বিকল্প নোবেল সাহিত্য পুরস্কার পেলেন মারাওয়াইস কন্দে

বিকল্প নোবেল সাহিত্য পুরস্কার পেলেন মারাওয়াইস কন্দে

যৌন কেলেঙ্কারির কলঙ্ক লাগায় এবার সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার স্থগিত করা হয়। তবে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের বিকল্প হিসেবে ঘোষণা করা হল ‘নিউ একাডেমি পুরস্কার’। ১২ অক্টোবর এই বিকল্প নোবেল পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হয়। পুরস্কারটি পেয়েছেন গোয়াডুলেপিয়ান ঔপন্যাসিক মারওয়াইস কন্দে।

স্টকহোমে অনুষ্ঠানে একটি ভিডিও বার্তায় পুরস্কার পাওয়ার অনুভূতি ব্যাক্ত করেন কন্দে। তিনি বলেন “আমি খুশি এবং গর্বিত। তবে দয়া করে এই পুরস্কারটি আমার পরিবার, বন্ধু এবং সবার উপরে গোয়াডেলুপের মানুষের সাথে ভাগাভাগি করার সুযোগ দিন। আমাকে এই পুরস্কারটি স্পর্শ করতে দেখলে শিহরিত হবে তারা।”  তিনি আরো বলেন “আমাদের দেশটির নাম শুধু  ঘুর্ণিঝড় আর ভূমিকম্পেই শোনা যায়। কিন্তু এখন আমাদের এই দেশের নাম অন্যকিছুর জন্যও শোনা যাবে। এতে আমরা দারুন খুশি।”

তিনি দেসিরাদা, সাগু এন্ড ক্রসিং, দ্যা ম্যাংগ্রোভ সহ প্রায় বিশটি উপন্যাসের লেখিকা। অ্যান প্যালসনের মতে, তিনি একজন “মহীয়ান গল্পকার” যার বয়ান “বিশ্বসাহিত্যের অংশ”।

প্যালসন বলেন, “তিনি ঔপনেবেশিক শাসনের ধ্বংসলীলা এবং ঔপনেবেশিক পরবর্তী বিশৃঙ্খলার কথা যথাযথ এবং অপূর্বভাবে তার ভাষায় তুলে ধরেন। তার গল্পের জীবনগুলো খুব সুন্দরভাবে প্রকাশিত হয় এবং শ্রেণি-বর্ণ-লিঙ্গের ধরণের নতুন মাত্রা পায়।”

স্টকহোম লাইব্রেরিতে সুইডিশ একাডেমির এক জাঁকজমক অনুষ্ঠানে এই পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। এই পুরস্কারটির বিজয়ীকে মূলত তিন ধাপে বিবেচনা করা হয়। এটা নোবেল জুরির মত ছিল না। সুইডিশ লাইব্রিয়ানদের মনোনীত লেখক, সাধারণ ভোট এবং চূড়ান্ত জুরি বোর্ড এই পুরস্কার ঘোষণা করে।” নোবলে পুরস্কার স্থগিত হওয়ার কারণে সুইডেনের ১০০ জন বিশিষ্ট শিল্প-সাহিত্যপ্রাণ ব্যক্তিত্ব মিলে এই পুরস্কারের আয়োজন করেন।

এই পুরস্কারের জন্য চূড়ান্ত মনোনয়ন পান চারজন। তবে চূড়ান্ত ভাবে তিনজন ফাইনাল লিষ্টে থেকে যায়, কারণ- জাপানিজ লেখক হারুকি মুরাকামি তার নাম চূড়ান্ত মনোনয়ন থেকে তুলে নেন। মুরাকামি জানিয়েছিলেন, তিনি গণমাধ্যমের অন্তরালেই তার সাহিত্য চর্চা করতে পছন্দ করেন। তবে মিডিয়া বলছে, এই বিকল্প নোবেল পেয়ে আসল নোবেল পাওয়ার সম্ভাবনা তিনি নষ্ট করতে চান নাই -তাই এমন সীধান্ত নিয়েছেন।

১০০ জনেরও অধিক সুইডিশ সংস্কৃতিকর্মীর অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণেই এবারের এই পুরস্কারের আয়োজন করা সম্ভব হয়েছে বলে জানা যায়। এ বছরের শুরুতেই এক কেলেঙ্কারির জন্য নোবেল স্থগিত হয়। মূলত একজন গুরুত্বপূর্ণ একাডেমি সদস্যের স্বামীর যৌন নিপীড়নের খবরই এখানে মূল কেলেঙ্কারি ছিলো। এই খবরে সুইডিশ একাডেমির সদস্যদের পদত্যাগের জোয়ার বয়ে যাচ্ছিল। মূলত জনগণের আস্থা হারানোর ভয়েই তারা পদত্যাগ করছিলেন। ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে তার শাস্তিও হয়।

সুইডিশ-গ্রিক সাংবাদিক এবং লেখক এলেক্সান্দ্রা প্যাস্ক্যালিডো। তিনি নতুন একাডেমি পুরস্কার প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করেন। সাম্প্রতিক কেলেঙ্কারির বিষয়ে তিনি বলেন “এই কেলেঙ্কারিতে আমি হত-বিহ্বল এবং হতাশ। অন্য একজনের দোষের সাজা সাহিত্য, বা লেখকেরা পাবে কেন? এই জন্যেই আমি আমার সহকর্মী, বন্ধু, সেসব চেনা লোক যারা এই খবরে ক্ষুদ্ধ ছিলো, যাদের কল্পনা শক্তি প্রবল, যারা ভাবে আমরা পারবো তাদের সঙ্গে নতুন ভাবে কাজ শুরু করি আমি”

তিনি আরো বলেন, একশ’রও  বেশি লাইব্রেরি প্রায় ৩৩০০০ সদস্যের কাছ থেকে পাবলিক ভোট নেয়া হয়। “এটা আশ্চর্যজনক ছিলো। এই রকম একটি ঘটনায় একতাবদ্ধভাবে কাজ করার একটি বিরল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। মানুষ যে সংস্কৃতি এবং সাহিত্যের প্রতি এখনো কতটা নিবেদিত তা এই ঘটনা থেকেই বোঝা যায়।”