছে ওটা নিয়েই ভালো থাকুন না। শুধু শুধু পরশ্রীকাতর হয়ে ডিপ্রেসড হওয়ার মানে হয়? এটা বোকামি হবে। নিজেকে ঠকানো বৈ আর কিছুই না।
পাশাপাশি আমাদের আরো মাথায় রাখতে হবে যে কাজটি আমরা করছি সে কাজের জবাবদিহিতা আমাদের কাছে রয়েছে কিনা। সেক্ষেত্রে বলা যেতে পারে সততা একটা বড় বিষয়। যদি আত্মশুদ্ধি না থাকে তবে হয়তো সাময়িক কিছু আনন্দ আমরা ভোগ করবো বা সুবিধা অয়াবো কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে কিন্তু সে আনন্দ বা সেল্ফ স্যাটিসফেকশান ধরে রাখতে পারবোনা। এরপর দেখা যাবে আমরা লং টার্ম ডিপ্রেশনে ভুগব। তাই ব্যাক্তিগত, সামাজিক বা পেশাগত জীবনে যথাসম্ভব সৎ থাকার চেষ্টা করা জরুরি। হয়তো আপনার খারাপ কাজের সাক্ষী কেউ না, কিন্তু নিজেতো সাক্ষী থেকেছেন।
একটা সময় নিজের বিবেকই আপনার বিরুদ্ধে তখন সাক্ষী দেখবেন। তাই সত্যবাদী হোন, সৎ থাকুন। সত্য কথা যতো বড় গলা বলা যায়, মিথ্যে কথা তত উঁচু গলায় বলতে পারলেও যৌক্তিকতা কিন্তু থাকেনা। আপনি যৌক্তিক কিনা সেটা দেখুন। নিজের কাজের জবাব নিজের কাছে আছে কিনা সেটা ভাবুন। তখন সবাই আপনার বিপক্ষে গেলেও একটা শান্তি খুঁজে পাবেন। শান্তির নিদ্রা যাপন করতে পারবেন।
জীবন অনেক সুন্দর কিন্তু ক্ষুদ্র। ডিপ্রেশনে ভুগে জীবন উপভোগ করতে না পারলে সেটা কিন্তু অন্যায় হয়ে যায়। তার দায়টাও কিন্তু আপনারই। নিজেকে ভালো রাখার দায়িত্ব নিজেই নিন। মানতে শিখুন, হজম করতে শিখুন, এড়িয়ে চলতে শিখুন। বাগানের দশটা পাখির দিকে না তাকিয়ে নিজের হাতে থাকা পাখিটির যত্ন নিন। অন্যের যা কিছু তা অন্যেরই।
পরশ্রীকাতর হয়ে আত্মাকে কষ্ট দেয়ার মানেই হয়না বরং নিজের যা আছে তা নিয়েই সুখে থাকুন। জীবন তো একটাই। এটাকে সাজাবার কাজটাতো আমাদেরই হাতে তুলে নিতে হবে।
পৃথিবীতে অনেকগুলো রাস্তা আপনার সামনে আছে। কোনটা আপনার পথ হবে, সেটা না হয় নিজেই বা কাছের মানুষদের সহায়তায় ঠিক করে নিন।