বাসক আয়ুর্বেদশাস্ত্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ উদ্ভিদ। গুল্মজাতীয় এই উদ্ভিদ বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে। বিশেষকরে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের সাতক্ষীরা জেলায় এর সফল বাণিজ্যিক চাষ লক্ষ্য করা গেছে। বাসকের ছাল, পাতা এবং রস; সবই উপকারি।
বাসক গাছ লম্বায় ১ থেকে ১৫ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। কচি অবস্থায় গাছের গোড়া সবুজ হলেও পরিণত অবস্থায় তা হালকা-বেগুনিকে রূপান্তরিত হয়। পাতাগুলো ৫ থেকে ১২ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। বাসকের ফুল সাদ রঙের এবং থোকা ধরে ফোটে। এর ফলগুলো দেখতে ক্যাপসুলের মতো।
বাসক আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় সর্দি-কাশির ঔষধে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। বাসকের তাজা এবং বাসকের তাজা অথবা শুকনো পাতা ওষুধের কাজে লাগে। বাসকের পাতায় ‘ভাসিসিন’ নামক ক্ষারীয় পদার্থ এবং তেল থাকে। শ্বাসনালির লালাগ্রন্থি সক্রিয় করে বলে বাসক শ্লেষ্মানাশক হিসেবে প্রসিদ্ধ। বাসক পাতার নির্যাস, রস বা সিরাপ শ্লেষ্মা তরল করে নির্গমে সুবিধা করে দেয় বলে সর্দি, কাশি এবং শ্বাসনালির প্রদাহমূলক ব্যাধিতে বিশেষ উপকারি। তবে অধিক মাত্রায় সেবন করলে বমি হয়, অস্বস্তি লাগে।
বাসক পাতার রস ১-২ চামচ হাফ থেকে এক চামচ মধুসহ সেবন করলে শিশুর সর্দি-কাশির উপকার পাওয়া যায়। যদি বুকে কফ জমে থাকে এবং সে জন্য শ্বাসকষ্ট হয় বা কাশি হয়, তা হলে বাসক পাতার রস ১-২ চামচ এবং কন্টিকারী রস ১-২ চামচ, ১ চামচ মধুসহ সেবন করলে কফ সহজে বেরিয়ে আসে।
প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া থাকলে বাসকের ফুল বেঁটে ২-৩ চামচ ও মিছরি ১-২ চামচ শরবত করে সেবন করলে এ রোগে উপকার পাওয়া যায়। জ্বর হলে বা অল্প জ্বর থাকলে বাসকের মূল ৫-১০ গ্রাম ধুয়ে থেঁতো করে ১০০ মিলিলিটার পানিতে ফোটাতে হবে। ২৫ মিলিলিটার থাকতে নামিয়ে তা ছেঁকে নিয়ে দিনে ২ বার করে সেবন করলে জ্বর এবং কাশি দুই-ই চলে যায়। বাসক পাতা বা ফুলের রস ১-২ চামচ মধু বা চিনি ১ চামচসহ প্রতিদিন সেবন করলে জন্ডিসে উপকার পাওয়া যায়। পাইরিয়া বা দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়লে বাসক পাতা ২০টি থেঁতো করে ২ কাপ পানিতে সিদ্ধ করে ১ কাপ থাকতে নামিয়ে হালকা গরম অবস্থায় কুলকুচি করলে এ রোগে উপকার পাওয়া যায়।