লিভারপুলের হয়ে প্রথম সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন মোরিনহো যেমন স্ট্যাম্পফোর্ড ব্রিজে গিয়ে দাবি করেছিলেন তিনি ‘স্পেশাল ওয়ান’ ক্লপও তেমন কিছু করতে চান কি না? জওয়াবে সহাস্যে এ জার্মান জানিয়েছিলেন তিনি স্পেশাল নন, বরং নরমাল ওয়ান হয়েই থাকতে চান। অ্যানফিল্ডে আসার পর ক্লপের শুরুর দিককার সিদ্ধান্তগুলো দেখে তাকে গ্যাম্বলার মনে হলেও এখন বলতেই হচ্ছে জার্গেন নরমাল বা গ্যাম্বলার নন ‘জিনিয়াস ওয়ান’।
ইতিহাস ঐতিহ্য বিবেচনায় লিভারপুল ইউরোপের কুলীন ক্লাবগুলোর একটি। কিন্তু বেনিতেজ থেকে শুরু করে রজার্স; প্রত্যেকের ব্যার্থতায় কৌলিন্যই শুধু না, লিভারপুল এক রকম হারিয়েই যেতে বসেছিল। তখন, ক্লাব কর্তারা ত্রাতা হিসাবে বেছে নিলেন ডর্টমুন্ডের হয়ে মেটালিক সুরের মুর্ছনা তোলা ক্লপকে। এখনো হয়ত, মেজর কথিত কোনো শিরোপা জিতেননি, তবে; যে পথে এগুচ্ছেন তাতে এটি শুধু মাত্তর সময়ের ব্যাপার বলেই মনে হচ্ছে। এ মৌসুমে ইংলিশ লিগ শিরোপা জয়ের অন্যতম দাবিদারও রেডসরা।
অ্যানফিল্ডে ক্লপের প্রাথমিক ট্রান্সফার পলিসি এক ধরণের গ্যাম্বলিং বলেই মনে হচ্ছিল শুরুতে। বিশেষ করে প্রিমিয়ার লিগে ফ্লপ প্রমাণিত সালাহকে যখন বেশ বড় অংকের বিনিময়ে দলভুক্ত করলেন। সাথে আনলেন, না ভালো না খারাপ ধাঁচের মানেকে। এখন দেখা যাচ্ছে মানে-ফিরমিনহো-সালাহ ত্রয়ী ইংল্যান্ড এরই শুধু না, ইউরোপেরই অন্যতম সেরা আক্রমন ত্রয়ী। যার ওপর ভর করে বহু বছর পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল খেলেছে লিভারপুল। সালাহকে মনে করা হচ্ছিল ব্যালন জয়েরই অন্যতম দাবিদার। রিয়ালের বিপক্ষে ইনজুরি নিয়ে মাঠ না ছাড়লে কে জানে, মাদ্রিদ না হয়তো অ্যানফিল্ডেই আসত শিরোপাটা।
লিগের মধ্য পথেই কৌতিনহো বার্সার পথ ধরলে লিভারপুল বেপথে চালিত হবে যারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন তাদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ক্লপের লিভারপুল বাজিমাত করেই চলছে। ক্যারিয়ারের শেষ প্রান্তে থাকা মিলনার এবং সদ্য শুরু করা আলেক্সজান্ডার-আর্নোল্ডদের মধ্যে অসাধারণ সমন্বয় ঘটিয়ে দেখিয়েছেন লিভারপুল কোনো একক তারকার ওপর নির্ভরশীল দল নয়। অসাধারণ ভাবে ব্যবহার করছেন স্টারিজকেও।
তবু, সাফল্যের পথে বাঁধা হয়ে দাড়িয়ে ছিল রক্ষণ। সেটির সমাধা ক্লপ কিভাবে করেন সেদিকে নজর ছিল বিশ্লেষকদের। তিনি যা করেছেন সেটি কেউ কল্পনাও করেনি, বরং জন্ম দিয়েছিল নানা সমালোচনার। বছর ঘুরতে দেখা যাচ্ছে, সেটি ছিল একটি মাস্টার স্ট্রোক। ভ্যান ডাইক এর মতন স্বল্প পরিচিত একজন ডিফেন্ডারের জন্য রেকর্ড পরিমাণ ব্যায় নিয়ে সমালোচনাটা স্বাভাবিকই ছিল। কিন্তু ক্লপ দেখিয়ে দিয়েছেন ভ্যান ডাইককে চিনতে ভুল করেছিল সবাই। যার ফলে এই ডাচের নেতৃত্বে আক্রমণ এবং মধ্যমাঠের মতন রক্ষণও বেশ জমাট হয়ে উঠেছে রেডসদের। সাথে যোগ হয়েছেন ব্রাজিলিয়ান বেকার।
ক্লপের সিদ্ধান্তগুলো প্রাথমিকাবস্থায় প্রশ্নবিদ্ধ হলেও পরে দেখা যাচ্ছে যে প্রত্যেকটা সিদ্ধান্তই তিনি নিয়েছেন হিসাব কষে। তারকা না, বরং যে যেখানে ফিট; সমালোচকদের সমালোচনা অগ্রাহ্য করে তাকেই দলে ভিড়িয়েছেন। এবং, এতে রেডসরা এখন যে রুপ ধারণ করেছে তাতে এ মৌসুমেই যদি বহু কাঙ্ক্ষিত লিগ শিরোপা ধরা দেয় বিস্ময়ের কিছু থাকবে না। মেটালিক সুরের মুর্ছনারয় সমর্থকদের মুগ্ধ করার পাশাপাশি প্রতিপক্ষকে ধ্বসিয়ে দেবার কাজটা যে তার শিষ্যরা দারুণভাবেই রপ্ত করেছেন। শুরুটা যেমন হয়েছে, শেষটাও যদি তেমনি ভাবে করতে পারেন, বলতেই হবে; নরমাল না, জার্গেন একজন জিনিয়াস ওয়ান।