প্রথমে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দেওয়ার প্রশ্নই নেই। অবশেষে রাজনৈতিক দাবা খেলায় পিছু হঠতে হল এম জে আকবরকে। পরিস্থিতির জোরদার চাপে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নিকট বুধবার দুপুরে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন এম জে আকবর। সামাজিক মাধ্যমেও দ্রুত ভাইরাল হয়ে গিয়েছে পদত্যাগপত্রের প্রতিলিপি।
বিজেপি সরকারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবরের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ করেন মহিলা সাংবাদিক প্রিয়া রামানি। ১৯৯৪ সালে তৎকালীন সাংবাদিক এম জে আকবরের সাক্ষাৎকার নিতে গিয়েছিলেন প্রিয়া, তখন এক রেস্তোরাঁয় মদ্যপ আকবর তাঁর সঙ্গে অভব্য আচরণ করেন। প্রিয়া মুখ খোলার পর সামাজিক মাধ্যমে আকবরের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন অন্তত আরও বিশ জন মহিলা সাংবাদিক। নাইজেরিয়া থেকে দেশে ফিরে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রসঙ্গে আকবর বলেন, তার ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য সাজানো গল্প ফাঁদা হয়েছে। এমনকি, গত সোমবার প্রিয়া রামানির বিরুদ্ধে মানহানির ফৌজদারি মামলা দায়ের করেন তিনি। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৯ (মানহানি) ধারা এবং ৫০০ (মানহানির শাস্তি) ধারায় দিল্লির পাতিয়ালা কোর্টে মামলা দায়ের করা হয়। ৩০ জন মহিলা-সহ ৯৭ জন আইনজীবীর একটি দল নামিয়ে প্রিয়া রামানিকে দমিয়ে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন তিনি। প্রিয়াও জানিয়ে দেন, লড়াই করতে তিনি প্রস্তুত! প্রিয়ার পাশে দাঁড়ান আরও অনেক মহিলা সাংবাদিক।
আজ বুধবার এম জে আকবরের পদত্যাগ দাবি করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকে একটি পত্র প্রেরণ করেন ফাউন্ডেশন অফ মিডিয়া অ্যান্ড ব্রিহান মুম্বই ইউনিয়ন অফ জার্নালিস্ট। ওই মহিলা সাংবাদিক সংগঠন প্রিয়া রামানির বিরুদ্ধে আকবরের দায়ের করা মানহানি মামলা প্রত্যাহারের দাবিও জানায়। সংশ্লিষ্ট পত্রে লেখা হয়, “ক্ষমতাশালী মাত্রেই মানহানি মামলার মাধ্যমে কণ্ঠরোধ করে থাকে দূর্বল প্রতিপক্ষের। তেমনই এটাও মহিলাদের চুপ করিয়ে দেওয়ার একটি অপচেষ্টা।” প্রিয়া রামানির পক্ষ নিয়ে আকবরের বিরুদ্ধে যারা মুখ খুলেছেন, তারা সকলেই ‘দ্য এশিয়ান এজ’ পত্রিকায় কাজ করতেন। ২০ জন মহিলা সাংবাদিক যৌথ বিবৃতি মারফত জানান, “এই লড়াইয়ে প্রিয়া রামানি একা নন। বিচারপতির নিকট আমাদের অনুরোধ, গুরুত্ব সহকারে শোনা হোক আমাদের বক্তব্যও। আমাদের মধ্যে বহু মহিলা তার দ্বারা যৌন হেনস্থার শিকার হয়েছে, অনেকে তার সাক্ষী।”
পদত্যাগপত্রে আকবর লিখেছেন, “যেহেতু আমি ব্যক্তিগতভাবে আদালতে বিচার চেয়েছি, তাই বিচারের স্বার্থে আমার কর্মভার (মন্ত্রিত্ব) থেকে ইস্তফা দেওয়া সমীচীন মনে করছি। আমার বিরুদ্ধে যে-সমস্ত মিথ্যা অভিযোগ আনীত হয়েছে, তার বিরুদ্ধে আমি ব্যক্তিগতভাবে আইনি লড়াই জারি রাখতে চাই। এই কারণে আমি বিদেশ প্রতিমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিচ্ছি।”