বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে সিরিজের শুরু থেকেই সাকিব-তামিমের না থাকা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হচ্ছে। এই দুজনের অনুপস্থিতির কারণে বাংলাদেশের শক্তি কতটা খর্ব হয়েছে, এবং তাদের ছাড়া দল কেমন করে তা দেখার তাগিদ প্রায় সবার মধ্যেই দেখছি।
আমি বরং বিষয়টিকে একটু ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে চাই। আমার মতে, তামিম-সাকিব ফিট থাকলেও তাদের এই সিরিজে না খেলিয়ে বিশ্রাম দেয়াটাই ছিল বেহতার। জিম্বাবুয়ের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই কথাটা বলছি। আমি এর আগেও এক লেখায় বলেছিলাম বাংলাদেশের উচিত শ্রীলঙ্কা থেকে শিক্ষা নেয়া। এখানে আমি চারজন খেলোয়াড়কে নিয়ে আলোচনা করব। যারা বিভিন্ন কারণে আলোচনায় থাকার দাবি রাখেন।
বাংলাদেশের পঞ্চপাণ্ডবের তিনজন সাকিব-তামিম-মুশফিকের বয়স প্রায় সমান। মাহমুদুল্লাহ এবং মাশরাফি কিছুটা সিনিয়র। আভাসকে যদি আমলে নেই ‘১৯ এর বিশ্বকাপের পর মাশরাফিকে দেখতে পাবার সম্ভাবনা খুবই কম। কথাটা তিক্ত হলেও সত্য। তাই প্রথমেই বিকল্প তৈরি রাখতে হবে মাশরাফির।
সাইফুদ্দিন
মাশরাফির সবচেয়ে ভালো বিকল্প হতে পারেন সাইফুদ্দিন। না, বোলার হিসাবে তিনি মাশরাফির সমকক্ষ হবেন এ আশা আমি করি না। কিন্তু আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে, মাশরাফি শুধু বল হাতেই না; শেষ দিকে স্লগ করেও অনেক সময় ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দিয়েছেন। বোলার হিসাবে মাশরাফির সমমানের কেউ যুগেও আসবে কি না সন্দেহ। তাই, সাইফুদ্দিন এখন যা পারেন, তা ঘষেমেজে যদি তাকে আরো একটু পরিণত করা যায় কাজটা অন্তত তিনি চালিয়ে নিতে পারবেন। ব্যাট হাতে ঝড় তোলার ক্ষমতাটাও তার দিকে বাড়তি নজর রাখার দাবি রাখে। জিম্বাবুয়ে সিরিজটায় তাকে নিয়মিত খেলিয়ে দেখা উচিত বলেই আমার মনে হয়।
নাজমুল হাসান শান্ত
হ্যাঁ, এশিয়া কাপে সুযোগ পেয়েও তিনি সেটা কাজে লাগাতে চূড়ান্ত ব্যার্থ হয়েছেন। কিন্তু, মাত্র একটি সিরিজ বিবেচনাতেই কাউকে ছুড়ে ফেলা হবে চূড়ান্ত অবিবেচকের কাজ। তামিম এর জায়গা নেয়ার জন্য শান্ত একটা ভালো বিকল্প হতে পারে। এখন প্রয়োজন আমাদের ধৈর্য্য ধরার। কারণ, শুরুর দিকে অনেক খেলোয়াড়ই ব্যর্থ হয়ে পরে আলো ছড়িয়েছেন। এশিয়া কাপের শেষ ম্যাচে মিরাজ ফাটকা কাজে লাগলেও আশা করব এই সিরিজে শান্তর ওপরই ভরসা করবেন ম্যানেজমেন্ট। তার স্কিল রয়েছে; প্রয়োজন শুধু সময়ের। সেটি যদি দেয়া যায় শান্তর কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করা সম্ভব।
মেহেদী মিরাজ
মিরাজ ইতোমধ্যেই দলে নিজের জায়গা পাঁকা করে নিয়েছেন। আমার কাছে মনে হয় সাকিবের সবচেয়ে যোগ্য বিকল্প হতে পারেন এই অলরাউন্ডার। বল হাতে ক্রমশ তার উন্নতি খোলা চোখেই দেখা যাচ্ছে। ব্যাট হাতেও যে তিনি ভরসা করার মত হতে পারেন সেটি এশিয়া কাপের ফাইনালেই দেখা গিয়েছে। এখন, বোলিং এর পাশাপাশি মিরাজ যদি ব্যাটিং এও বাড়তি মনোযোগ দেন, তাহলে, আরো একটি বিশ্বমানের অলরাউন্ডার পাবে বাংলাদেশ। সাকিব না থাকলে তখন তো দলকে টানতে পারবেনই, সাকিব থাকা অবস্থায় দু’জন হতে পারেন দারুণ দুটি অস্ত্র।
মোসাদ্দেক সৈকত
যিনি সব সময়ই পর্দার আড়ালে থাকেন সে মাহমুদুল্লাহর বিকল্প কে হতে পারেন সেটি নিয়ে আমার মনে দ্বিধা রয়েছে। সবচেয়ে কাছাকাছি যে নামটি মনে আসে সেটি হচ্ছে মোসাদ্দেক। হ্যা, তিনি বহুবার সুযোগ পাওয়ার পরেও নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে পারেননি। আমার কাছে মনে হয় এর অন্যতম মূল কারণ, ব্যাটিং অর্ডার। সৈকত স্লগার নন। কিন্তু, জাতীয় দলে তিনি যে পজিশনে ব্যাট করেন সেখানে স্লগই দাবি করা হয়। এটি করতে গিয়েই গড়বড়টা লেগেছে। তিনি যদি আরো একটু ওপরে ব্যাট করার সুযোগ পান, আমার মনে নিজের মত খেলে দলকে ভালো কিছু দেয়ার সামর্থ্য তিনি রাখেন।
মুশফিকের বিকল্প হিসাবে লিটন ইতোমধ্যেই অনেকটা প্রতিষ্ঠিত। তাই তার সম্পর্কে কিছু বললাম না। জীবনটাই এমন, বর্তমান উপভোগ করার সাথে সাথে ভাবতে হয় ভবিষ্যত নিয়েও। শুধুই বর্তমান নিয়ে পরে থাকার পরিণতি হয় সর্বনাশা।
আমি মনে করি এই সিরিজ থেকেই নিয়ম করে সিনিয়রদের দু’ একজনকে সমমানের দলগুলোর সাথে বিশ্রাম দিয়ে নতুন খেলোয়াড়দের তৈরি করে নিতে হবে আগামীর জন্য। নতুবা, এদের বিদায়ে আচমকাই আঁধার দেখা অস্বাভাবিক কিছু হবে না। শ্রীলঙ্কা এর বড় প্রমাণ। সাকিব-তামিমের ইনজুরি সুযোগ করে দিয়েছে নতুনদের নিজেদের জাত চেনানোর। আশা করি সুযোগটি তারা পূর্ণভাবেই কাজে লাগাবেন।