দুর্লভ রাঙা মানিকজোড় বা সোনাজঙ্ঘা

দুর্লভ রাঙা মানিকজোড় বা সোনাজঙ্ঘা

অসংখ্য পাখির অভয়ারণ্য আমাদের এই বাংলাদেশ। এখানে সুপরিচিত পাখির পাশাপাশি রয়েছে অসংখ্য দুর্লভ পাখি। এরকমই একটি পাখি ‘রাঙা মানিকজোড়’। এক সময় বাংলাদেশে এই পাখির আবাসস্থল হলেও এখন শীত মৌসুমে আমাদের দেশে পরিযায়ী হিসেবে উড়ে আসে। জবানের পাঠকদের জন্য এই পাখির পরিচিতি তুলে ধরছেন মেজবাহ্ মিশু …

রাঙা মানিকজোড় লম্বা পায়ের বড় আকারের  হয়ে থাকে। মানিকজোড় জাতীয় পাখিদের মধ্যে এরাই সবচেয়ে বেশি সুন্দর। এদেরকে রঙ্গিলা বক বা সোনাজঙ্ঘা নামেও পরিচিত। এদের ইংরেজি নাম  Painted Stork. এবং বৈজ্ঞানিক নাম: Mycteria leucocephala.

শীত মৌসুমে আমাদের দেশে পরিযায়ী হিসেবে এদের দেখা যায় । বিশেষ করে নদীর মোহনা কাদাযুক্ত জায়গা, নদীর চর, জলাবদ্ধ জমিতে এরা ঝাঁক বেধে ঘুরে বেড়ায় । রাঙা মানিকজোড় বেশ বড়সড় সাদা ও কমলা ও হলুদ ঠোটের রঙের মিশ্রণের জলচর পাখি। স্ত্রী ও পুরুষ মানিকজোড় দেখতে একই রকম। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখি মলিন সাদা। সচরাচর জোড়ায় কিংবা ছোট দলে থাকে। অগভীর পানিতে হেঁটে ঠোঁট খুলে কাদায় ঢুকিয়ে এরা খাবার খুঁজে বেড়ায়। ঠোঁটে মাছ বা অন্যান্য খাবারের অস্তিত্ব টের পেলেই এরা সাথে সাথে ঠোঁট বন্ধ করে ফেলে। খাদ্যতালিকায় রয়েছে শামুক, মাছ, ব্যাঙ, চিংড়ি, কাঁকড়া, জলজ পোকামাকড়, সরীসৃপ।

জুলাই থেকে অক্টোবর মাস এদের প্রজনন ঋতু। উঁচু গাছে বা পানির নিকটবর্তী গাছে বিশাল বাসা করে। কাঠি-কুঠি, শুকনো, সরু ডালপালা সাজিয়ে মাচার মত বাসা বানায়। পুরুষ মানিকজোড় বাসার বেশিরভাগ উপকরণ জোগাড় করে, স্ত্রী মানিকজোড় বাসা বানায়। বাসার মাঝখানের নিচু জায়গায় জলজ উদ্ভিদের পাতা, কচুরিপানার শুকনো শিকড়, শুকনো জলজ শ্যাওলা ইত্যাদি দিয়ে গদির মত বানায়। এক গাছে বা পাশাপাশি একাধিক গাছে অনেকগুলো পাখি মিলে কলোনি করে বাসা বানায় ।

শীতকালে এদের দেখা যায় আমাদের দেশের বিভিন্ন নদীর চরে বা জলাবদ্ধ জমিতে, বিশেষ করে রাজশাহীর পদ্মার চরে, চাপাইনবাবগঞ্জ এ কিছু বিলে এদের দেখা যায় ।

বিপন্ন এই রাঙা মানিকজোড় পাখি আমাদের পরিবেশে বাস্তুসংস্থান অনেক অবদান রাখছে, তাই এদের অস্তিত্ব রক্ষায় আমাদের সকলের সচেতন হওয়া দরকার । আসুন আমরা সকলে বিলুপ্ত পাখি সংরক্ষণে সচেতন হই এবং পাখি শিকার বন্ধ করি।