ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘ ইউনিটভুক্ত সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগে ফাঁস হওয়া প্রশ্নে নেয়া প্রথম বর্ষ স্নাতক শ্রেণীর ভর্তি পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আজবেলা ১১ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে একই স্থানে মানববন্ধনে মিলিত হয়। এ সময় তারা পরীক্ষা বাতিলসহ চারটি দাবিতে অনশনরত আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আখতার হোসেনের সঙ্গে সংহতি জানায়।
মানববন্ধনে উপাচার্যকে উদ্দেশ করে এক সাধারণ শিক্ষার্থী বলেন, আগে নিজের ঘর সামলান, তারপর দেশের বাইরে গিয়ে নিজের পাবলিসিটি বাড়ান। যে বিশ্ববিদ্যালয় জাতিকে নেতৃত্ব দেয়, সেটি আজকে হাসির পাত্র। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও মেরুদণ্ড নাই, কর্তৃপক্ষেরও কোনও মেরুদণ্ড নাই।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার ঘ ইউনিটের পরীক্ষার পূর্বেই প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ উঠলে বিশ্বিবদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি একজন ভর্তিচ্ছুর মোবাইলে সকাল ৯টা ১৭ মিনিটে প্রশ্ন পাওয়ার প্রমাণ পায়। প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণ পাওয়া সত্ত্বেও পরীক্ষা বাতিল না করে মঙ্গলবার ফল প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ। এদিন দুপুর ১২ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যে আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আখতার হোসেন।
গত মঙ্গলবার দুপুর ১টা থেকে অনশন শুরু করেছআখতার। দীর্ঘ ৪৯ ঘন্টা অনশনের পর অসুস্থ হয়ে পড়লে আজ দুপুরে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়।
গত দুইদিনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কেউ তার সাথে যোগাযোগ করেনি। আজ দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয় শাখা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইনকে সাথে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রাব্বানি তার অনশন ভাঙাতে এসে তিনি আখতারের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন এবং তাকে অনশন ভাঙতে অনুরোধ করেন। কিন্তু আখতার কোনক্রমেই অনশন ভাঙতে চাচ্ছিলেন না।
শিক্ষার্থীদের সাথে মানববন্ধনে সংহতি জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি মানববন্ধনে আসেন এবং ঘ ইউনিটের পরীক্ষা বাতিলসহ চারটি দাবিতে অনশনরত আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আখতার হোসেনের সঙ্গেও কথা বলেন।
অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে সেটার প্রতিবাদে একটা ছেলে বসে আছে আমরা কেউ তাকে দেখতে আসছি না। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন কতটা অমানুষ-অসংবেদনশীল, সেটা ভেবে অনশনরত আখতার কাঁদছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই দায়িত্ব অনুধাবন করছে না, এর থেকে দুঃখজনক আর কী হতে পারে!
এসময় তিনি আরো বলেন, পৃথিবীতে এমন কোনো বিশ্ববিদ্যালয় আছে যে পরোক্ষভাবে হলেও সবাইকে জানান দিয়ে দিবে এখানে দুর্নীতিবাজ, যারা কারচুপি করে, প্রশ্নফাঁসের ব্যবসা করে তাদের মাধ্যমে ভর্তি হওয়া জায়েজ। এটা দেওয়ার জন্য কি আমরা প্রস্তুত আছি অনশনরত আখতার এই প্রশ্নটি সবার কাছে তুলে ধরেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি তার কথায় কর্ণপাত না করে তাহলে আমাদের ধরে নিতে হবে তারা প্রশ্নফাঁসের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
মানববন্ধন থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা চারটি দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো :
১. ‘ঘ’ ইউনিটের ফলাফল বাতিল করতে হবে।
২. পরীক্ষা পুনরায় নিতে হবে।
৩. প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে
৪. বিগত বছরে যারা জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তি হয়েছে তাদেরকে চিহ্নিত করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করতে হবে।
এদিকে ঘ ইউনিটের পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতির সমাধানে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ কিছু দাবি তুলে ধরে। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তারা পরীক্ষা বাতিল অথবা উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিশেষ পরীক্ষা নিয়ে সুষ্ঠু প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে আসা, ডিজিটাল জালিয়াতি করে ইতোপূর্বে ভর্তী হওয়া শিক্ষার্থীদের ছাত্রত্ব বাতিল ও সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদানসহ বিভিন্ন দাবি জানায়।