ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ঢাবি’র দুই শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ

ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ঢাবি’র দুই শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল ও এফ রহমান হলের প্রথম বর্ষের দুই শিক্ষার্থীকে ফেইসবুক স্ট্যাটাস দেয়া ও প্রোগ্রাম না করার জের ধরে ‘গেস্টরুমে’ নিয়ে গিয়ে মারধরের অভিযোগ উঠেছে পৃথক দুই ছাত্রলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে।

মুহসীন হলে মারধরের শিকার ছাত্রের নাম হাসান আল মানজুর। সে ঢাবির হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। মারধরকারী একই হলের ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের শাহ ইবনে সোয়াদ। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের শাখার অনুসারী।

জানা যায়, গতকাল দুপুর দেড়টা নাগাদ সোয়াদ ছাত্রলীগের প্রোগ্রামের জন্য হাসানকে ফোন দিলে কারণবশত সে ফোন রিসিভ করতে পারেনি। এতে সে ক্ষিপ্ত হয়ে হাসানকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং ‘হল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার’ কথা বলে। হাসান এরপরও হলে অবস্থান করায় রাত দশটার দিকে হলের ‘গেস্টরুমে’ নিয়ে সোয়াদ তাকে পুনর্বার গালিগালাজ করে বেপরোয়াভাবে মারধর করে। সোয়াদ মারধরের কথা স্বীকার করে ভুল স্বীকার করে।

আক্ষেপ করে ভুক্তভোগী হাসান বলেন, “আমি এখানে পড়াশোনা করতে এসেছি। সামান্য ফোন রিসিভ করতে না পারবার দায়ে মার খেতে আসিনি। কোন অধিকার বলে আমার গা-এ হাত দেয় সে? আমি প্রশাসনের কাছে যথাযোগ্য বিচার চাই।”

এই বিষয়ে জানতে চাইলে মুহসীন হলের প্রাধ্যক্ষ নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, হাউজ টিউটরদের সমন্বয়ে তদন্তের জন্য তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ আইনুল ইসলাম, অন্য দুজন সদস্য হলেন ইমাউল হক সরকার ও এ কে এম ইফতেখারুল ইসলাম। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন সাপেক্ষে আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

এদিকে গতকাল রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ স্যার এফ রহমান হলের সাংবাদিকতা বিভাগেরই অন্য এক শিক্ষার্থী আফসার মুন্না মারধরের শিকার হন ছাত্রলীগের এক কর্মীর হাতে। মারধরকারী ছাত্রলীগ কর্মীর নাম রাকিবুল হাসান। সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এবং হল ছাত্রলীগের কর্মী। সে হলের ২১৫ নম্বর কক্ষে থাকে। সূত্রমতে, সে-ও ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হুসেইনের অনুসারী।

মারধরের শিকার এফ. রহমান হলের শিক্ষার্থী জানান, গতকাল সে ফেসবুকে গণরুম নিয়ে একটি সংবাদের লিংক শেয়ার দেয়। এতে রাগান্বিত হয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ রাকিব তাকে গেস্টরুমে আসতে বলেন। পরে সে গেস্টরুমে গেলে স্ট্যাটাস দেওয়ার কারণে গালিগালাজ করে এবং কাঠের লাঠি দিয়ে তার বুকে আঘাত করে।

মারধরকারী রাকিব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের সামনে মারধরের কথা প্রথমে অস্বীকার গেলেও পরে স্বীকার করে। সে সাংবাদিকদের বলে , “আফসার সিনিয়রদের সালাম না দেওয়ায় তাকে বকাঝকা করা হয়েছিল, মারধর করা হয়নি। আমি তাকে কাঠের টুকরো দিয়ে ধাক্কা দিকে পিছনে সরিয়ে দিয়েছি।”

এ বিষয়ে ঘটনার পরদিন এফ রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ সাইফুল ইসলাম জানান, আমি কিছুক্ষণ আগে ঘটনা সম্পর্কে অবগত হলাম। আমি হাউজ টিউটরদের সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করব । এরপর তারা আমাকে জানালে আমি ঘটনা বলতে পারব।

ঘটনার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, আমরা ঘটনার তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেও আমরা জানিয়েছি। আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। বিশ্ববিদ্যালয়ে কেউ কাউকে মারার অধিকার রাখে না।

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর গোলাম রাব্বানি ঘটনার ব্যাপারে বলেন, তাদের অভিযোগপত্র আমার হাতে এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুসারে ঘটনার বিচার করা হবে। ঘটনা যেহেতু হলে ঘটেছে তাই হল কর্তৃপক্ষের মাধ্যেম তদন্ত কমিটি করে আমরা তদন্ত কাজ চালাব।

প্রসঙ্গত, এই মারধরের ঘটনা নতুন নয়। গত ৬ই ফেব্রুয়ারি সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের এহসান রফিক নামক এক শিক্ষার্থী মারধরের শিকার হন সেই হলেরই ছাত্রলীগের সাত নেতা-কর্মীর হাতে। গত রমজানে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম সমন্বয় পরিষদের কর্মসূচিতে না যাওয়ায় এবং গেস্টরুমে দেরি করে উপস্থিত হওয়ায় মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে অন্তত ৩৫ জন ছাত্রকে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠে ছাত্রলীগ কর্মীদের বিরুদ্ধে। এছাড়া এই বছরের প্রথম দিকে ঢাবির বিজয় একাত্তর হলের শাহরিয়ার খান সাদ নামক প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে প্রোগ্রাম না করার দায়ে ভোর চারটায় ঘুম থেকে তুলে মারধর করে ছাত্রলীগের দুই কর্মী।